ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়ার বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে ‘স্ক্রিম অব ফ্রাস্টেশন’ বা ‘হতাশার চিৎকার’-এর পাশাপাশি এখন কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদেরও কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

এসব বক্তব্যে যেসব অসঙ্গতি ও অপতথ্য থাকে তা যেমন আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীর জন্য হতাশাজনক, বাংলাদেশের জনগণের প্রতিও অবমাননাকর।

বাংলাদেশের অনেক গণমাধ্যম এসব বক্তব্যের হুবহু অনুবাদ প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করছে। অথচ শেখ হাসিনার দাবি করা বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা এবং সঠিক তথ্য ও প্রমাণ তুলে ধরা তাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল।

গত ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় শেখ হাসিনার নীতি ছিল, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বারবার বলা। এটি করতে গিয়ে তিনি সত্য থেকে বিচ্যুত হতেন। লেখক হুমায়ুন আজাদও বলেছিলেন, ‘সত্য একবার বলতে হয়, সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়, মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়।’ দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা সেই তাঁর আগের নীতি এখনো অবলম্বন করছেন।

দেশে একটি রক্তস্নাত গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র ১৫ মাস হতে চলেছে, অথচ সেই গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তি, ছাত্রদের শক্তি, নাগরিক সমাজ ও কলমসৈনিকেরা নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছেন। যে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিল, তাদের অনেকের প্রত্যাশা ফিকে হয়ে গেছে। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর ও ন্যায্য দাবির প্রতি যেমন কর্ণপাত করা হয়নি, তেমনি উপেক্ষিত হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়।

গণ-অভ্যুত্থানের নারী কণ্ঠ যেমন অদৃশ্য হয়ে গেছে, তেমনি গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে একটি বিশেষ মতাদর্শকেই বিশেষ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩ আগস্টের শহীদ মিনার কিংবা ৫ আগস্টের সকালের যে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধে ছিল জাতি, তা আজ নানা দলে-উপদলে বিভক্ত। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বা স্পিরিট বিনির্মাণের পক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও চিন্তাচেতনার বিকাশে জাতি হিসেবে আমাদের কাজ এখনো খুবই অল্প।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা কি তাহলে পুলিশের ওপরই সব দায় চাপিয়ে দিলেন০৬ নভেম্বর ২০২৫

এ দুর্বলতার সুযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নানা মিথ্যার ফুলঝুরি নিয়ে আবার হাজির হচ্ছেন। দ্য ইনডিপেনডেন্ট, এএফপি, রয়টার্স–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার শেষ করে তিনি এবার দ্য উইক–এ একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকাটিতে ‘অতীতেও আমি অনির্বাচিত রাজনীতিবিদদের মোকাবিলা করেছি’ শিরোনামে শেখ হাসিনার নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর এই লেখা যেন ‘বাঘ আর বোকা কৃষকের গল্পের’ পুনরাবৃত্তি। তিনি ভাবছেন, দেশের মানুষ বোকা কৃষক।

শেখ হাসিনার নিবন্ধটিতে অপতথ্যের অনেক উপাদান আছে। কারণ, তিনি অনেক অসত্য তথ্যকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন তা সত্য মনে হয়; আর সত্যকে এমনভাবে গোপন করেছেন যেন তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের মানুষের ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের সংগ্রাম, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ জনের প্রাণহানি (জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন অনুযায়ী) এবং ২০ হাজার মানুষের আহত হওয়াকে অসম্মান ও অমর্যাদা করেছেন।

সম্প্রতি দিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য উইক ম্যাগাজিনে ‘অতীতেও আমি অনির্বাচিত রাজনীতিবিদদের মোকাবিলা করেছি’ শিরোনামে শেখ হাসিনার নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ খ হ স ন র ন বন ধ প রক শ র জন ত ত র জন

এছাড়াও পড়ুন:

