কয়েক দিন আগেও যাঁর শারীরিক ও মানসিক হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল, সেই নীতীশ কুমারই দশমবারের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গণনার গতিপ্রকৃতি অপরিবর্তিত থাকলে ২৪৩ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় নীতীশ নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট দুই শতাধিক আসনে জয়ী হতে চলেছে।

এই বিপুল জয়ের ইঙ্গিত বুথফেরত সমীক্ষাতেও ছিল না। দুটি সংস্থা এনডিএ ও বিরোধীদের মহাজোটের মধ্যে ক্ষুরধার লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিল। বাকিদের সমীক্ষার ইঙ্গিত ছিল এনডিএর পক্ষে। তাদের হিসাবমতো, এনডিএ জোটের পাওয়ার কথা ১৩০ থেকে ১৬৭ আসন।

অথচ দেখা গেল, ২০ বছর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও নীতীশের ভাবমূর্তি অমলিন। সমর্থনে ভাটা পড়া তো দূরের কথা, বরং বেড়েছে। ২০১০ সালে জেডিইউ ও বিজেপি জোট পেয়েছিল ২০৬ আসন। সর্বশেষ খবরে ১৫ বছর পর এনডিএ জোট এবারও সেই ২০৬ আসনে জিততে চলেছে।

সাম্প্রতিক কালে এমন অবিশ্বাস্য জয়ের নমুনা বিজেপি বারবার দেখাচ্ছে। প্রথমে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়, তারপর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা এবং সর্বশেষ এবার বিহার। ভোটপণ্ডিতদের সব হিসাব মিথ্যা করে দিয়ে বিজেপি জয়ের এই অবিশ্বাস্য ধারা অব্যাহত রেখেছে।

বিজেপির এই বিস্ময়কর সাফল্য ভারতের নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রশ্ন ও সন্দেহের মুখে দাঁড় করালেও ঘটনা হলো, বিরোধীদের কোনো প্রতিরোধই বিজেপির বিজয়রথ থামাতে পারছে না।

নির্বাচন কমিশনের কারণে এবার বিহারের নির্বাচনও বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। ভোট গ্রহণের মুখোমুখি ইসি ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করে। বাদ যায় ৪৭ লাখ ভোটারের নাম।

বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ভোটের আগে ওই সংশোধন প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য ছিল বিজেপি–জেডিইউয়ের জোটকে জেতানো। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভোট চুরির অভিযোগও আনেন। বলেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপির হয়ে ভোট চুরি করছে।

রাহুল ও আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বিহারে ভোট অধিকার যাত্রাতেও শামিল হন। ভোট গণনা পর্বে দেখা যাচ্ছে আরজেডি–কংগ্রেস–বামপন্থীদের সেই অভিযোগে আমল না দিয়ে রাজ্যের মানুষ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নীতীশ কুমার ও জোট হিসেবে এনডিএর ওপরই ভরসা রেখেছে।

পাঁচ বছর আগে বিধানসভায় ১ নম্বর দল ছিল আরজেডি। তারা পেয়েছিল ৭৫ আসন। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। তারা ৭৪ আসন জিতেছিল। জেডিইউ পেয়েছিল ৪৩ আসন। এবার বিজেপি ও জেডিইউ দুই দলই ১০১টি করে আসনে লড়েছে। বিজেপি জিততে চলেছে ৯৫টি আসন, জেডিইউ ৮২টি, চিরাগ পাসোয়ানের দল এলজেপি ২৯টি আসনে লড়াই করে পেতে চলেছে ২০টি আসন।

সে জায়গায় আরজেডির আসন গত বছরের ৭৫ থেকে নেমে এসেছে ২৫ আসনে। কংগ্রেস গতবার পেয়েছিল ১৯টি আসন। এবার পেতে চলেছে তিনটি। বিকেল পর্যন্ত গণনার গতি প্রকৃতি দেখে মনে করা হচ্ছে, বিরোধী মহাজোটের পক্ষে ৪০ পেরোনো কঠিন হতে পারে।

