দিল্লিতে বিস্ফোরণের পর ভারতে আবার ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, কাশ্মীরে চলছে ধরপাকড়
Published: 14th, November 2025 GMT
ভারতের দিল্লির একটি জনাকীর্ণ সড়কে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনার ২৬ দিন আগে নওগামে একটি সবুজ শিরোনামযুক্ত প্যাম্ফলেট দেখা গিয়েছিল। নওগাম হলো ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি নিরিবিলি এলাকা। ওই পোস্টারে ভাঙা ভাঙা উর্দুতে পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, পোস্টারটি ওই সংগঠনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত।
প্যাম্ফলেটের ভাষা ছিল হুমকিতে পূর্ণ। সেখানে কাশ্মীরে অবস্থানরত ভারতীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া স্থানীয় জনগণের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।
প্যাম্ফলেটে লেখা ছিল, ‘স্থানীয় মানুষের মধ্যে যারা এই সতর্কবার্তা মেনে চলবে না, তাদের বিরদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
এতে শ্রীনগর ও জম্মুর মধ্যবর্তী মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী দোকানদারদেরও সতর্ক করা হয়েছিল। সরকারি বাহিনীগুলোকে আশ্রয় দিলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল।
একসময় এ ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়াটা সাধারণ ঘটনা ছিল। বিশেষ করে ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আন্দোলন যখন তুঙ্গে ছিল এবং স্থানীয় ও পাকিস্তান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাত তখন এ ধরনের ঘটনা দেখা যেত।
২০১৯ সালের আগস্টে ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে। রাজ্য হিসেবে এটির স্বীকৃতি বাতিল করে এবং এটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে এমন পোস্টার দেখা যাওয়ার ঘটনা অনেকটাই বিরল হয়ে গিয়েছিল। সশস্ত্র সহিংসতাও কমেছিল।
দক্ষিণ এশিয়ায় হামলা নিয়ে কাজ করা সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সশস্ত্র হামলার সংখ্যা ছিল ৫৯৭। আর ২০২৫ সালে তা ১৪৫-এ নেমে আসে।
সম্প্রতি নওগামে নতুন করে প্যাম্ফলেট দেখা যাওয়ার পর তিন সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। তদন্তে বলা হয়েছিল, একাধিক ব্যক্তি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। এর মধ্যে উমর নবী নামের এক চিকিৎসকও ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, গত সোমবার নয়াদিল্লিতে মুঘল আমলের ঐতিহাসিক স্থাপনা লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরিত হওয়া গাড়িটি তিনিই চালাচ্ছিলেন।
এ ঘটনায় এবং ভারতের অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনগুলো ইসলামবিদ্বেষ ও কাশ্মীরবিরোধী মনোভাবের নতুন ঢেউ তৈরি করেছে।
নওগামে প্যাম্ফলেটের উৎস খুঁজতে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণে মনোযোগ দেন। ফুটেজে যা দেখা যায়, তার ভিত্তিতে তাঁরা কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করেন। এর মধ্যে দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলার এক ইসলামী চিন্তাবিদও আছেন। এক পুলিশ কর্মকর্তা আল–জাজিরাকে এ তথ্য দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় ওই কর্মকর্তা তাঁর নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
সম্প্রতি নওগামে নতুন করে প্যাম্ফলেট দেখা যাওয়ার পর তিন সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তল্লাশি অভিযানের চালানো হয়। তদন্তে বলা হয়েছিল, একাধিক ব্যক্তি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। এর মধ্যে উমর নবী নামের এক চিকিৎসকও ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, গত সোমবার নয়াদিল্লিতে মুঘল আমলের ঐতিহাসিক স্থাপনা লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরিত হওয়া গাড়িটি তিনিই চালাচ্ছিলেন।আটক ২৪ বছর বয়সী ইসলামী চিন্তাবিদের নামে ইরফান আহমেদ। তিনি শ্রীনগরের একটি স্থানীয় মসজিদের পেশ ইমাম। আর ওই শ্রীনগরেই পোস্টারগুলো দেখা গিয়েছিল।
ইরফানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে পুলিশের সামনে আসে আরেকটি নাম: আদিল রাঠোর। তিনি কুলগামের ওয়ানপোরা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামটি শ্রীনগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে।
পুলিশ রাঠোরের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পায়নি। পরে তাঁকে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর শহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সেখানকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করছিলেন।
পুলিশ দাবি করেছে, তারা জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজে রাঠোরের লকারে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল পেয়েছে। রাঠোর ওই কলেজে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
এদিকে রাঠোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেরিয়ে আসে আরেক সহযোগীর নাম। তিনি হলেন, আরেক কাশ্মীরি চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিল গণাই। তিনি দিল্লির কাছে ফরিদাবাদের অবস্থিত আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
ভারতীয় পুলিশের দাবি, তারা ফরিদাবাদে গণাইয়ের নামে ভাড়া নেওয়া দুটি বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে সেখান থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজি দাহ্য রাসায়নিক ও অস্ত্র উদ্ধার করেন।
