কল করে ‘কাকন বাহিনী’র প্রধান বললেন, তিনি প্রকৌশলী, ইজারা নিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন
Published: 14th, November 2025 GMT
পদ্মার চরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খুন, চাঁদাবাজি ও বালু লুটের ঘটনায় ‘কাকন বাহিনীর’ নাম সামনে আসছে। পুলিশ ৯ নভেম্বর ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ নামে অভিযান চালিয়ে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পরদিন রাত ১১টার পর ‘কাকন বাহিনী’র একজন এই প্রতিবেদককে কল করে বলেন, কাকন কথা বলতে চান। কথামতো ওই ব্যক্তির মুঠোফোনে কাকন কল করেন। তিনি ফোনটি এই প্রতিবেদককে ধরিয়ে দেন। তাঁর সঙ্গে ৩৩ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড কথা হয়। কথোপকথনের সেই রেকর্ড কাকনকে চেনেন, এমন কয়েকজনকে শোনালে তাঁরা কণ্ঠটি তাঁর বলে নিশ্চিত করেন।
কথা শুরু করে বলেন, মামলার একেক এজাহারে একেক নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর প্রকৃত নাম হাসানউজ্জামান কাকন। তিনি প্রকৌশলী, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি বিদেশে ছিলেন। তারপর ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। তাঁর দাবি, ২০২০ সাল থেকে তিনি নাটোরের লালপুরের দিয়াড় বাহাদুরপুর বালুমহাল ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছেন। তিনি মূল মালিক নন। তিনি একজন অংশীদার। ইজারার মূল্য ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
আরও পড়ুনকথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল৩১ অক্টোবর ২০২৫তাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে ‘কাকন বাহিনী’কেন বলা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন করলে হাসানউজ্জামান কাকন দাবি করেন, ‘এটা আসলে আমি নিজেও জানি না কেন, কীভাবে হলো। এটা আমি দেখতে পাচ্ছি, কিছু দুর্বৃত্ত খারাপ মানুষের কারণে হচ্ছে। এগুলা ফটোশুট করা এবং বানানো।’
গত ২৭ অক্টোবর চরে ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে ‘কাকন বাহিনী’র গুলিতে তিন কৃষক নিহত হন। এ ঘটনায় হাসানউজ্জামান কাকনসহ কয়েকজনের নামে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় একটি মামলা হয়। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়ায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। মামলার প্রধান আসামি হিসেবে কেন হাসানউজ্জামান কাকনের নাম এল, এর জবাবে তিনি দাবি করেন, এটা ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি সেখানে ছিলেন না, তিনি কিছু জানেন না। পুরোটাই সাজানো। তাঁর নামে যে কয়টা মামলা হয়েছে, কোথাও তিনি ছিলেন না। অস্ত্র, স্পিডবোট নিয়ে যেসব ছবি আছে, তার কোথাও তাঁর ছবি নেই।
আরও পড়ুনদুজনকে হত্যার ঘটনায় ‘কাকন বাহিনীর’ কাকনকে প্রধান আসামি করে মামলা২৯ অক্টোবর ২০২৫বাহিনীর প্রধান মো.রোকনুজ্জামান কাকন ওরফে ইঞ্জিনিয়ার কাকন
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লা থেকে আলোচিত মামুন হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২
পুরান ঢাকায় আলোচিত তারিক সাইফ মামুন হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে রুবেল ও ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা দুজনই পেশাদার শুটার হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ঢাকার একটি ডিবি টিম তাদের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আটক করে ঢাকা নিয়ে যায়।”
আরো পড়ুন:
সুড়ঙ্গে লুকিয়েও শেষ রক্ষা হলো না যুবলীগ নেতার
যানবাহন ভাড়া দেওয়ার আগে যাচাই করুন: ডিএমপি কমিশনার
তবে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নজির আহমেদ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে জানতে পারলে আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানানো হবে।”
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিবি পুলিশের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে।
এর আগে, সোমবার (১০ নভেম্বর) পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তারিক সাইফ মামুন নামের এক ব্যক্তিকে।
স্বজনরা জানান, মামুন পুরোনো একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে রাজধানীর আফতাবনগরের বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এর ২ বছর আগে তেজগাঁও এলাকাতেও তার ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, মামুন ছিলেন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ‘ইমন–মামুন গ্রুপ’ এর প্রধানদের একজন। এক সময় তিনি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন। অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ইমন–মামুন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান সামী বলেন, “নিহত মামুন হচ্ছেন ইমন-মামুন গ্রুপের মামুন। পুলিশের খাতায় তিনি একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত।”
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে মামুন আদালত থেকে হেঁটে এসে ন্যাশনাল হাসপাতালের গেটের দিকে যাচ্ছিলেন। তখনই দুই অস্ত্রধারী এগিয়ে এসে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়।
দুজনেরই মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ ছিল। তিন থেকে চার সেকেন্ডের মধ্যেই তারা গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের ভিডিওতে দেখা যায়, আশপাশের মানুষ আতঙ্কে দৌড়াতে থাকে, তবে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা প্রথমে নির্বিকার ছিলেন।
আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ মামুন হাসপাতাল গেট পার হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এক ব্যক্তি চিৎকার করে বলেন, “ডাক্তার ডাকেন, তাড়াতাড়ি ডাক্তার আনেন!” এরপর ট্রলিতে করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ন্যাশনাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে নেওয়ার সময়ই মামুন মারা গিয়েছিলেন। পরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, দুপুর ১২টার পর মামুনের মরদেহ হাসপাতালে পৌঁছায়।
ঢাকা/রুবেল/মেহেদী