তিন দিন আগে বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় যান রংপুরের আশরাফুল, ড্রামে মিলল ২৬ টুকরা লাশ
Published: 14th, November 2025 GMT
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২)। তিন দিন আগে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকা যান তিনি। স্ত্রী লাকী বেগম গত বুধবার থেকে স্বামীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। তবে ফোন ধরেছেন জরেজ মিয়া। তিনি লাকীকে জানাতেন, আশরাফুল বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে লাকী বেগম ভাইকে নিয়ে বদরগঞ্জ থানায় গেলে জানতে পারেন, ঢাকায় নীল রঙের একটি ড্রামের ভেতর থেকে ২৬ টুকরা অবস্থায় আশরাফুলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আঙুলের ছাপ মিলিয়ে শনাক্ত করা হয় লাশটি।
আশরাফুলের শ্যালক আবদুল মজিদ বলেন, ‘আশরাফুল তার বাবাকে হাসপাতালে রেখে মঙ্গলবার মালয়েশিয়াফেরত বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকা যায়। গত বুধবার বিকেল ৫টায় বোনের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন সে বোনকে বলেছে, “বাবাকে হাসপাতালে রিলিজ দিবে, টাকাপয়সা দিছি। বাবাক নিয়া আইসো।”এরপর থাকি আশরাফুলকে কল দিলে তার বন্ধু জরেজ ধরে। আর বলে, আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে।’
আবদুল মজিদ আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে ফোন দিলে আবার জরেজ ফোন ধরে। কিন্তু আশরাফুলকে দেয় না। এ জন্য বোন জরেজের স্ত্রীর কাছে যায়। জরেজের স্ত্রী তাকে ফোন দিলে আশরাফুলের ফোন ধরে না কেন জানতে চাইলে জরেজ বলেন, আশরাফুলের ফোন ড্রেনে কুড়ায় পাইছে। এরপর বোনসহ থানায় আসি। এসে শুনি তাকে খুন করছে। তার লাশ উদ্ধার হইছে ঢাকায়। আমরা হত্যাকারীর বিচার চাই।’
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘নিহত আশরাফুল হকের স্ত্রী-স্বজনেরা থানায় এসেছিল। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছি। সেগুলো দিয়ে ওসি রমনা, শাহবাগকে সহযোগিতা করছি। এ ঘটনায় ঢাকায় মামলা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার সেখানে যাচ্ছে।’ হত্যাকাণ্ডের কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আশর ফ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ফেসবুকে প্রেম, গোপনে বিয়ে, এরপর হত্যার ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড
ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে প্রেম। পরে বন্ধুদের উপস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে বিয়ে হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার। বিয়ের দুই বছর পরে জন্মদিন পালনের কথা বলে তাঁকে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান রেজাউল। সম্পর্ক নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে জান্নাতুলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তিনি।
প্রায় তিন বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার রেজাউলের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। জান্নাতুলের বাবা শফিকুল আলমের করা মামলায় এই রায় দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি রেজাউলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে এ মামলায় গত ২২ মে হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর পলাতক রয়েছেন আসামি রেজাউল।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রিয়াজ হোসেন জানান, আদালত তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে সেখানে গাইনি অ্যান্ড অবস বিষয়ে একটি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন জান্নাতুল। ২০১৯ সালের শেষের দিকে রেজাউলের সঙ্গে তাঁর প্রেম হয়। ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বন্ধুদের উপস্থিতিতে তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের পরদিন উভয়ে পরিবারকে বিষয়টি জানান। উভয়ের পরিবার জান্নাতুলের বড় বোনের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে অপেক্ষা করতে সম্মত হয়।
মামলার নথিতে আরও বলা হয়েছে, রেজা মাঝেমধ্যে জান্নাতুলদের বাসায় যেতেন। আবার কখনো হোটেলে একসঙ্গে থাকতেন। ২০২২ সালের ১০ অগাস্ট জান্নাতুলের জন্মদিন পালনের জন্য রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান রেজাউল। সেখানে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা–কাটাকাটি, বাগ্বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে জান্নাতুলকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করেন তিনি। পরে গলা কেটে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
ঘটনার পরদিন ১১ আগস্ট রেজাউলকে আসামি করে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেন জান্নাতুলের বাবা শফিকুল আলম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান কলাবাগান থানার পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির। ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রেজাউলকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তিনি। ২০২৪ সালের ৭ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
আসামি পলাতক হওয়ায় রায়ের সময় আজ তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন না।