২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও এনডিএর এই অবিশ্বাস্য ‘স্ট্রাইক রেট’–এর কারণ একাধিক। প্রথমত, জাতভিত্তিক বিহারে এনডিএর শরিকেরা অধিকাংশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। দ্বিতীয়ত, গতবার বাইরে থাকা চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি এবার জোটের অংশীদারই শুধু হয়নি, বাড়তি আসন আদায় করে নিজের শক্তি জাহির করেছে। তৃতীয়ত, ভোটের ঠিক আগে নারীদের স্বনির্ভর করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্যোগে রাজ্যের ১ কোটি ৩৭ লাখ নারীর ব্যাংক খাতায় ১০ হাজার রুপি করে জমা করা হয়।

এই সিদ্ধান্ত; অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী নারী রোজগার যোজনা এত সাড়া ফেলেছে যে জাতপাতের আগল ভেঙে বিহারি রমণীরা বিজেপি–জেডিইউকে সমর্থন উজাড় করে দিয়েছেন। নীতীশ কুমারের দলের আসন ৪৩ থেকে বেড়ে ৮০–তে পৌঁছেছে। বিপরীতে মুসলিম–যাদব–মাল্লা সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল মহাজোট শাসক জোটের মোকাবিলায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

ভোটের আগে প্রচার ছিল, ক্ষমতায় এলে বিজেপি এবার নীতীশের জায়গায় তাদের কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করবে। এই অবিশ্বাস্য ফলের পর নীতীশকে উপেক্ষা করা বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যের কারণে নিজে থেকে সরে না গেলে রাজ্যে ১ নম্বর দল হওয়া সত্ত্বেও বিজেপিকে নীতীশ কুমারের অনুগত থাকতে হবে। তা ছাড়া কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও জেডিইউয়ের ওপর নির্ভরশীল। নীতীশকে কোণঠাসা করতে গেলে মোদি সরকারকে বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে।

এখন নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিহারের সাফল্যের পর নির্বাচন কমিশন দেশের অন্যান্য রাজ্যেও ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের কাজে গতি আনবে। বিরোধীদের ওজর আপত্তি উপেক্ষা করেই তারা এই কাজে এগোবে।

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু, পদুচেরি ও আসাম বিধানসভার ভোট। আসামে বিজেপি ক্ষমতায়। বিহারের সাফল্যের পর পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা ও পদুচেরিতেও বিজেপি আশায় বুক বাঁধবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র অব শ ব স য ক ষমত য় জ ড ইউ আরজ ড এনড এ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবসে বন্দরে র‌্যালি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বন্দরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় সহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকালে বন্দরের ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সামনে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় কর্মসূচী পালিত হয়। 

এবছরের প্রতিপাদ্য ‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন’। পরে বাদ্য বাজানা ও মোটরসাইকেলের বহর সহকারে একটি র‌্যালি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বন্দর শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সমবেত হয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও কেক কাটা হয়। 

লাইফ কেয়ার ডায়াবেটিস সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত নানা কর্মসূচির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন লাইফ কেয়ার ডায়াবেটিস সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও  নারায়ণগগঞ্জ নাগরিক কমিটি বন্দর থানা শাখার সভাপতি ডা: ফারুক হোসেন। র‌্যালিতে নারায়ণগগঞ্জ নাগরিক কমিটি বন্দর থানা শাখা, লায়ন্স ক্লাব নারায়ণগঞ্জ গ্রেটার ও লিও ক্লাব নারায়ণগঞ্জ গ্রেটার, বন্দর সোনালী অতীত ক্লাব, সমমনা প্লাটফর্ম, বিসমিল্লাহ সমবায় সমিতি, ফারিয়া বন্দর শাখা, ইউনাইটেড নারায়ণগঞ্জ ৯৫ ব্যাচসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেয়।

ডা. ফারুক হোসেন বলেন, একটি পরিবারের কর্মক্ষম ব্যাক্তি ষদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় তাহলে তার বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের ঝূঁকি সম্পর্কে জানতে হবে।

আমাদের পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম, সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। তাই ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদেরকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানার কোন বিকল্প নেই।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