১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ডায়াবেটিস সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএস) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে দিবসটি ঘোষণা করে।

১৪ নভেম্বর স্যার ফ্রেডেরিক ব্যান্টিংয়ের জন্মদিন। চার্লস বেস্টের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ১৯২১ সালে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন। ইনসুলিনের আবিষ্কার ডায়াবেটিস চিকিৎসায় এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনে দেয়, তাই তাঁর জন্মদিনকেই এই দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

১৯৯১ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগী দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে, বিষয়টি বৈশ্বিক উদ্বেগে পরিণত হয়। কিন্তু এ অবস্থায় মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা ছিল না। ডায়াবেটিস মূলত রক্তের শর্করা–সম্পর্কিত একটি দীর্ঘস্থায়ী বিপাকীয় রোগ।

এ রোগ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা এবং যথাযথ নিয়মাবলি মানা না হলে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। চিকিৎসা না নেওয়া হলে হৃৎপিণ্ড, রক্তনালি, স্নায়ু ও অন্য যেকোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস প্রচার, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে নীতি ও কর্মপরিকল্পনা জোরদার করার লক্ষ্যে বর্তমানে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

২০২৫ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তুলুন’। প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রতিপাদ্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ডায়াবেটিস রোগীদের বিরাট একটা অংশ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। কাজের খাতিরে একজন মানুষ কর্মস্থলেই বেশি সময় কাটান। ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ কর্মস্থলে সচেতন না থাকলে রোগটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং উৎপাদনশীলতাও কমে যায়। অর্থাৎ কর্মস্থলে অভ্যাসগত জীবনচক্র ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। কারণ, কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করতে হয়।

এ ছাড়া মানসিক চাপ, খাবারে অনিয়ম এবং ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড গ্রহণ ইত্যাদি কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। তাই কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর জীবনধারার নিয়মাবলি চর্চা প্রয়োজন। একই সঙ্গে কর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা, ওজন পরিমাপ ও রক্তচাপ পরীক্ষার সুযোগ রাখা এবং কর্মস্থলে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্বাস্থ্যবান কর্মীই প্রতিষ্ঠান ও দেশের উৎপাদনশীলতায় চালিকা শক্তি হিসেবে অবদান রাখছে।

বর্তমানে অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ডায়াবেটিস’ এবং শারীরিক অনেক সমস্যার মূলে রয়েছে রোগটি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার বেশি। ২০২৪ সালের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে ৮০ কোটির বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অথচ, এর আগের বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪২ কোটি। অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে! আইডিএস অনুমান করে, বিশ্বে ৫৩ দশমিক ৭ কোটি লোকের ডায়াবেটিস রয়েছে। প্রতি ১০ জনে ১ জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং যেটা ২০৩০ সাল নাগাদ ৬৪৩ মিলিয়ন ছাড়াবে! ২০২১ সালে বিশ্বের ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ২০২১ সালে ৯৬৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় ডায়াবেটিসের কারণে, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের ৯ শতাংশ ছিল।

বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে, যার বড় কারণ অর্ধেকের বেশি মানুষ যারা ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েও বিষয়টি জানেনই না। তবে, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএস) বলছে, বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর ২-৩ শতাংশের (প্রায় ৪ লাখ) বয়স ১৬ বছরের কম, যাদের বেশির ভাগই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। উদ্বেগের বিষয় হলো, পুরো বিশ্বে অল্প বয়সীদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে বেশি!

সামগ্রিকভাবে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এর বড় কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস। এ ছাড়া ভেজাল খাদ্য, পরিবেশসহ প্রয়োজনীয় উপাদানে অতিরিক্ত দূষণও সমস্যা প্রকট করে তুলছে। তবে অল্প বয়সীদের মধ্যে ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, কোমল পানীয় এবং অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে, যা ডায়াবেটিসসহ অসংক্রামক রোগের বড় কারণ। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা এগুলো নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া শহুরে জীবন মূলত খাঁচায় বন্দী জীবন। পর্যাপ্ত পাবলিক স্পেস, যেমন মাঠ, পার্ক, উদ্যান ইত্যাদি না থাকায় জনগণ বাসাবন্দী হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা খেলাধুলা ও শারীরিক কসরত না করতে পারায় মুটিয়ে যাচ্ছে।

