৭ দিন আগেই জিডি করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী
Published: 14th, November 2025 GMT
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) হত্যার অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে থাকা লিমন মিয়ার (৩৫) বিরুদ্ধে সাতদিন আগেই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। তার হামলায় আহত বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসী (৪৪) নিরাপত্তাহীর স্বার্থে সিলেটের জালালাবাদ থানায় জিডিটি করেছিলেন। তবে এ জিডির তদন্ত শুরু হয়নি।
গত ৬ নভেম্বর করা এ জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘কোয়ান্টাম ফাইন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় লিমনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর সে আমার মোবাইল নম্বর নেয়। তার পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় প্রায় সময় সে আমার কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিত। একটা পর্যায়ে লিমন প্রতিনিয়ত আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে আমি তা করতে অপারগতা প্রকাশ করায় সে ফোন করে নানারকম হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’’
জিডিতে বলা হয়, ‘‘সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর সকালে লিমন আমার মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল করে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। লিমন যে কোন সময় আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করিতে পারে বলে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগিতেছি। এ অবস্থায় ব্যক্তি নিরাপত্তার স্বার্থে জিডি করা একান্ত প্রয়োজন।’’
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ মোবাশ্বির বলেন, ‘‘জিডি হওয়ার পর আদালত থেকে তদন্তের অনুমতি নিতে হয়। আমরা জিডিটি আদালতে পাঠিয়েছি। তবে এখনও তদন্তের অনুমতি পাইনি। তাই জিডির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’’
তিনি জানান, বিচারক আব্দুর রহমানের মেয়ে বিবাহিত। তবে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাই সিলেটে মেয়ের কাছে ছিলেন তাসমিন নাহার লুসী। সেখানে থাকা অবস্থায় লিমন মিয়ার হুমকি পেয়ে তিনি থানায় জিডি করেছিলেন।
বিচারক আব্দুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার চকপাড়া গ্রামে। আর ঘাতক লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া ভবানীগঞ্জ গ্রামে। তার সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, লিমন এ পরিবারের পূর্বপরিচিত। বিচারকের নিহত ছেলে সুমন রাজশাহী গভ.
বিচারক আব্দুর রহমান রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় স্পার্ক ভিউ নামের একটি দশতলা ভবনের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে ওই ফ্ল্যাটেই লিমনের হাতে খুন হয় বিচারকের নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে তাওসিফ রহমান সুমন। আহত হন তার মা তাসমিন নাহার লুসী। হামলাকারী লিমন মিয়াও আহত হয়ে এখন হাসপাতালে।
ভবনের দারোয়ান মেসের আলী জানান, লিমন মিয়াকে তিনি আগে কখনও দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি তাকে ভেতরে ঢুকতে দেন। তবে তার আগে খাতায় তার নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে নেন। হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী তাকে এসে জানান যে, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলেকে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তারা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তিনজনকেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, ধারালো অস্ত্রের গুরুত্বর আঘাতের ফলে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে। বিচারকের স্ত্রীর ডান হাত ও উরু এবং বাঁ বাহুতে গুরুত্বর জখম দেখা গেছে। এছাড়া তার ডান হাতের একটি রগ কেটে গেছে। চিকিৎসকদের একটি সমন্বিত দল অস্ত্রোপচার করেছেন। বর্তমানে তার শারীরীক অবস্থা স্থিতিশীল।
তিনি আরো জানান, লিমন মিয়ার ডান হাতে জখম ছিল। তবে সেটি গুরুতর নয়।
বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি চালক। তার সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে। হাসপাতালে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সার্বিক ঘটনা তদন্ত করছে।
ঢাকা/কেয়া/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল মন ম য় র ব চ রক র পর ব র অবস থ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বরগুনায় থেমে থাকা বাসে আগুন
বরগুনার আমতলীর ফেরিঘাট এলাকায় থেমে থাকা স্বর্ণা পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে বরগুনার আমতলী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের ফেরিঘাট এলাকায় বরিশাল-কুয়াকাটা রুটের ওই বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে, ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় বলে জানায় পুলিশ। এই ঘটনায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
আমতলী ফায়ার স্টেশনের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর মো. আবু হানিফ রাইজিংবিডিকে বলেন, “খবর পেয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। তবে, এরমধ্যেই বাসের ৭০-৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।”
এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান জানান, আশেপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরা দেখে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে পুলিশ। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, অল্প সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা/ইমরান/এস