১৫ বছর ধরে কড়িয়ে আনা শাক বিক্রি করেন বৃদ্ধা সাহেরা খাতুন
Published: 14th, November 2025 GMT
পথে–প্রান্তরে ঘুরে খুঁজে নেন নানা জাতের শাক। জঙ্গলে নিজ থেকে গজানো কলমি, বিলের শাপলা, কচু, কচুর লতি, হেলেঞ্চাসহ নানা জাতের শাক সংগ্রহ করেন দিনভর। বিকেল হলেই বাজারের একপাশে এসে বসে সবুজ শাকের পসরা সাজিয়ে বসেন। চাষ করা নয় বলে তরতাজা এই শাকের স্বাদ ও গুণাগুণ অনেক বেশি। তবু প্রতি আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি করেন। ১৫ বছর ধরে এভাবেই শাক বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন বৃদ্ধা সাহেরা খাতুন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজারে প্রতি বিকেলেই শাক নিয়ে বসেন সাহেরা। নিয়মিত ক্রেতাদের অনেকেই চেনেন তাঁকে। তরজাতা কীটনাশকমুক্ত বলে বিক্রিও হয় তাঁর আনা নানা পদের শাকসবজি। এলাকায় ‘শাক কুড়ানো বুড়ি’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
গত বুধবার সন্ধ্যায় মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় সাহেরা খাতুনের সঙ্গে। তাঁর সামনে তখন কলমি, লাউ, হেলেঞ্চাসহ নানা রকম শাক সাজানো। বিক্রির এক ফাঁকে অনেকটা সময় নিয়েই তিনি কথা বললেন। জানালেন নিজের জীবনসংগ্রামের গল্প। বৃদ্ধা সাহেরার বাড়ি উপজেলার পশ্চিম সোনাপাহাড় গ্রামে।
সাহেরা জানান, মা–বাবার আদর-আহ্লাদেই তিনি বড় হয়েছিলেন। এরপর তাঁর বিয়ে হয় ফটিকছড়ি উপজেলার হেয়াকো এলাকার বড়ইতলি রাস্তার মাথার গোল টিলা গ্রামে। স্বামী আবুল কালাম বারোয়ারি কাজ করতেন। তবে তাঁর সংসারে মনোযোগ ছিল না। দেখতে দেখতেই এক ছেলে আর এক মেয়ের জন্ম দেন তিনি। তবে এর মধ্যে স্বামী আরও তিন বিয়ে করেন। এসবের মধ্যেই অনটনে তাঁর সংসার চলতে থাকে। একপর্যায়ে স্বামীও মারা যান।
সাহেরার ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে কাজ নেওয়ায় কিছুদিন সাহেরা শাক বিক্রি বন্ধ রাখেন। তবে ছেলের বিয়ে ও সন্তান হওয়ার পর আবারও অনটন দেখা দেয়। এ কারণে শাক কুড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৫ বছর ধরে এভাবে চলছে তাঁর জীবন।সাহেরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর মিরসরাইয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকে তাঁর মূল জীবনসংগ্রাম শুরু। শুরুতে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে ডেকোরেটরে ধোয়া-পালার কাজ করতেন। এরপর নিজের কিছু জমানো টাকা ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে মেয়েকে বিয়ে দেন তিনি। অনটনের কারণে ছেলে–মেয়ে কাউকেই পড়াশোনা করাতে পারেননি।
সাহেরার ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে কাজ নেওয়ায় কিছুদিন সাহেরা শাক বিক্রি বন্ধ রাখেন। তবে ছেলের বিয়ে ও সন্তান হওয়ার পর আবারও অনটন দেখা দেয়। এ কারণে শাক কুড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৫ বছর ধরে এভাবে চলছে তাঁর জীবন।
জানতে চাইলে সাহেরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন। ‘ভোরে বের হয়ে আশপাশের গ্রাম থেকে কলমি, হেলেঞ্চা, থানকুনি, কচু, লতি—যে শাক পাই, তা কুড়িয়ে আনি। কোনো ধরনের সার না থাকায় অনেকেই এসব পছন্দ করেন। শাক বিক্রি থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এ টাকা দিয়ে নিজের খরচ মেটাই। বাকি টাকা নাতি-নাতনির জন্য কেক-বিস্কুট নিয়ে যাই। কিছু বাঁচলে তুলে দিই ছেলের হাতে।’
জোরারগঞ্জ বাজারে সাহেরা খাতুনের থেকে নিয়মিত শাক কেনেন গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন তো বাজারের সব শাকসবজি সার-কীটনাশকে ভরা। সাহেরা খাতুনের আনা শাকের দাম কম, তবে স্বাদ ভালো। এ কারণে তিনি শাক কেনেন।
জোরারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী বাহার আলী বলেন, ‘সাহেরা খাতুন এই এলাকারই মেয়ে। ১৫ বছর ধরে বাজারে শাক বিক্রি করেন। বয়স হলেও কাজপাগল এ নারী সব সময় হাসিখুশি থাকেন। সংসার-সন্তানের জন্য তাঁর নিবেদন সত্যিই অসাধারণ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ র রগঞ জ ব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষা ক্যাডারে রসায়ন বিভাগে প্রথম পঞ্চগড়ের আবু তালেব
৪৯তম বিশেষ বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ফলাফলে শিক্ষা ক্যাডারের রসায়ন বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান আবু তালেব।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে পিএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
অনার্সের ফল প্রকাশের আগেই বিসিএস ক্যাডার হলেন ঢাবির খাদিজা
পিরোজপুরে নব নিযুক্ত জেলা প্রশাসক আবু সাঈদ
আবু তালেব পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের খোচাবাড়ী এলাকার আহমেদনগর গ্রামের কৃষক সরদার আলী ও গৃহিণী রাবেয়া বেগমের সন্তান। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তালেব দ্বিতীয়।
তিনি ২০১৪ সালে পামুলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ২০১৬ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।
এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। এরপর কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর প্রতিযোগিতা পূর্ণ বিসিএসে অংশ নিয়ে দেখা পান কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আবু তালেব বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। এই ফল আমার বাবা-মা, শিক্ষক এবং পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব ছিল না। আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম শিক্ষক হব এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করব। সেই সঙ্গে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাই।”
তিনি বলেন, “এটা আমার চতুর্থ বিসিএস। এর আগে ৪৬তম বিসিএসে লিখিত দিয়েছিলাম, ৪৭তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। তাই এবার সফলতা পাওয়া আমার জন্য অনেক আনন্দের।”
ছেলের সাফল্যে আবেগাপ্লুত পিতা সরদার আলী বলেন, “আমি একজন কৃষক মানুষ। নিম্নবিত্ত পরিবারে নানা প্রতিকূলতার পরও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়েছিলাম। আজ ও দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, এটা আমাদের পরিবারের জন্য গর্বের। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ছেলে দেশের জন্য কাজ করবে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রার্থনা।”
ঢাকা/নাঈম/মেহেদী