দুই সংস্থার ‘গাফিলতিতে’ অচল ফায়ার হাইড্রেন্ট
Published: 14th, November 2025 GMT
গত ১০ মাসে চট্টগ্রাম নগরে ১২৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নেভাতে গিয়ে পানির অভাবে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। অথচ বিভিন্ন এলাকায় ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট অচল পড়ে আছে। ৪ কোটি টাকায় স্থাপন করা এসব হাইড্রেন্ট কোনো কাজেই আসছে না।
চট্টগ্রাম নগরে আগুন নেভাতে পানির উৎস হিসেবে ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বা অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানি কল স্থাপন করেছিল ওয়াসা। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করে এসব হাইড্রেন্ট বসানো হয়। কিন্তু আগুন নেভাতে একটিও ব্যবহার করছে না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এমনকি হাইড্রেন্টগুলো এখনো বুঝে নেয়নি ফায়ার সার্ভিস।
নগরের বাসিন্দারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিস ও ওয়াসা—এ দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বহীনতা আর পরস্পরকে দোষ চাপানোর কারণে এগুলো বছরের পর বছর ধুলায় পড়ে আছে। এই বিনিয়োগ কার্যত অপচয়ে পরিণত হয়েছে।
টেরিবাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম আলোকে বলেন, অনেক সময় ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড পানির অভাবে বড় হয়ে যায়। ফলে ওয়াসার এসব হাইড্রেন্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।
দুই সংস্থা এখনো পরস্পরবিরোধী
হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা নিয়ে দুই সরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে দুই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু ব্যবহার উপযোগী করতে করণীয় ঠিক করছে না। নিচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ। ফায়ার সার্ভিসের দাবি, হাইড্রেন্টে পানির চাপ মাত্র ১ বার (পানির চাপ মাপার পরিমাপক)। কার্যকর অগ্নিনির্বাপণের জন্য ন্যূনতম ৪ থেকে ৭ বার চাপ প্রয়োজন। এ ছাড়া হোসপাইপ সংযুক্ত করার ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। এ জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাডাপ্টর বা কাপলিং না থাকায় হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার অনুপযোগী।
হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়। ওয়াসা এখানে শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে। পানি নেই, চাপ নেই। নির্মাণের সময় আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। এ কারণে বুঝে নিচ্ছি না।মো.আনোয়ার হোসেন, সহকারী পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়। ওয়াসা এখানে শুভংকরের ফাঁকি দিয়েছে। পানি নেই, চাপ নেই। নির্মাণের সময় আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। এ কারণে বুঝে নিচ্ছি না।’
অন্যদিকে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দাবি করেন, হাইড্রেন্ট বসানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি এসে পরীক্ষা করেছেন। অন্যদিকে অ্যাডাপ্টর বা কাপলিং তৈরি করতে ৫-৭ হাজার টাকার বেশি লাগবে না, তাদেরই করতে হবে। আর পানির চাপ ৪ বার দেওয়া সম্ভব নয়, নিজেদের পাম্প ব্যবহার করেই চাপ বাড়াতে হবে।
ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিস বর্তমানে নিজেদের পাম্প ও গাড়ি ব্যবহার করে অগ্নিনির্বাপণ করছে। সংস্থাটি চাইলে সহজেই হাইড্রেন্ট থেকে পানি সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না।
নগরে এভাবে পানির উৎস কমে আসায় অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি বাড়ছে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত-১০ মাসে ১২৮টি অগ্নিকাণ্ডে ২৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মে ও সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ১৭টি করে ৩৪ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে সবচেয়ে কম ৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।চট্টগ্রাম নগরে পানি সরবরাহে দায়িত্বে রয়েছে ওয়াসা। প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনে তারা পানি সরবরাহ করে। তবে এসব সরবরাহ পাইপে পানির চাপ থাকে সর্বোচ্চ ১ বার। ১ বারে পানি পৌঁছায় ১০ মিটার ওপর পর্যন্ত। এর বেশি চাপ বাড়ালে পাইপ ফেটে যাবে বলে জানান প্রকৌশলীরা।
পানির অভাব
নদী ও সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রাম নগরে পানির উৎস ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একসময় একাধিক পুকুর, দিঘি ছিল। পুকুর-দিঘির নামেও অনেক এলাকাকে চেনা যেত। এখন নাম টিকে আছে, কিন্তু পুকুর কিংবা দিঘি নেই। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য বিভাগের জরিপে চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ২৫০টি জলাশয় পাওয়া যায়। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জরিপে পাওয়া যায়, ৪ হাজার ৫২৩টি জলাশয়।
নগরে এভাবে পানির উৎস কমে আসায় অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি বাড়ছে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত—১০ মাসে ১২৮টি অগ্নিকাণ্ডে ২৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মে ও সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ১৭টি করে ৩৪ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে সবচেয়ে কম ৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
দুই সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই সংস্থার কেউই দায়িত্ব নিতে চাইছে না। কোটি টাকা ব্যয় করে হাইড্রেন্ট বসানো হলো, কিন্তু ব্যবহার উপযোগী করার পরিকল্পনা নেই। সরকারের উচিত বিষয়টি তদন্ত করা এবং অবহেলা থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর প ন র উৎস
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দিন আগে বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় যান রংপুরের আশরাফুল, ড্রামে মিলল ২৬ টুকরা লাশ
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২)। তিন দিন আগে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকা যান তিনি। স্ত্রী লাকী বেগম গত বুধবার থেকে স্বামীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। তবে ফোন ধরেছেন জরেজ মিয়া। তিনি লাকীকে জানাতেন, আশরাফুল বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে লাকী বেগম ভাইকে নিয়ে বদরগঞ্জ থানায় গেলে জানতে পারেন, ঢাকায় নীল রঙের একটি ড্রামের ভেতর থেকে ২৬ টুকরা অবস্থায় আশরাফুলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আঙুলের ছাপ মিলিয়ে শনাক্ত করা হয় লাশটি।
আশরাফুলের শ্যালক আবদুল মজিদ বলেন, ‘আশরাফুল তার বাবাকে হাসপাতালে রেখে মঙ্গলবার মালয়েশিয়াফেরত বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকা যায়। গত বুধবার বিকেল ৫টায় বোনের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন সে বোনকে বলেছে, “বাবাকে হাসপাতালে রিলিজ দিবে, টাকাপয়সা দিছি। বাবাক নিয়া আইসো।”এরপর থাকি আশরাফুলকে কল দিলে তার বন্ধু জরেজ ধরে। আর বলে, আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে।’
আবদুল মজিদ আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে ফোন দিলে আবার জরেজ ফোন ধরে। কিন্তু আশরাফুলকে দেয় না। এ জন্য বোন জরেজের স্ত্রীর কাছে যায়। জরেজের স্ত্রী তাকে ফোন দিলে আশরাফুলের ফোন ধরে না কেন জানতে চাইলে জরেজ বলেন, আশরাফুলের ফোন ড্রেনে কুড়ায় পাইছে। এরপর বোনসহ থানায় আসি। এসে শুনি তাকে খুন করছে। তার লাশ উদ্ধার হইছে ঢাকায়। আমরা হত্যাকারীর বিচার চাই।’
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘নিহত আশরাফুল হকের স্ত্রী-স্বজনেরা থানায় এসেছিল। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছি। সেগুলো দিয়ে ওসি রমনা, শাহবাগকে সহযোগিতা করছি। এ ঘটনায় ঢাকায় মামলা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার সেখানে যাচ্ছে।’ হত্যাকাণ্ডের কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।