অপর দিকে প্রাপ্তবয়স্কদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, যেমন ধূমপান, জর্দা, গুল তামাকপাতা সেবন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএস) এবং নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথভাবে তৈরি করা একটি নতুন গবেষণাকাজ মতামত দিয়েছে যে ধূমপান ছেড়ে দিলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করা কেবল টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিই হ্রাস করে না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও অনেক সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করে।

গবেষণা প্রমাণ করে, ধূমপান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। ধূমপান ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, কিডনি জটিলতা এবং অন্ধত্বের ঝুঁকিও বাড়ায়।

ধূমপানের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক

ধূমপায়ীদের যদি ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস না থাকে, তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি হতে পারে। প্রথম দুই বছর এটি হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি কারণ, প্রকৃত পক্ষে, যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ধূমপান না করা লোকদের তুলনায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ইনসুলিন ডোজ বা মাত্রা কার্যকর করতে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

একজন ধূমপায়ী যত বেশি ধূমপান করবেন, তাঁর টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তত বেশি। যে ধরনের ডায়াবেটিস থাকুক না কেন, ধূমপান বা তামাকজাত পণ্য (নিকোটিন) গ্রহণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা আরও জটিল করে তোলে। যদি কারও ডায়াবেটিস হয় এবং তিনি যদি ধূমপান করেন, তবে ডায়াবেটিস থেকে তাঁর বিভিন্ন রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। যেমন হৃদ্‌রোগ, কিডনির রোগ এবং পায়ে দুর্বল রক্তপ্রবাহ, যা সংক্রমণ, আলসার এবং সম্ভাব্য পা কেটে ফেলার কারণ হতে পারে (পায়ের আঙুল বা পায়ের অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরের কোনো অংশ কেটে ফেলা)। এ ছাড়া রেটিনোপ্যাথি—চোখের রোগ, যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি—হাতে ও পায়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু, যা অসারতা, ব্যথা, দুর্বলতা সৃষ্টি করে।

অনেকেই ইলেকট্রনিক সিগারেট (ই-সিগারেট, ভ্যাপিং ইত্যাদি) তামাক পণ্যের বিকল্প ভেবে ব্যবহার করেন, যা ভুল পদক্ষেপ। ই-সিগারেট নেশাদায়ক এবং এর মধ্যেও নিকোটিনসহ ক্ষতিকারক রাসায়নিক আছে, যা সিগারেটেও পাওয়া যায়। সুতরাং এই পণ্যগুলো রক্তে শর্করার মাত্রাকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

নিকোটিন কীভাবে রক্তে শর্করা প্রভাবিত করে? নিকোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা ওপরে বা নিচে উঠাতে বা নামাতে পারে। নিকোটিনজাতীয় রাসায়নিক পদার্থ দেহের গ্লুকোজ ব্যবহার করার কার্যকারিতাকে পরিবর্তন করে, রক্তে চিনি যা কোষগুলোকে শক্তি দেয়। এটি অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে, এটি ডায়াবেটিসকে আরও খারাপ করতে পারে। অন্যদিকে নিকোটিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ইনসুলিন গ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক লো ব্লাড গ্লুকোজ (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) সৃষ্টি করতে পারে। নিকোটিন শরীরকে আরও ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করতে ট্রিগার করতে পারে, যা হচ্ছে ইনসুলিন প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত একধরনের ফ্যাট।

অন্যদিকে নিকোটিন হরমোনের মাত্রা বাড়ায়; যা ইনসুলিনের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের ডায়াবেটিস এবং যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁদের রক্তের গ্লুকোজের নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিনের বেশি ডোজ প্রয়োজন হয়। ধূমপায়ীদের যখন রক্তের গ্লুকোজ কয়েক বছরের জন্য নিয়মিত খুব বেশি থাকে, তখন এটি হৃদ্‌রোগ, কিডনি, স্নায়ু এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে।

ধূমপান ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং এবং ধূমপান সেটাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। যেহেতু নিকোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

