ঘটনাটি ২০২৫ সালের ১৩ মার্চের। রাত ৯টা-সাড়ে ৯টা হবে। উপসম্পাদক লাজ্জাত ভাই (লাজ্জাত এনাব মহছি) ডাকলেন। মাগুরার শিশুটির মৃত্যুসংবাদের সঙ্গে কোন ছবি যাওয়া উচিত, সেটা নিয়ে মতামত চাইলেন। পরদিন পত্রিকায় খবরটি প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে ছাপা হবে। মাগুরার শিশুটির কথা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। এ বছরের ৫ মার্চ যৌন নির্যাতন, গলায় ফাঁস ও বুকে প্রচণ্ড চাপ দিয়ে ৮ বছরের শিশুটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামি শিশুটির বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে ১৭ মে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। 

নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার আধিক্যের মধ্যে খুব কম ঘটনাই স্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে। মাগুরার শিশুটি ছিল সে রকম খুব কম ঘটনার একটি। রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টানা কয়েক দিন এ নিয়ে খবর সংগ্রহ করেছিলাম আমি। মৃত্যুর খবরটি অনলাইনে প্রথম আলো ‘ব্রেক’ (প্রথম প্রকাশ) করে। দুপুর থেকে হাসপাতাল ও মর্গে ছোটাছুটি, শিশুটির মা ও স্বজনদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে হৃদয়পোড়া কষ্ট নিয়ে অফিসে এসে প্রতিবেদন লিখেছিলাম।

লাজ্জাত ভাই সেদিন আমাকেসহ ওই সময়ে অফিসে উপস্থিত সহকর্মী মানসুরা হোসাইন ও লিপি রানী সাহাকে ডেকে নেন ফটো বিভাগের প্রধান খালেদ সরকার ভাইয়ের ডেস্কে। বিভিন্ন অনলাইন ও টেলিভিশন চ্যানেলে সন্ধ্যা থেকেই প্রচার হচ্ছিল শিশুটির কফিনের সামনে ক্রন্দনরত মা ও স্বজনদের ছবি-ফুটেজ। লাজ্জাত ভাই আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। আমরা তিনজন একবাক্যে বললাম, ‘ভুক্তভোগীর মায়ের স্পষ্ট ছবি কোনো অবস্থাতেই দেওয়া যাবে না।’ আমাদের কথা শোনা হলো। পরদিন পত্রিকায় চার কলামে ‘মাগুরার শিশুটিকে বাঁচানো গেল না’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ছাপা হলো ক্রন্দনরত মায়ের মুখটি ঝাপসা করে দিয়ে। 

এটাই একমাত্র ঘটনা হয়। নারী, শিশু, জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিবেচনায় প্রথম আলোয় নারী সংবাদকর্মীদের মতামত চাওয়ার এই চর্চা রয়েছে। ধর্ষণের বহু পুরোনো দু-একটি আলোচিত ঘটনায় নাম প্রকাশের প্রচলন (যেমন ১৯৯৫ সালে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা) থাকলেও বাকি ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, শিশু আইন এবং নিজস্ব সাংবাদিকতা নীতিমালা মেনে ভুক্তভোগীর পরিচয় গোপন রেখে সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো। ফলে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠা মাগুরার শিশুটির নাম যখন বিক্ষোভ-স্লোগানে, স্ক্রিনের টক শো আর সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও কলামে প্রকাশ হচ্ছিল, তখনো প্রথম আলো ‘মাগুরার শিশু’ পরিচয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। 

এত নিয়ম মানা সম্ভব নাকি?

প্রথম আলোর বয়স ২৭ বছর। শুরুর সময়ে যখন ভাবা হতো প্রতিবেদন তৈরিতে এত এত নিয়ম মানা সম্ভব নাকি? তখন প্রথম আলো তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। সুসাংবাদিকতা, সৃজনশীলতা, জনমুখিতা, বদলের সহযোগী ও সংহতি—পাঁচটি মূল্যবোধ নিয়ে ২০১০ সালে তৈরি করেছে ‘সাংবাদিকতা নীতিমালা’। ২০১৩ ও ২০১৯ সালে এই নীতিমালা হালনাগাদ করা হয়। 

