মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সাহিত্য বা শিল্পের একটি শর্ত
Published: 14th, November 2025 GMT
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান। ২০১৪ সালে প্রকাশিত তাঁর ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো উপন্যাস সমালোচক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়। বইটি বহু ভাষায় অনূদিত হয় এবং ব্রিটেনের ‘জেমস টেইট ব্ল্যাক মেমোরিয়াল পুরস্কার’–এর মতো সম্মাননাও পান তিনি। সম্প্রতি বাংলা একাডেমিতে ‘দ্য পলিটিকস অব লিটারেচার’ শিরোনামে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তৃতা করেন। তাঁর ওই বক্তৃতানির্ভর একটি লেখা প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করে দুই পর্বে প্রকাশ করা হলো। আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব।
২০২০ সালের ৭ জুলাই হার্পারস ম্যাগাজিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে একটি খোলাচিঠি প্রকাশ করেছিল। এ চিঠির ১৫০ জন স্বাক্ষরকারী একটি বিস্তৃত রাজনৈতিক পরিসর থেকে এসেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে ছিলেন মার্গারেট অ্যাটউড, নোয়াম চমস্কি, সালমান রুশদি, স্টিভেন পিংকার, জে কে রাউলিং ও গ্লোরিয়া স্টেইনমের মতো ব্যক্তিত্ব। যেহেতু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং আমি চিঠিটির মূল বক্তব্যের সঙ্গে একমত ছিলাম, তাই আমিও স্বাক্ষরকারীদের একজন হলাম।
আমি মনে করি এটা ন্যায্যভাবেই বলা যায়, চিঠিটি সেই সময়কার ‘ক্যানসেল কালচার’ নামে পরিচিত একটি ধারণাকে লক্ষ্য করে লেখা হয়েছিল, যে শব্দবন্ধ ও ধারণাটি এখন অবশ্য বেশ সেকেলে মনে হতে পারে। কিন্তু এর প্রধান লক্ষ্য ছিল কলেজ ক্যাম্পাস, মিডিয়া এবং বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় এমন একটি সংস্কৃতি, যা নির্দিষ্ট কিছু দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল, বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির।
এর ফলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কলেজ ক্যাম্পাসে কথা বলা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল এবং অন্যদের শিক্ষাজগৎ বা উদারনৈতিক গণমাধ্যম সংস্থা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুনসাহিত্য ও রাজনীতি উভয়ের বিকাশের পূর্বশর্ত জবাবদিহির সংস্কৃতি২২ ঘণ্টা আগেএগুলো সরকারের পক্ষ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার উদাহরণ ছিল না, বরং আমার দৃষ্টিতে এবং আমার মতো কিছু প্রগতিশীল ব্যক্তির (যেমন নোয়াম চমস্কি) দৃষ্টিতেও এগুলো ছিল জবাবদিহিহীন পক্ষগুলো দ্বারা ভাবপ্রকাশের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা।
কিন্তু এসব সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে গেছে পরবর্তী সময়ের আরও গুরুতর বাস্তবতা, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে মত প্রকাশ করায় পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যম এবং অন্যান্য খাতে কর্মরত ব্যক্তিরা চাকরি হারিয়েছেন বা উপেক্ষিত হয়েছেন আর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করা হয়েছে।
এটি আমরা মূলধারার বা ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যম থেকে জানতে পারিনি, বরং রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন শক্তি-ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জেনেছি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার এই সংকোচন এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও বেড়েছে। কিন্তু এটি শুরু হয়েছিল এবং এখনো অব্যাহত রয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরের পক্ষগুলোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রধানত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা।
আবারও বলছি, এই প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের কাছে জবাবদিহি করে না, যদিও জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে যে এখন জনগণ মূলত ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে; বরং তারা (প্রতিষ্ঠানগুলো) কেবল সেই পক্ষগুলোর কাছেই জবাবদিহি করে যারা অর্থের জোগান দেয়।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান। ২০১৪ সালে প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস ‘ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো’।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সাহিত্য বা শিল্পের একটি শর্ত
