জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব পড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো ঘোষণা করেন।

সরকারের সব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব দাবির সঙ্গে মিলবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ও রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করার অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি না। রাজনৈতিক দলগুলোকে এটা মনে রাখা জরুরি যে দলীয় স্বার্থের চেয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়াটাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্য দিয়ে তার অবসান হওয়া উচিত বলে আমরা আশা করি।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে আবারও দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট করেছেন যে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না থাকলে জাতি মহাবিপদের সম্মুখীন হবে। জাতীয় নিরাপত্তা, ভূরাজনীতির হিসাব, অর্থনীতির সচলতা ও বিনিয়োগের মতো জরুরি প্রশ্নগুলো জড়িত থাকায় নির্ধারিত সময়ে জাতীয় নির্বাচনের আর কোনো বিকল্প নেই।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিএনপি আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করায় এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজনের ঘোষণা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, গণদাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে। কিন্তু সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও গণভোট প্রশ্নে মতভিন্নতা শুরু হয়। পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপও ছড়ায়। এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতভিন্নতা কাটিয়ে উঠতে না পারায় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় পৌঁছাতে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়। দলগুলো তাতে ব্যর্থ হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল পার করছে। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি পথ দেখাতে পারে। যে রাজনৈতিক দলগুলো অনন্য ঐক্য দেখিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে, তাদের অনড় অবস্থানের কারণে দেশ ও জাতি যদি নতুন কোনো সংকটে পড়ে, তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং দেশে দ্রুত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র অন ষ ঠ গণভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

পর্তুগালের হারে লাল কার্ড দেখে যে শঙ্কায় রোনালদো

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ‘ভালো ছেলে’ হয়ে খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কিন্তু নিজের সেই প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেননি পর্তুগিজ মহাতারকা। ডাবলিনে গতকাল রাতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২–০ গোলে পর্তুগালের হারের ম্যাচে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রোনালদো। দলের হারের পাশাপাশি লাল কার্ডে রোনালদো ও পর্তুগাল বেশ বিপদেই পড়েছে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে কোনো হিসাব ছাড়াই বিশ্বকাপে পৌঁছে যেত পর্তুগাল। কিন্তু আয়ারল্যান্ড ফরোয়ার্ড ট্রয় প্যারটের জোড়া গোলে শেষ পর্যন্ত হারতে হয় পর্তুগালকে। এই হারের পর এখন রোনালদোদের ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে অপেক্ষা করতে হবে গ্রুপপর্বে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। আর্মেনিয়ার বিপক্ষে বাছাইপর্বে শেষ ম্যাচটি জিতলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবে পর্তুগালের।

কিন্তু অঘটনের শিকার হয়ে আর্মেনিয়ার কাছে হেরে গেলে বিপদে পড়তে হতে পারে পর্তুগালকে। তবে পর্তুগাল জিতলে তখন ‘এফ’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় স্থানের জন্য লড়বে হাঙ্গেরি ও আয়ারল্যান্ড। ‘এফ’ গ্রুপে ৫ ম্যাচে ৩ জয় ১ হার ও ১ ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে পর্তুগাল। সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে হাঙ্গেরি এবং ৭ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আয়ারল্যান্ড। ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তলানিতে আর্মেনিয়া।

আরও পড়ুনআয়ারল্যান্ডে ‘ভালো ছেলে’ হয়ে খেলার প্রতিশ্রুতি রোনালদোর১৮ ঘণ্টা আগে

তবে পর্তুগালের বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হলেও কিন্তু বিপদ শেষ হবে না। কারণ লাল কার্ড দেখায় ২০২৬ বিশ্বকাপে পর্তুগালের প্রথম দুই ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে রোনালদোকে। কাল রাতে ম্যাচের ৬১ মিনিটে আইরিশ ডিফেন্ডার দারা ও’শেয়ার পিঠে কনুই মেরে বসায় রোনালদোকে প্রথমে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির মাধ্যমে যাচাইয়ের পর সিদ্ধান্ত বদলে যায় এবং রোনালদোকে লাল কার্ড দেখানো হয়। পর্তুগাল তখন ২–০ গোলে পিছিয়ে। ম্যাচের ১৭ ও ৪৫ মিনিটে গোল দুটি করেন ট্রয় প্যারট।

পর্তুগালের জার্সিতে ২২৬ ম্যাচে এটি রোনালদোর প্রথম লাল কার্ড। এর আগে ক্যারিয়ারে যে ১২ বার লাল কার্ড দেখেছেন, প্রতিটিই ছিল ক্লাবের জার্সিতে।

রোনালদো লাল কার্ড দেখার পর থেকেই আলোচনা চলছে তিনি কয় ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী কনুই মারা, ঘুষি, লাথি কিংবা এ ধরনের আঘাতকে আক্রমণাত্মক ও সহিংস আচরণ হিসেবে ধরা হয়। এসব ক্ষেত্রে ফিফার শাস্তি পরিষ্কারভাবে নির্ধারিত—‘প্রতিপক্ষকে আঘাত করলে কমপক্ষে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।’

এমন শাস্তি কার্যকর হলে সেটা শুধু বাছাইপর্বে পর্তুগালের শেষ ম্যাচেই প্রভাব ফেলবে না। কমপক্ষে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পেলে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে বাছাইপর্বের ম্যাচসহ পর্তুগালের পরবর্তী দুটি ম্যাচেও রোনালদোকে দেখা যাবে না। সেক্ষেত্রে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলে এই টুর্নামেন্টের শুরুতে তাঁকে না পাওয়ার শঙ্কাটা থেকেই যাচ্ছে পর্তুগালের। রোনালদোর শাস্তির মাত্রা কেমন হতে পারে, তা জানতে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তে।

সতীর্থদের সঙ্গে জোড়া গোল করা প্যারটের (বাঁয়ে) উদ্‌যাপন

সম্পর্কিত নিবন্ধ