প্রথম আলোর বার্তাকক্ষে সাড়ে ৯ বছর আগে যখন যোগ দিই, তখন হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘সাংবাদিকতা নীতিমালা’ এবং ‘প্রথম আলো ভাষারীতি’। ১০ বছর আগে একটি লিখিত নারী নীতিমালাও করা হয়েছিল। নারী নীতিমালাটি হালনাগাদ করে প্রকাশ করা হয় ২০১৯ সালে। একই সময়ে তৈরি করা হয় শিশু নীতিমালা। এর কিছু পরে তৈরি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে প্রথম আলো কর্মীদের দিকনির্দেশনা। কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা জারি করেন। গত বছরের জুন মাসে জানতে পারলাম, হাইকোর্টের সেই নির্দেশনা মেনে অফিসে গঠন করা হয়েছে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধবিষয়ক কমিটি’। মিডিয়াস্টার লিমিটেডের অধীন প্রথম আলো, কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা, প্রথমা, প্রথমা ডটকম, প্রথম আলো ট্রাস্ট, চরকিসহ সব সহযোগী সংগঠন এ কমিটির কাজের আওতায় রয়েছে। সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো কাঠামোগতভাবে সুগঠিত নয়—এমন বদনাম রয়েছে। তবে প্রথম আলোয় যোগ দেওয়ার আগে জানতাম এই প্রতিষ্ঠান নিয়ম, নীতি, শৃঙ্খলায় সুগঠিত ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। তবে সুগঠিত থাকার মাত্রা যে এত উঁচু পর্যায়ে, তা জানতাম না।

ভালো চর্চার উদাহরণ

আমার কাজের ক্ষেত্র—নারী, শিশু, লিঙ্গভিত্তিক (জেন্ডার) সমতা। ফলে এ–সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলোয় অফিস থেকে সাধারণত আমি যাই। এসব অনুষ্ঠানে গেলে অনেক সময় আলোচনায় উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে নারী ও শিশু নীতিমালার প্রসঙ্গ। বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, নারী ও শিশু নীতিমালা রয়েছে এমন সংবাদমাধ্যমের নাম এক হাতের কড়ে গুনে বলা যায়। সেই অল্প কয়েকটির মধ্যে সবার আগে উচ্চারিত হয় প্রথম আলোর নাম। 

কিছু তথ্য দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ২০২২ সালে সুইডেনের ফোয়ো মিডিয়া ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) জেন্ডার ইক্যুইটি অ্যান্ড মিডিয়া রেগুলেশন স্টাডি, বাংলাদেশ (জেন্ডার সমতা ও গণমাধ্যম–সংক্রান্ত আইন ও নীতি পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশ) প্রকাশ করে। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন সাংবাদিক ও প্রশিক্ষক কুররাতুল-আইন-তাহ্‌মিনা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮টি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতা-সম্পর্কিত লিখিত নীতিমালা আছে। আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে মৌখিক নীতিমালা আছে। প্রথম আলোতে নারীবিষয়কসহ তিনটি লিখিত নীতিমালা রয়েছে। সংবাদ প্রকাশের আগে নিয়মিত আলোচনা ও সংবাদ প্রকাশের পর মূল্যায়ন—এ দুটো দিক উল্লেখ করে ভালো চর্চার উদাহরণ হিসেবে সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু প্রথম আলো সম্পর্কে মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, যখন নতুন কেউ যোগ দেন প্রথম আলোয়, তখন পরিচিতি অনুষ্ঠানে তাঁকে এসব নীতি সম্পর্কে জানানো হয়। পেশাগত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে প্রতিষ্ঠানে। যখন বড় ধরনের সংবেদনশীল বিষয় বিশেষ করে নারীর বিষয় আসে, তখন সংবাদ ব্যবস্থাপকেরা সভা করে কীভাবে নৈতিকতা মেনে সংবাদ প্রকাশ করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেন। সেটা প্রতিবেদক ও সহসম্পাদকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজনে গভীর রাতেও সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন ও বার্তা পরামর্শক কুররাতুল-আইন-তাহ্‌মিনার সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া হয়। 

প্রথম আলোয় মাতৃত্বকালীন ছয় মাসের ছুটি দেওয়া হয়। রাতের পালায় কাজ করার পর অফিসের নিজস্ব বাহনে বাড়িতে পৌঁছাতে পারি। অনেক সময় অ্যাসাইনমেন্টে কাজের ফাঁকে আড্ডায় অন্য সংবাদমাধ্যমের নারীদের বেতনবৈষম্যের কথা শোনা হয়। ওয়েজ বোর্ডে চলা প্রথম আলো বেতনবৈষম্যমুক্ত। সংবাদ প্রকাশে যেমন জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তেমনি এ–সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা হয় গুরুত্বের সঙ্গে। নারী ও শিশুর খবর তুলে আনতে প্রতিবেদকের চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হয় ঢাকার বাইরে। এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিবেদন তৈরিতে মার্চে যশোর এবং তৃণমূলের নারী ও শিশুর কথা তুলে আনতে সেপ্টেম্বরে গিয়েছিলাম সাতক্ষীরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্রতিবেদন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান ও সফল নারীদের নিয়ে বিশেষ সাময়িকী প্রকাশ করা হয়।