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান। ২০১৪ সালে প্রকাশিত তাঁর ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো উপন্যাস সমালোচক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়। বইটি বহু ভাষায় অনূদিত হয় এবং ব্রিটেনের ‘জেমস টেইট ব্ল্যাক মেমোরিয়াল পুরস্কার’–এর মতো সম্মাননাও পান তিনি। সম্প্রতি বাংলা একাডেমিতে ‘দ্য পলিটিকস অব লিটারেচার’ শিরোনামে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তৃতা করেন। তাঁর ওই বক্তৃতানির্ভর একটি লেখা প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করে দুই পর্বে প্রকাশ করা হলো। আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব।
২০২০ সালের ৭ জুলাই হার্পারস ম্যাগাজিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে একটি খোলাচিঠি প্রকাশ করেছিল। এ চিঠির ১৫০ জন স্বাক্ষরকারী একটি বিস্তৃত রাজনৈতিক পরিসর থেকে এসেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে ছিলেন মার্গারেট অ্যাটউড, নোয়াম চমস্কি, সালমান রুশদি, স্টিভেন পিংকার, জে কে রাউলিং ও গ্লোরিয়া স্টেইনমের মতো ব্যক্তিত্ব। যেহেতু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং আমি চিঠিটির মূল বক্তব্যের সঙ্গে একমত ছিলাম, তাই আমিও স্বাক্ষরকারীদের একজন হলাম।
আমি মনে করি এটা ন্যায্যভাবেই বলা যায়, চিঠিটি সেই সময়কার ‘ক্যানসেল কালচার’ নামে পরিচিত একটি ধারণাকে লক্ষ্য করে লেখা হয়েছিল, যে শব্দবন্ধ ও ধারণাটি এখন অবশ্য বেশ সেকেলে মনে হতে পারে। কিন্তু এর প্রধান লক্ষ্য ছিল কলেজ ক্যাম্পাস, মিডিয়া এবং বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় এমন একটি সংস্কৃতি, যা নির্দিষ্ট কিছু দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল, বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির।
এর ফলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কলেজ ক্যাম্পাসে কথা বলা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল এবং অন্যদের শিক্ষাজগৎ বা উদারনৈতিক গণমাধ্যম সংস্থা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
আরও পড়ুনসাহিত্য ও রাজনীতি উভয়ের বিকাশের পূর্বশর্ত জবাবদিহির সংস্কৃতি২২ ঘণ্টা আগেএগুলো সরকারের পক্ষ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার উদাহরণ ছিল না, বরং আমার দৃষ্টিতে এবং আমার মতো কিছু প্রগতিশীল ব্যক্তির (যেমন নোয়াম চমস্কি) দৃষ্টিতেও এগুলো ছিল জবাবদিহিহীন পক্ষগুলো দ্বারা ভাবপ্রকাশের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা।
কিন্তু এসব সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে গেছে পরবর্তী সময়ের আরও গুরুতর বাস্তবতা, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে মত প্রকাশ করায় পশ্চিমা বিশ্বের গণমাধ্যম এবং অন্যান্য খাতে কর্মরত ব্যক্তিরা চাকরি হারিয়েছেন বা উপেক্ষিত হয়েছেন আর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করা হয়েছে।
এটি আমরা মূলধারার বা ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যম থেকে জানতে পারিনি, বরং রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন শক্তি-ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জেনেছি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার এই সংকোচন এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও বেড়েছে। কিন্তু এটি শুরু হয়েছিল এবং এখনো অব্যাহত রয়েছে রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরের পক্ষগুলোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রধানত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা।
আবারও বলছি, এই প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের কাছে জবাবদিহি করে না, যদিও জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে যে এখন জনগণ মূলত ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে; বরং তারা (প্রতিষ্ঠানগুলো) কেবল সেই পক্ষগুলোর কাছেই জবাবদিহি করে যারা অর্থের জোগান দেয়।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান। ২০১৪ সালে প্রকাশিত তাঁর উপন্যাস ‘ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো’।