গোলটেবিল আলোচনা: অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে
Published: 14th, November 2025 GMT
আমরা সবাই বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। উন্নয়ন এখন শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও ন্যায্যতার মাপকাঠিতেও পরিমাপ করা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে অংশীজনদের মধ্যে নিয়মিত গোলটেবিল বৈঠক ও যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন আরও স্পষ্ট হয়েছে। কারণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের মূল দর্শনই হলো লিব নো ওয়ান বিহাইন্ড (কাউকে পেছনে ফেলে নয়)।
আর্থসামাজিক যেকোনো বিষয়ে যত বেশি মুক্ত আলাপ হবে, তত বেশি মুক্তবুদ্ধি চর্চার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে অংশীজনের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর তুলে ধরার লক্ষ্যে নিয়মিত গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে থাকে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের এক মঞ্চে নিয়ে আসা, যাতে তাঁদের অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণ ও সুপারিশের মাধ্যমে একটি সম্মিলিত ও কার্যকর দিকনির্দেশনা উঠে আসে।
গত এক বছরে প্রথম আলো বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে অর্ধশতাধিক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল: শিশু অধিকার, নারী অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ, মানবাধিকার, তথ্যপ্রযুক্তি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, তারুণ্যের সম্ভাবনা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি। এসব আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতার সংযোগ ঘটানো এবং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ।
গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী সংলাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে (এনজিও এবং আইএনজিও) আমরা যৌথভাবে কাজ করে চলেছি। কখনো আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা যুক্ত হয়েছে, কখনো তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে প্রচার-সহযোগী হিসেবে আমরা যুক্ত হয়েছি। প্রথম আলো যৌথভাবে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, ওয়াটারএইড, একশনএইড, ব্র্যাক, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট, ক্রিশ্চিয়ানএইড, কেয়ার, অক্সফাম, সলিডারিডাড, সেভ দ্য চিলড্রেন, সাইটসেভার্স প্রভৃতি। তাদের গবেষণা, মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত জ্ঞান গোলটেবিল বৈঠকগুলোকে বাস্তবমুখী করে তুলেছে। এ ধরনের অংশীদারত্ব প্রমাণ করে যে জাতীয় সমস্যা সমাধানে সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। সব অংশীজনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
প্রথম আলো গোলটেবিলের আলোচনার বিষয়ে আমরা প্রতিবেদন প্রকাশ করি, ক্রোড়পত্র প্রকাশ করি। অনেক ক্ষেত্রে প্রথম আলোর ইংরেজি অনলাইনেও তা প্রকাশ করে থাকি। আমরা বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমের এ ধরনের উদ্যোগ নীতিনির্ধারণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনে, জনমত গঠনে সহায়তা করে এবং অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। গণমাধ্যম হিসেবে প্রথম আলো শুধু ঘটনার বিবরণ দেওয়া নয়, বরং জাতীয় সমস্যাগুলোর মূলে প্রবেশ করে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। গোলটেবিল বৈঠক ও সংলাপের মাধ্যমে উঠে আসা সুচিন্তিত সুপারিশমালা এবং অংশীজনদের পর্যবেক্ষণ নীতিনির্ধারণী মহলে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়, যা দেশের উন্নয়নে নীতিগত পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে পারে।
২.
একটা সময় পর্যন্ত প্রথম আলোর গোলটেবিল কার্যক্রম ছিল মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। আমরা এই উদ্যোগকে রাজধানী ঢাকার বাইরে বিস্তৃত করতে চেয়েছি। কারণ, বেসরকারি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বেশির ভাগ কর্মকাণ্ড ঢাকার বাইরে পরিচালিত হয়।
গত বছরের শেষ দিকে আইসিডিডিআরবির সঙ্গে ঢাকার বাইরে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনায় চারটি গোলটেবিল বৈঠক করেছি। ওই চারটি অনুষ্ঠানের সাফল্য আমাদের ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠান আয়োজনে সাহস জুগিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের শুরু থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে গোলটেবিল আয়োজনকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ইতিমধ্যে ১১টি জেলায় অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, ক্রিশ্চিয়ানএইড, কর্মজীবী নারী ও একশনএইড তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে এসেছে। যুব অধিকার, নারী অধিকার ও সুশাসনবিষয়ক বিভিন্ন আঞ্চলিক কর্মকাণ্ডে প্রথম আলো যৌথভাবে যুক্ত হয়েছে। কখনো আমরা গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে সংলাপ আয়োজন করেছি। কখনো টাউন হল সমাবেশের মাধ্যমে যুব সংলাপ করেছি। কোথাও আবার রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণে সংলাপ আয়োজন করেছি। ঢাকার বাইরের এসব আঞ্চলিক আয়োজনে নাগরিক সমাজ ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আমরা দেখেছি, তা অভূতপূর্ব। প্রথম আলো ভবিষ্যতে গোলটেবিল বৈঠক ও এ ধরনের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে আরও ছড়িয়ে দিতে চায়।
ফিরোজ চৌধুরী : সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ব সরক র উদ য গ লক ষ য অ শ জন
এছাড়াও পড়ুন:
‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় কাউকে গ্রেপ্তার করা ঠিক নয়: কাদের সিদ্দ
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘‘জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় কাউকে গ্রেপ্তার করা ঠিক নয়। বঙ্গবন্ধুর ঘরবাড়ি ভাঙা ঠিক হয়নি। এটা প্রতিহতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এটা তো একতরফা কাজ।’’
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ছাতিহাটিতে মা-বাবার কবর জিয়ারত শেষে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘‘বিএনপি ভালো-খারাপ যাই হোক প্রচুর মানুষ রয়েছে। কিন্তু একতরফা নির্বাচন হলে ভালো হবে না। গুরুত্বসহকারে কাজ করলে কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু আগে থেকেই যদি পরিকল্পনা করে রাখা হয়, নিজেদের ইচ্ছে মত ফলাফল বের করবেন; তাহলে প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে।’’
ঢাকা/কাওছার/রাজীব