ইসলামে স্বাস্থ্যসচেতনতার গুরুত্ব
Published: 14th, November 2025 GMT
মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা—এসব পূরণে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। শরীর ও মন সুস্থ থাকার নামই স্বাস্থ্য। পবিত্র কোরআনে সৃষ্টিতত্ত্ব ও চিকিৎসাবিদ্যা–সম্পর্কিত আয়াত আছে প্রায় ৩৬০টি এবং শুধু চিকিৎসাবিষয়ক আয়াতের সংখ্যাই প্রায় ২৪১।
মানুষ সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন সচেতন হয় না। অসুস্থ হলে দিশাহারা হয়ে যায়। নবী করিম (সা.
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অসুস্থ হলে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া ও যথাযথভাবে ওষুধ সেবন করা নবীজি (সা.)–এর সুন্নত আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় ভোর করল যে সে শরীর সুস্থ ও নিরাপদ এবং তার নিকট সারা দিনের খাবার সঞ্চিত রয়েছে, তাহলে তার জন্য গোটা দুনিয়া জোগাড় করে দেওয়া হয়েছে।’ (তিরমিজি: ২৩৪৬, ইবনে মাজাহ: ৪১৪১, মিশকাত: ৫১৯১, সহিহ আলবানি: ২৩১৮)
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম : ২২৩); অপরিচ্ছন্নতা ও নোংরা পরিবেশ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে শরীরে নানা রোগজীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটে। তাই অজু ও গোসলের পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি শরীরের অবাঞ্ছিত কয়েকটি বিষয়ের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। (বুখারি: ৫৮৮৯)
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ও পরিমিত ঘুম ইবাদত। ঘুম দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে, মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন রাতের পর্যাপ্ত ঘুম।সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করা আমাদের কর্তব্য। ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘রোগাক্রান্ত হলে আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করেন।’ (সুরা-২৬ শুআরা, আয়াত: ৮০); আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি এবং ফল-ফসলাদির বিনষ্টের মাধ্যমে। আর সুসংবাদ ধৈর্যশীলদের জন্য।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৬); রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও ও সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা করো। কেননা ইমানি দৌলতের পর কাউকে স্বাস্থ্যের চেয়ে উত্তম আর কোনো দৌলত দেওয়া হয়নি।’ (তিরমিজি: ৩৫৫৮; মিশকাত: ২৪৮৯)
সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরচর্চা হাঁটাহাঁটিও ইবাদত। নবীজি (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে কুস্তি লড়েছেন। মাঝেমধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। তিনি সব সময় স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে দ্রুত লয়ে হাঁটতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, ‘আমি নবীজি (সা.)–এর চেয়ে দ্রুতগতিতে কাউকে হাঁটতে দেখিনি।’ (তিরমিজি: ৩৬৪৮)
সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের বিকল্প নেই। নবীজি (সা.) পরিমিত খাবারে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পেটের তিন
ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য। এক ভাগ পানির জন্য। এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখো।’ (তিরমিজি: ২৩৮০)
অসুস্থ হলে যথাসম্ভব দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা সুন্নত। নবী করিম (সা.) সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থতার সময় চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বুখারি: ৫৬৭৮)
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ও পরিমিত ঘুম ইবাদত। ঘুম দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে, মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন রাতের পর্যাপ্ত ঘুম। রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (বুখারি : ৫৯৯); আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম, তার নিমিত্তে রাতকে করেছি আবরণ।’ (সুরা-৭৮ নাবা, আয়াত: ৯-১০)
অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ব স থ য র জন য গ রহণ কর পর য প ত আল ল হ বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটের মাধ্যমে আইনপ্রণয়ন, সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, মনে রাখতে হবে, গণভোটের মধ্য দিয়ে আইনপ্রণয়ন করা হয়ে যাবে না। গণভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না। এর জন্য আগে অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
‘নারীর উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক এই মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজক নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে।
জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিএনপি সোচ্চার থাকবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষুণ্ন হোক, তা তাঁরা চান না। সে জন্য কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ তাঁরা করতে দেবেন না।
দেশে একটি দল ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা করছে বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। তারা চায়, এ দেশের নারীরা যেন অন্দরমহলে বন্দী থাকে। যেন বাংলাদেশে অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে। নারীর অগ্রগতি-উন্নতি যেন না হয়। সে জন্য তারা বলছে, কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।
নারীরা যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্মঘণ্টা কমানোর সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক আছে। কাজেই নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে চাকরিদাতারা তাদের চাকরি দিতে চাইবে না। এতে নারীর কর্মসংস্থান আরও কমে যাবে। তাই যাঁরা নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য খারাপ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, গত ১৭ বছর নারীরা যেভাবে খুন-ধর্ষণের শিকার হতো, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। নারীরা তাদের মর্যাদা ফিরে পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে আজ আবার নারীরা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছে। নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই অধিকার আদায়ে নারীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মর্যাদা ফিরে পেতে নারীদের সমস্বরে আওয়াজ দিতে হবে।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, আজ তাঁরা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংকেত দিয়ে গেলেন যে, নারীর অধিকার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করা হলে দেশের পুরো নারী সমাজ জেগে উঠবে। এ সময় তিনি স্লোগান দেন, ‘পাঁচ নয় আট, তুমি বলবার কে।’
নারী কর্মপরিসরে কাজ করবে না ঘরে থাকবে—এটা একান্তই নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। তিনি বলেন, নারী অধিকার হলো মানুষের অধিকার। নারীর কোনো দান, দয়া, দাক্ষিণ্যের প্রয়োজন হয় না। নারীরা ঘর সামলাবে না বাইরে থাকবে, সেটা একান্তই নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। নারীদের সিদ্ধান্ত নারীদেরই নিতে দিন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, ‘পুরুষ আমাদের সহযোদ্ধা। পুরুষ আমাদের শত্রু নয়। তাই নারীর পাশাপাশি যে পুরুষকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, আমি তাঁর পক্ষে দাঁড়াই।’
যে জুলাই সনদে নারীর কথা নেই, সেই জুলাই সনদ নারীরা প্রত্যাখ্যান করছে বলে মন্তব্য করেন নাহরীন ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন, যেখানে রাত্রিবেলায় নারী নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোক, পারিবারিক ক্ষেত্রে হোক বা যেকোনো ক্ষেত্রে হোক, যখনই তাঁরা কথা বলতে গিয়েছেন, তখনই দেখেছেন, বিভিন্নভাবে নারীদের হ্যারেস করা হয়েছে। হয়তো নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, অথবা কোনো মতাদর্শ নিয়ে, অথবা পোশাক নিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারীকে কথা বলতে হবে।
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, নিলুফা চৌধুরী, শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, সহসভাপতি রেহানা আক্তার প্রমুখ।