ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ব্যাপারী। 

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য আব্দুস সালাম ব্যাপারী ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে মো.

শাহজাহান মিয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে প্রশাসকের দায়িত্বের পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস: স্বাস্থ্যকর কর্মস্থলই উৎপাদনশীল কর্মস্থল

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তুলুন’ খুবই সময়োপযোগী হয়েছে। এ প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে কর্মস্থলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা এবং ডায়াবেটিস থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের প্রতি সহমর্মিতাসুলভ আচরণ করা এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপরও এবার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

এ কথা আজ অনেকেই জানেন, ডায়াবেটিস বহুলাংশে প্রতিরোধ করা যায়, অর্থাৎ যাঁদের ডায়াবেটিস নেই, তাঁরা যদি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেসব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারেন, তাহলে ডায়াবেটিস অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। সাধারণত কায়িক পরিশ্রম না করলে এবং মাত্রাতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খেলে ও কোমল পানীয় পান করলে বা মোটা হয়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব বিষয়ে তাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আর যদি কোনো কারণে ডায়াবেটিস হয়েই যায়, তবে ডায়াবেটিসের জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। ডায়াবেটিক রোগীদের তাই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জটিলতা সম্পর্কে জানতে হবে এবং এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবর্তিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে উন্নত বিশ্বের চেয়ে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ডায়াবেটিকের রোগী বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। উন্নত দেশগুলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়ায় তারা ডায়াবেটিসের মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আশানুরূপভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের দিক থেকে পৃথিবীর সপ্তম দেশ। ফলে এটি সহজেই অনুমেয় যে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে আমাদের আরও কাজ করতে হবে।

এখন এটি অনেকেই জানেন যে ডায়াবেটিস প্রধানত তিন ধরনের।

টাইপ-১, টাইপ-২ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায় এখনো বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি। এটি যেকোনো বয়সীদের মধ্যে দেখা গেলেও সাধারণত শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের বেঁচে থাকার জন্য সারা জীবনই ইনসুলিন নিতে হবে, অর্থাৎ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ইনসুলিন অপরিহার্য। ফলে এটি টাইপ-১ রোগীদের বিনা মূল্যে সরবরাহ করার বিষয়ে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। যদিও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি তার সীমিত সাধ্য অনুযায়ী টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিনা মূল্যে ইনসুলিন ও সিরিঞ্জ সরবরাহ করে আসছে। আমরা মনে করি, টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য যেহেতু ইনসুলিন অপরিহার্য, সে কারণে এই ইনসুলিন জীবন রক্ষার জন্য আমৃত্যু পাওয়া এ রকম রোগীর মানবিক অধিকার। টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগী সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও সারা বিশ্বে টাইপ-২ ডায়াবেটিসই সংখ্যায় বেশি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা মহামারি আকার ধারণ করেছে।

মনে রাখতে হবে, একটি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখলে মালিকপক্ষের কিছু খরচ হলেও তা প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানের লাভজনক বলেই বিবেচিত হবে। কারণ, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারলে উৎপাদনশীলতায় তাঁর পক্ষে অবদান রাখাও সহজ হবে।

টাইপ-২ ডায়াবেটিসে সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের আক্রান্ত হতে দেখা যায় এবং তাঁদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে অথবা তা অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকে। এ ধরনের রোগীদের শুরুতে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণসহ কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চললে ও দরকার মতো ওষুধ খেলে এ ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে মোটা বা স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীরা তাঁদের ওজন কমিয়ে আনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। সাধারণত মা–বাবাসহ রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় কারোর ডায়াবেটিস থাকলে বা ৪৫ বছরের বেশি বয়স হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে। মা–বাবার দেহে থাকা জিন সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হতে পারে।

নারীদের মধ্যে অনেকে আছেন, গর্ভাবস্থায় যাঁদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। অবশ্য এ ধরনের ডায়াবেটিস সন্তান জন্মের পর চলেও যায়। একে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে মা ও শিশু—উভয়েরই ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটিও বলা দরকার যে ডায়াবেটিস যেসব কারণে বাড়ছে, একই কারণে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হারও বাড়ছে। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে মা ও শিশু—উভয়েরই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

সন্তান নেওয়ার আগে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করালে এবং রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রেখে সন্তান ধারণ করলে ডায়াবেটিক শিশু ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম অনেকখানিই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যেকোনো মানুষেরই শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি তাঁর কর্মক্ষমতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। তাই কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে, কর্মীদের কাজের মান উন্নত হবে এবং কর্মক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে। যাঁদের ডায়াবেটিস নেই, ডায়াবেটিস–বিষয়ক সচেতনতা কর্মস্থলে থাকা অন্য কর্মীদেরও ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। এসব বিবেচনায় কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে মালিক ও কর্মী—সবাইকেই এগিয়ে আসা উচিত।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিচের ব্যবস্থাগুলো নিতে পারে—

১. কর্মীদের জন্য বছরে অন্তত একবার রক্তে শর্করা, রক্তচাপ ও বিএমআই পরিমাপের ব্যবস্থা করা;

২. অফিস ক্যানটিনে কম চর্বি ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার রাখা ও চা-কফিতে চিনির ব্যবহার কম রাখা;

৩. কর্মীদের জন্য কাউন্সেলিং ও বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা। সম্ভব হলে একটি ব্যায়ামাগার রাখা;

৪. অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি করা এবং লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা;

৫. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পরিবর্তন সম্পর্কে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।

মনে রাখতে হবে, একটি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখলে মালিকপক্ষের কিছু খরচ হলেও তা প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানের লাভজনক বলেই বিবেচিত হবে। কারণ, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারলে উৎপাদনশীলতায় তাঁর পক্ষে অবদান রাখাও সহজ হবে।

কর্মস্থলে এসব বিষয়ে সচেতনতা কর্মীদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যেমন সাহায্য করবে, তেমনি যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরাও অন্য কর্মীদের সহায়তায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনযাপন নিশ্চিত করতে পারবেন। এ ধরনের সচেতনতার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের প্রতি অন্য কর্মীরা সহানুভূতিশীল আচরণ করতে পারেন এবং প্রয়োজনে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কর্মীকে সহায়তা করতে পারেন। একটি স্বাস্থ্যকর কর্মস্থল গড়ে তুলতে পারলে তা শেষ পর্যন্ত উৎপাদনশীল কর্মস্থল হিসেবেই বিবেচিত হবে। এ সচেতনতা কর্মস্থলের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও গড়ে তোলা প্রয়োজন।

জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খান বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মী। সভাপতি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি

ফরিদ কবির কবি ও প্রাবন্ধিক। পরিচালক, প্রকাশনা ও জনসংযোগ, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি

সম্পর্কিত নিবন্ধ