ডায়াবেটিসের সঙ্গে মুখের রোগের সম্পর্ক

ডায়াবেটিসের পাঁচটি জটিলতার মধ্যে মাড়ির রোগ হচ্ছে ষষ্ঠ বা Sixth Complications বা জটিলতা। যাঁদের মাড়ির রোগ আছে, তাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এই জটিলতার মধ্যে অন্যতম লক্ষণ হলো মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া, মাড়ি থেকে দাঁত আলগা হয়ে যাওয়া ও অকালে দাঁত হারিয়ে ফেলা। এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মাড়ির যত্ন করা জরুরি। যেমন দুবেলা সকালে নাশতার পর ও রাতে আহারের পর দাঁত ব্রাশ করা, ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে দুই দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্যকণা পরিষ্কার করা ও জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ বা অল্প গরম লবণপানিতে মুখ কুলকুচি করা। একই সঙ্গে ছয় মাস অন্তর একজন রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনকে দিয়ে মুখ পরীক্ষা করা ও দাঁতের স্কেলিং করা (মাড়ি থেকে খাদ্যকণা বা ডেন্টাল প্ল্যাক পরিষ্কার করা)।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ধূমপান ছেড়ে দেওয়া কেন প্রয়োজন। আপনি কতবার ধূমপান করেছেন বা কখন ছেড়ে দিলে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। আপনি যখন ধূমপান বন্ধ করবেন, সেই সময় থেকে আপনার শরীর নিজেই নিরাময় শুরু করবে। যেমন ১২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার রক্তে কার্বন মনোক্সাইড (সিগারেটের ধোঁয়া থেকে একটি বিষাক্ত গ্যাস) স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দুই সপ্তাহ থেকে তিন মাসের মধ্যে আপনার রক্ত সঞ্চালন এবং ফুসফুস আগের চেয়ে উন্নত হবে। এক বছরের মধ্যে আপনার রক্তসঞ্চালন অনেক বেশি স্বাভাবিক হবে।

এক বছরের মধ্যে আপনার হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি যাঁরা এখনো ধূমপান করে, এমন ব্যক্তিদের চেয়ে অর্ধেক নেমে আসবে। ধূমপান ত্যাগ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ করতে সহায়তা করে। শরীর ধূমপানমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়া পর্যন্ত রক্তে শর্করা পরিমাণ ঘন ঘন পরীক্ষা করতে হবে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ

ধূমপান করবেন না। কারণ, ধূমপান আপনার টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়, ওজন বেশি হলে ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অনেক জরুরি। ঘন ঘন সিগারেট গ্রহণকারী ধূমপায়ীদের আরও ওজন বাড়তে পারে। এমনকি যদি ওজন বেশি না হয়, তবু পেটের ফ্যাট ইনসুলিন প্রতিরোধের এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ধূমপানের কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ‘খারাপ এলডিএল’ কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। একইভাবে ‘ভালো এইচডিএল’ কোলেস্টেরল হ্রাস পেতে পারে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ট্রাইগ্লিসারাইডগুলোও বাড়ায়। এগুলো রক্তের মধ্যে একধরনের চর্বি। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও জীবনযাপন পরিবর্তন করতে হবে, তেমনি ধূমপান ও তামাকজাতীয় সব বস্তু—জর্দা, গুল, সাদাপাতা জীবন থেকে বর্জন করতে হবে। এভাবেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। একবার হলে তা সারে না। তবে এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে পারলে একে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। এ জন্য যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের ডায়াবেটিস নেই— উভয়কেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে। কর্মস্থলে যেখানে মানুষ তাঁর বেশির ভাগ সময় কাটান, সেখানেও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দিতেই হবে এবং ধূমপান ছাড়তে নিজের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। তবে অনেক ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। আসুন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতন হই, কর্মস্থলসহ সর্বত্র সচেতনতা ছড়িয়ে দিই। কারণ, রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়।

অধ্যাপক ড.

অরূপরতন চৌধুরী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিবারণ সংস্থা (মানস) ভিজিটিং প্রফেসর, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল কো-অর্ডিনেটর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট

ই-মেইল: [email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ট স হওয র আশঙ ক ইনস ল ন ন রক ত অন ক ব রক ত র র জন য র রক ত পর ক ষ আপন র জ বনয সমস য বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বরগুনায় বাসে আগুন: ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৫

বরগুনার আমতলীতে স্বর্ণা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে আমতলী থানা পুলিশ। 

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমতলী ফেরিঘাট সংলগ্ন রাস্তায় পার্কিং করে রাখা স্বর্ণা পরিবহনের পটুয়াখালী–ব ১১-০০৪৬ নম্বরের বাসটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

সংবাদ পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বাসটি পুড়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিষিদ্ধ সংগঠন আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান রাসেল, যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ খান এবং আমতলী পৌর যুবলীগের সদস্য ও ১১টি মামলার আসামি তম্ময় গাজী। এছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন আমতলী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য কাওছার আহমেদ রনি এবং সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ছগির মল্লিক।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে মামলা রুজু হয়েছে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