কাশ্মীরে মোতায়েন ভারতীয় পুলিশ দাবি করছে, এ গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্য দিয়ে তারা এমন একটি ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’–কে উন্মোচন করতে পেরেছে–যারা জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ (এজিইউএইচ)-এর সঙ্গে যুক্ত। এজিইউএইচ হল একটি নিষিদ্ধ সংগঠন, যা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠন হিসেবে পরিচিত।
২০১৯ সালের মে মাসে সরকারি বাহিনীর গুলিতে নিহত স্থানীয় কমান্ডার জাকির রশিদ কাশ্মীরে এজিইউএইচ নামের সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই গোষ্ঠীর কার্যকলাপ অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। তবে ভারতীয় পুলিশের দাবি, প্রতিবেশী পাকিস্তান থেকে আসা নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দলটি আবার সক্রিয় হয়েছে।
পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান তদন্তের সময় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ একাধিক স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট সাতজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক গণাই ও রাঠোর, ইসলামী চিন্তাবিদ ইরফান আহমেদ এবং আরও চারজন।
এই চারজনের মধ্যে উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ শহরের এক নারীও রয়েছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, তদন্ত করতে করতে উমর নবী নামে এক কাশ্মীরি চিকিৎসক সম্পর্কেও তথ্য পেয়েছিলেন তাঁরা।
তবে নবীকে গ্রেপ্তার করার আগেই গত সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তদন্তকারীরা বলছেন, ২৯ বছর বয়সী চিকিৎসক উমর নবীই বিস্ফোরকভর্তি ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন।
আরও পড়ুনদিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন উমরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী৩ ঘণ্টা আগে‘কাশ্মীরে ব্যাপক অভিযান’
নয়াদিল্লির ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। এতে এক তরুণকে কালো মুখোশ পরে একটি গাড়ি নিয়ে দিল্লির টোল বুথ পার হতে দেখা যাচ্ছে। আরেকটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, একই গাড়ি ধীরে ধীরে যানজটে ভরা চৌরাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পরই স্ক্রিনে হলুদ আলোর ঝলকানি দেখা যায়।
বিস্ফোরণের পর দেশব্যাপী নিরাপত্তা সতর্কতা জারি হয়। কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। ১২ নভেম্বর শ্রীনগরের রাস্তায় রাস্তায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালিয়েছে তারা।
শুধু দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম জেলাতেই নিরাপত্তা বাহিনী ৪০০টি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে এবং প্রায় ৫০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। বারামুল্লা, পুলওয়ামা ও অবন্তীপুরেও একই ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে।
দিল্লিতে বিস্ফোরিত গাড়ির চালক উমর নবীর পরিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার কোইল গ্রামে থাকে।
নবীর ভাবী মুজামিল আখতার বলেন, ‘গত সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ আমার দেবরকে নিয়ে গেল এবং পরে আমার স্বামীকেও। সংবাদমাধ্যম ও পুলিশকে এখানে দেখে আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা কিছুই জানতাম না।’
মুজামিল আখতার বলেন, পুলিশ নবীর মাকেও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছে।
মুজামিল আখতার, ‘আমাদের পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। আমি শুক্রবার উমরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সে স্বাভাবিক ছিল এবং বলেছিল তিন দিনের মধ্যে বাড়ি আসবে। আমরা সবাই তাঁর আসার খবর নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলাম। আমরা এরকম কিছু আশা করিনি।’
নয়াদিল্লির ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। এতে এক যুবককে কালো মুখোশ পরে একটি গাড়ি নিয়ে দিল্লির টোল বুথ পার হতে দেখা যাচ্ছে। আরেকটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, একই গাড়ি ধীরে ধীরে যানজটে ভরা চৌরাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। এরপরই স্ক্রিনে হলুদ আলোর ঝলকানি দেখা যায়।স্বজনেরা বলছেন, শ্রীনগরে স্কুল ও মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় নবী অসাধারণ ছাত্র ছিলেন। পরিবারের মানুষেরা উমরের কৃতিত্বের জন্য গর্ববোধ করতেন।
নবীর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারও কম দূরত্বে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক চিকিৎসক গণাইয়ের বাড়ির অবস্থান। সেখানে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
মুজাম্মিল গণাইয়ের বাবা শাকিল গণাই আল–জাজিরাকে বলেন, গত মঙ্গলবার পুলিশ বলেছে, তাঁদের ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফরিদাবাদ থেকে কাশ্মীরে এনেছে।
শাকিল গণাই বলেন, ‘কী ঘটছে আমরা জানতাম না। এমন কিছু ঘটতে পারে বলে আমাদের ধারণাই ছিল না।’
শাকিল গণাই বলেন, মুজাম্মিল কোইল গ্রামের স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তিনি শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মির ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস নামের প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিসিনে মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি পরে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে তিনি দুই বছর ধরে কাজ করছিলেন।
বাবা শাকিল গণাই বলেন, পুলিশ তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে এবং তার অন্য ছেলেকেও আটক করেছে।
