জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো
Published: 14th, November 2025 GMT
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য যে দেশগুলো বেশি দায়ী সেই দেশগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বরাদ্দকৃত অর্থ পেয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন এবং সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো ধনী পেট্রো দেশগুলো রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং কার্বন ব্রিফ জাতিসংঘে জমা দেওয়া তথ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সরবরাহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, কীভাবে জনসাধারণের কোটি কোটি ডলার বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খরচ করা হচ্ছে।
তদন্তে একটি ব্যাপকভাবে কার্যকর ব্যবস্থা পাওয়া গেছে যা ধনী দূষণকারীদের থেকে দুর্বল দেশগুলোতে মূলধন স্থানান্তর করে, তাদের অর্থনীতি স্বচ্ছ করতে এবং একটি উষ্ণ বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে।
কিন্তু আরো দেখা গেছে যে, তহবিলের বৃহত্তম অংশের বিতরণে কোনো কেন্দ্রীয় তদারকি ছিল না। এই বিতরণ সম্পূর্ণরূপে আলাদা আলাদা দেশগুলোর বিবেচনার ভিত্তিতে ছিল। তাই এটি রাজনৈতিক স্বার্থের বিষয় ছিল এবং সবসময় যেখানে এই তহবিল যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ হয়নি।
অবশ্য সরকারি তথ্য জলবায়ু তহবিলের সব প্রাপকের সন্ধান করার জন্য যথেষ্ট বিস্তৃত নয়। তবে গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে তহবিলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ বিশ্বের ৪৪টি দরিদ্রতম দেশে গেছে, যা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসাবে পরিচিত। এর বেশিরভাগই ছিল অনুদানের পরিবর্তে ঋণের আকারে।
কিছু স্বল্পোন্নত দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পেয়েছে, যার পরিশোধের শর্ত সরকারকে আরো ঋণের ফাঁদে ঠেলে দিতে পারে। বাংলাদেশ ও অ্যাঙ্গোলার ক্ষেত্রে ঋণের অংশ ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে।
বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার জন্য দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের এক শীর্ষ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য তাদের বৃহত্তর দায়িত্ব পালন এবং সমাধানের জন্য তহবিল সরবরাহের ক্ষমতার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক জমা দেওয়া তথ্যের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ ও ২০২২ সালে কোপেনহেগেনের লক্ষ্যমাত্রা বিলম্বিতভাবে পূরণ করা হয়েছিল। ওই সময় ২০ হাজারেরও বেশি বৈশ্বিক প্রকল্পের আওতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে পেট্রো ডলারের দেশগুলোর কাছে, সেইসাথে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের কাছে।
ফ্রান্স ও কানাডার সমান মাথাপিছু জিডিপিসহ জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারক সংযুক্ত আরব আমিরাত জাপান থেকে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে যা জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আবুধাবিতে একটি অফশোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের জন্য ৬২৫ মিলিয়ন ডলার এবং দুবাইতে একটি বর্জ্য পোড়ানোর যন্ত্রের জন্য ৪৫২ মিলিয়ন ডলার।
বিশাল তেলক্ষেত্র এবং আরামকোর বেশিরভাগ মালিকানাধীনতার কারণে শীর্ষ ১০ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সৌদি আরব। এই দেশটি জাপান থেকে প্রায় ৩২৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তার বিদ্যুৎ কোম্পানিকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং একটি সৌর খামারের জন্য ৭৮ মিলিয়ন ডলার।
বলকান অঞ্চলের ছয়টি দেশ যারা ইইউতে যোগদানের আশা করছে তারা জলবায়ু অর্থায়নে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পেয়েছে। অর্থের সিংহভাগ সার্বিয়ায় গেছে, যা মাথাপিছু ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় ১০ গুণ বেশি অর্থ পেয়েছে।
প্রতিবেদনের সময়কালে ভারত ছিল এককভাবে বৃহত্তম অর্থ গ্রহণকারী, যেটি প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। একইসময় চীন পেয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার, যা বেশিরভাগই বহুপাক্ষিক ব্যাংক থেকে।
ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের জলবায়ু পরিচালক সারা কোলেনব্র্যান্ডার বলেন, “এর ফলে ইসরায়েল, কোরিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো - যারা গত ৩০ বছরে প্রচুর পরিমাণে কার্বন পদচিহ্নের কারণে ধনী দেশ হয়ে উঠেছে - তাদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে বাধ্য করছে। এটা হাস্যকর যে এই জাতীয় দেশগুলো টোগো, টোঙ্গা এবং তানজানিয়ার মতো দেশগুলোর মতো একই বিভাগে রয়ে গেছে।”