দ্য উইকে শেখ হাসিনার নিবন্ধ, অস্বীকারের রাজনীতি ও অসত্য চর্চার নমুনা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়ার বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে ‘স্ক্রিম অব ফ্রাস্টেশন’ বা ‘হতাশার চিৎকার’-এর পাশাপাশি এখন কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদেরও কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

এসব বক্তব্যে যেসব অসঙ্গতি ও অপতথ্য থাকে তা যেমন আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীর জন্য হতাশাজনক, বাংলাদেশের জনগণের প্রতিও অবমাননাকর।

বাংলাদেশের অনেক গণমাধ্যম এসব বক্তব্যের হুবহু অনুবাদ প্রকাশ করে দায়িত্ব শেষ করছে। অথচ শেখ হাসিনার দাবি করা বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা এবং সঠিক তথ্য ও প্রমাণ তুলে ধরা তাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল।

গত ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় শেখ হাসিনার নীতি ছিল, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বারবার বলা। এটি করতে গিয়ে তিনি সত্য থেকে বিচ্যুত হতেন। লেখক হুমায়ুন আজাদও বলেছিলেন, ‘সত্য একবার বলতে হয়, সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়, মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়।’ দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা সেই তাঁর আগের নীতি এখনো অবলম্বন করছেন।

দেশে একটি রক্তস্নাত গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র ১৫ মাস হতে চলেছে, অথচ সেই গণ-অভ্যুত্থানের রাজনৈতিক শক্তি, ছাত্রদের শক্তি, নাগরিক সমাজ ও কলমসৈনিকেরা নানা দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছেন। যে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিল, তাদের অনেকের প্রত্যাশা ফিকে হয়ে গেছে। কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর ও ন্যায্য দাবির প্রতি যেমন কর্ণপাত করা হয়নি, তেমনি উপেক্ষিত হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়।

গণ-অভ্যুত্থানের নারী কণ্ঠ যেমন অদৃশ্য হয়ে গেছে, তেমনি গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে একটি বিশেষ মতাদর্শকেই বিশেষ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ফলে ৩ আগস্টের শহীদ মিনার কিংবা ৫ আগস্টের সকালের যে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধে ছিল জাতি, তা আজ নানা দলে-উপদলে বিভক্ত। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বা স্পিরিট বিনির্মাণের পক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও চিন্তাচেতনার বিকাশে জাতি হিসেবে আমাদের কাজ এখনো খুবই অল্প।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা কি তাহলে পুলিশের ওপরই সব দায় চাপিয়ে দিলেন০৬ নভেম্বর ২০২৫

এ দুর্বলতার সুযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নানা মিথ্যার ফুলঝুরি নিয়ে আবার হাজির হচ্ছেন। দ্য ইনডিপেনডেন্ট, এএফপি, রয়টার্স–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার শেষ করে তিনি এবার দ্য উইক–এ একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকাটিতে ‘অতীতেও আমি অনির্বাচিত রাজনীতিবিদদের মোকাবিলা করেছি’ শিরোনামে শেখ হাসিনার নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর এই লেখা যেন ‘বাঘ আর বোকা কৃষকের গল্পের’ পুনরাবৃত্তি। তিনি ভাবছেন, দেশের মানুষ বোকা কৃষক।

শেখ হাসিনার নিবন্ধটিতে অপতথ্যের অনেক উপাদান আছে। কারণ, তিনি অনেক অসত্য তথ্যকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন তা সত্য মনে হয়; আর সত্যকে এমনভাবে গোপন করেছেন যেন তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের মানুষের ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের সংগ্রাম, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ জনের প্রাণহানি (জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন অনুযায়ী) এবং ২০ হাজার মানুষের আহত হওয়াকে অসম্মান ও অমর্যাদা করেছেন।

সম্প্রতি দিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য উইক ম্যাগাজিনে ‘অতীতেও আমি অনির্বাচিত রাজনীতিবিদদের মোকাবিলা করেছি’ শিরোনামে শেখ হাসিনার নিবন্ধটি প্রকাশ পেয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