তবে তদন্ত চলার মধ্যেই ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ইসলামবিদ্বেষ ও কাশ্মীরবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১২ নভেম্বর ভারতের গুরুগাঁও শহরের পুলিশ হাউজিং সোসাইটিগুলোকে ডেকে কাশ্মীরি বাসিন্দাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেয়। এতে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুনদিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণে কাশ্মীরে গ্রেপ্তারকৃতদের যোগসাজশ খতিয়ে দেখছে পুলিশ৯ ঘণ্টা আগেভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও সম্প্রতি কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ দিল্লি ও নয়ডার মতো শহরে বসবাসকারী কাশ্মীরি ভাড়াটিয়াদের বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
কাশ্মীরি ছাত্র এবং অধিকারকর্মী নাসির খুয়েহামি বলেন, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কাশ্মীরি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের বর্তমান উদ্বেগ মূলত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়াদিল্লির বিস্ফোরণ এবং এ ঘটনার তদন্তের মধ্য দিয়ে কাশ্মীর ও সশস্ত্র গোষ্ঠী মোকাবিলায় ভারতের নীতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এখন ‘সশস্ত্র বিদ্রোহীরা’ নতুন করে আর সদস্য নিয়োগ দিচ্ছে না। পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে কাশ্মীরে সরকারি বাহিনীর হাতে নিহত সব যোদ্ধা বিদেশি নাগরিক ছিলেন।
তবে এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক।
নয়াদিল্লির ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের কার্যনির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীতে নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এমনটা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। এই চিকিৎসকেরা সহকর্মী ছিলেন। তাদের চিন্তাভাবনা হয়তো এক রকম ছিল বা তাঁরা হযতো ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে উঠেছিল। আমি এটিকে নিয়োগ বলব না, বরং সংগঠিত করা বলব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র গ ষ ঠ ব ভ ন ন এল ক শ ক ল গণ ই নয় দ ল ল র প য ম ফল ট শ র নগর র কর মকর ত করছ ল ন চ ক ৎসক হয় ছ ল র জন য ইসল ম তদন ত বলছ ন নওগ ম সতর ক র ঘটন অবস থ সরক র ধরন র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
অভিযোগ তদন্তে প্রশ্নের উত্তর পাঠাতে সময় বাড়াল ভারত সরকার
বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানির ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বা প্রতিকারমূলক শুল্ক বসাতে তদন্ত করছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ। অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পাঠানো প্রশ্নমালার আনুষ্ঠানিক উত্তর পাঠানোর সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে তারা।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের উপপরিচালক মনোজ কুমার গত বুধবার এ–সংক্রান্ত এক নোটিশে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি জানান। বাংলাদেশের পাশাপাশি একই তদন্ত নেপালের বিরুদ্ধেও হচ্ছে।
নোটিশে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ও নেপালকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্নমালার উত্তর পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে দেশগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয় নোটিশে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ গত ২১ আগস্ট ই–মেইল পাঠিয়ে ভারত ২ সেপ্টেম্বর পরামর্শ সভায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ভারতকে এক ই–মেইল বার্তায় বাংলাদেশ জানিয়েছিল পরামর্শ সভার প্রস্তুতির জন্য ৬০ দিন সময় দরকার। ভারত তার জবাব দেয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগ তদন্তে ভারতের প্রশ্নমালা পূরণ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি ডেস্ক চালু করে।
অভিযোগ তদন্তের প্রশ্নমালা পূরণ করেন মূলত রপ্তানিকারকেরা। ইতিমধ্যে কাজ এগিয়েছে বলেও জানালেন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক। তিনি আাজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও নিজেদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরবে।
পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক আরোপের তদন্ত শুরু করা হলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশি একই পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটি আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়।
ভারতের পাটকল সমিতি (আইজেএমএ) এবং এ পি মেস্তা টোয়াইন মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (এজেএমএ) যৌথ আবেদনের পর বাংলাদেশ ও নেপালের পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক বসাতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয় বিভাগটি। ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্তের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।
ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ভর্তুকি দেওয়াবিষয়ক ১২টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (ইজেড) পাটপণ্যের ওপর নানা ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয়। যে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
তদন্তের নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি পায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পায়। আর ইজেডের কারখানাগুলো ১০ বছরের কর অবকাশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি পায়। এ ছাড়া নগদ সহায়তা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।