বিশ্বের কিছু দরিদ্রতম দেশ তাদের জলবায়ু তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ঋণের আকারে পায়, যদিও সতর্ক করা হয়েছে যে অনেকেই শর্তাবলী এবং সুদ পরিশোধ করতে পারে না।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জলবায়ু অর্থায়ন পরিচালক ঋতু ভরদ্বাজ বলেন, “জলবায়ু অর্থায়নের লুকানো গল্প প্রতিশ্রুতির পরিমাণে নয় বরং এর আকারে। জলবায়ু অর্থায়ন দরিদ্র দেশগুলোর উপর আর্থিক বোঝা বাড়িয়ে দিচ্ছে। দান করা অর্থ যদি একটি ছাড়ের ঋণও হয়, তবুও সেই ঋণগুলোর এমন শর্তও থাকে যা গ্রহীতার চেয়ে ঋণদাতাকেই বেশি লাভবান করতে পারে।”
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র জন য অর থ য ন ন নত দ শ র জলব য তহব ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ভোলার গ্যাস ব্যবহারে সেখানেই শিল্পাঞ্চল গড়ার চিন্তা
দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় আবিষ্কৃত তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের দুটিতে উৎপাদন শুরু হয়নি। আড়াই দশক আগে আবিষ্কৃত অন্য গ্যাসক্ষেত্রে এখন উৎপাদিত হচ্ছে সক্ষমতার অর্ধেক। সোয়া ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুত আছে এখানে। চলমান জ্বালানিসংকটের মধ্যে ভোলার গ্যাস কাজে লাগাতে নতুন করে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই গ্যাস ব্যবহার করে ভোলাতেই শিল্পাঞ্চল গড়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, ভোলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিসিক, বড় উদ্যোক্তাদের নিয়ে শিল্পাঞ্চল ও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) করার চিন্তা করছে সরকার। এর বাইরে একটি সার কারখানা নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে বড় বিনিয়োগ শুরু করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল। আরেক ব্যবসায়িক গোষ্ঠী শেলটেকও ভোলায় সিরামিক কারখানা স্থাপন করেছে। সেখানে উৎপাদন ২০১৯ সালে শুরু হয়েছে।
আজ শুক্রবার সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের ভোলা সফরের কথা রয়েছে। এ সফরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমানেরও যাওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভোলার গ্যাস ব্যবহার করা নিয়ে কয়েকটি বিকল্প রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস বাইরে নিয়ে আসা। ভোলা থেকে বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা করা যাচাই হয়েছে। বরিশাল থেকে ঢাকায় আনার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ডিসেম্বরে এ প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, এলএনজি করে জাহাজে নিয়ে আসা। এটির সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি। সিএনজি করে ঢাকায় আনা শুরু হয় গত সরকারের সময়ে। তবে যেটুকু আনার কথা, আসছে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
ভোলায় গ্যাসের চাহিদা তেমন বাড়েনি। সিলিন্ডারে ভরে জেলার বাইরে গ্যাস নেওয়া শুরু হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। দিনে আনার কথা ৫০ লাখ ঘনফুট, আসছে ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ ঘনফুট।তাই এ তিনটির চেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে—ভোলার গ্যাস স্থানীয় পর্যায়ে কাজে লাগানো। ভোলার মানুষ বাসাবাড়িতে গ্যাস–সংযোগের দাবি জানিয়ে আসছেন অনেক দিন ধরে। সরকার চাইছে, সেখানে শিল্প গড়ে তুলতে। বাসায় গ্যাস–সংযোগের চেয়েও এতে বেশি উপকৃত হবেন ভোলার মানুষ। এর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। নদীপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা কাজে লাগাতে একটি নদী বন্দর করা যেতে পারে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভোলার গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব রকমের চিন্তা করা হচ্ছে। তিন ধরনের শিল্প এলাকা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেসব শিল্পকারখানায় স্থানীয় মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভোলায় বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে কম দামে গ্যাস সরবরাহের চিন্তা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনঅব্যবহৃত পড়ে আছে ভোলার গ্যাস, থাকতে পারে ১৪৩২ বিলিয়ন ঘনফুট ২৫ অক্টোবর ২০২৫জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা। পুরোনো কারখানায় ৩০ টাকা। ভোলায় নতুন শিল্পগ্রাহকদের প্রতি ইউনিট ৩০ টাকায় গ্যাস সরবরাহের চিন্তা করা হচ্ছে। এতে পেট্রোবাংলার ক্ষতি হবে না। তবে এর জন্য বিইআরসি থেকে অনুমোদন নিতে হবে। বর্তমানে ভোলার গ্যাস প্রতি ইউনিট ১৭ টাকায় কিনে সিএনজি করে ঢাকায় সরবরাহ করছে ইন্ট্রাকো।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পের জন্য ভোলায় আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণে কোনো প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব এলে গণশুনানি করে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