এ বছরের একটি ঘটনা না বললে লেখাটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো আগের মতো জাতীয় সংসদে নারীর জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৫ শতাংশ মনোনয়ন দিতে সম্মত হয়। সে সময় আমাকে ফোন করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী জানান, তাঁরা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আলোচনা সভা করবেন এবং সাংবাদিক হিসেবে আমরা নারী বিষয়ে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারি, জানতে চান। বিষয়টি সম্পাদক মতি ভাইকে (সম্পাদক মতিউর রহমান) জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি সুমি আপাকে (সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন) দায়িত্ব দিলেন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য। এ বিষয়ে ৯ আগস্ট প্রথম আলো আয়োজন করে গোলটেবিল বৈঠক। এতে অংশ নেন প্রবীণ ও নবীন নারী অধিকারকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একজন সদস্যও অংশ নিয়েছিলেন। একই দিন প্রথম পাতায় ছাপা হয় ‘সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটে বাধা রাজনৈতিক দলগুলো’ শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদন। গোলটেবিল বৈঠক ও সংবাদ আলোচিতও হয়।

আছে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা

দেশে তালিকাভুক্ত দৈনিক পত্রিকা আছে ৫৮৪টি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৫২ (৩৬টি পূর্ণ সম্প্রচারে)। এই শত শত সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে ‘হাতে গোনা’র মধ্যে থাকতে পারার মধ্যে একধরনের আত্মশ্লাঘা তো থাকেই। তবে প্রথম আলোর কিছু খামতি যে নেই, তা নয়। ফোয়ো ইনস্টিটিউট-এমআরডিআই ১৪টি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়ে গবেষণায় বলেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মী মাত্র ১০ শতাংশ এবং নারী প্রতিবেদকের হার মাত্র ৬ শতাংশ। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রয়েছেন মাত্র ১৪ শতাংশ নারী। প্রথম আলো এর বাইরে নয়। তবে প্রথম আলোতে থাকার সুবাদে জানি, এই ঘাটতিগুলো পূরণের চেষ্টাও রয়েছে কর্তৃপক্ষের। কারণ, প্রথম আলো বিশ্বাস করে, প্রতিষ্ঠানে নারীর কণ্ঠ জোরালোভাবে না থাকলে সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কথা বাদ থেকে যাবে। 

প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক প্রয়াত হেলেন টমাসের একটি লাইন দিয়ে লেখাটি শেষ করছি। ২০০৫ সালে হার্স্ট নিউজপেপার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নারী হিসেবে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘পেশাগত ক্ষেত্রে সব জায়গায় এখনো নারীর প্রতি প্রকৃত বৈষম্য আছে, অনেক যুদ্ধে জয়লাভ হয়েছে, তবু কিছু লড়াই বাকি রয়েছে।’

নাজনীন আখতার: জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, প্রথম আলো

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স ব দনশ ল প রথম আল র প রথম আল য় অন ষ ঠ ন ন প রথম ব দ কত সহয গ সরক র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীকে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কার্যক্রম স্থগিত থাকায়, পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করায় (স্থগিত) আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে আসন্ন নির্বাচন, অবৈধ অভিবাসন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিমান ও নৌ খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সম্প্রসারণের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সময়মতোই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক।

প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, এই নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গত ১৬ বছরের স্বৈরতন্ত্রের সময়ে টানা তিনটি ‘কাটাছেঁড়া’ নির্বাচনের কারণে তাঁরা ভোট দিতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যক্রম স্থগিত থাকায় এবং পরে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল (স্থগিত) করায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে লাখো মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশে একটি ‘নতুন সূচনা’ করেছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন যুক্তরাজ্যের সফররত মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান। তিনি জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেন।

ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তিনি নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সরকার নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরও বেশি বাংলাদেশিকে বৈধ পথে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে উৎসাহিত করছে তাঁর সরকার।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই নেতা মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তরুণেরা আশা-আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। তাঁদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা জাহাজ কিনছে বাংলাদেশ।

ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান দুই দেশের উড়োজাহাজ যোগাযোগ আরও জোরদারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারা কুক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