ভোলার গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব রকমের চিন্তা করা হচ্ছে। তিন ধরনের শিল্প এলাকা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগভোলায় ১৯৯৫ সালে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। শাহবাজপুর থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১৮ সালে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র ভোলা নর্থ এবং ২০২৩ সালে আবিষ্কৃত ইলিশা থেকে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি।
ভোলায় গ্যাস উৎপাদনের কাজটি করছে বাপেক্স; আর বাপেক্সের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভোক্তাপর্যায়ে তা সরবরাহ করে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি বলছে, বড় গ্রাহকদের মধ্যে এখানে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, দুটি ক্যাপটিভ (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ) ও একটি শিল্পকারখানা আছে।
ভোলায় গ্যাসের চাহিদা তেমন বাড়েনি। সিলিন্ডারে ভরে জেলার বাইরে গ্যাস নেওয়া শুরু হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। দিনে আনার কথা ৫০ লাখ ঘনফুট, আসছে ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ ঘনফুট।
শিল্পপার্ক করছে প্রাণ-আরএফএল
ভোলায় সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকায় এক হাজার একর জমিতে ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে শিল্পপার্ক গড়ে তুলতে চায় প্রাণ-আরএফএল। এতে ২৫ হাজারের বেশি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হতে পারে। মূলত ভোলার গ্যাস কাজে লাগিয়েই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় তারা।
ভোলায় এক হাজার একর জমিতে ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে শিল্পপার্ক গড়ে তুলতে চায় প্রাণ-আরএফএল। এতে ২৫ হাজারের বেশি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হতে পারে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।প্রাণ-আরএফএল বলছে, দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা ঢাকা ও এর আশপাশে। গ্যাসেরও সংকট এখানে। তাই যেসব এলাকায় গ্যাস সহজলভ্য, সেখানে কারখানা করায় মনোযোগ দিচ্ছে তারা।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ৩৫ হাজার কর্মীর বিশাল শিল্পপার্ক করেছে প্রাণ। ২০২৮ সালের মধ্যে পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে ভোলার শিল্পপার্ক। হবিগঞ্জের পর এটি হবে দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পপার্ক। এটি হলে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে ভোলার গ্যাস বাইরে নেওয়ার পাইপলাইন করতে হবে না। এ ছাড়া এ বিনিয়োগের পর আরও অনেকের উৎসাহী হওয়ার এবং এতে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন শিল্প এলাকা গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হবে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগের জন্য ভোলা সম্ভাবনাময়। সেখানে তুলনামূলক কম দামে গ্যাস সরবরাহ করতে পারে সরকার। ফেরি সেবা বাড়ানো, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্যসুবিধা, ফায়ার সার্ভিসের সেবা উন্নত করা দরকার। একটি নদীবন্দর নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে বেসরকারি খাতেরও সহায়তা নিতে পারে সরকার। এতে শিল্পোদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন। ভোলার আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বদলে যাবে।
যেসব পণ্যের উৎপাদনে প্রচুর গ্যাস দরকার, প্রাণ–আরএফএল সেসব পণ্যের কারখানা করবে ভোলার শিল্পপার্কে, এর মধ্যে আছে পাইপ, ফ্লোটার, ইনজেকশন মোল্ডিং, চেয়ার, পানির ট্যাংক, টেবিল, দরজা, খেলনা, ফুটওয়্যার, সিরামিক ও গ্লাসওয়্যার। উৎপাদিত এসব পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করা হবে। একই সঙ্গে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হবে।
প্রাণ-আরএফএল কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে ১২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে। এতে নির্মাণশ্রমিকসহ এ বছরের মধ্যেই দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। আগামী বছর উৎপাদন শুরু হবে।
পণ্য পরিবহনে নদীপথ ব্যবহারের চিন্তা করছে প্রাণ-আরএফএল। এতে ভোলার কাছাকাছি পায়রা ও মোংলা বন্দরে সহজেই পণ্য নেওয়া যাবে। এতে সড়কের ওপর চাপ কমবে এবং এ দুটি বন্দরেরও ব্যবহার বাড়বে।
আরও পড়ুনভোলার গ্যাস নিজেরা ব্যবহার করতে চান ভোলাবাসী, পাঁচ দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ২০ এপ্রিল ২০২৫