জ্বালাও-পোড়াওয়ের রানি পালিয়ে বিদেশে আছেন: জাহিদ হোসেন
Published: 14th, November 2025 GMT
আওয়ামী লীগ দেশে আবারও জ্বালাও–পোড়াওয়ের রাজনীতি শুরু করেছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, এরাই তো সেই আওয়ামী লীগ, যারা শেরাটন হোটেলের সামনে দোতলা বাসের মধ্যে গানপাউডার দিয়ে ১২ জন সাধারণ নাগরিককে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এরাই তারা। কাজেই আজকে যারা আবারও যে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়েছে, সেই জ্বালাও-পোড়াওয়ের রানি পালিয়ে এখন বিদেশে আছেন।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর শহরের ওসমানপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির উপজেলা ও পৌর শাখা আয়োজিত এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনা মূল্যে ওষুধ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাহিদ হোসেন।
আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘(আওয়ামী লীগ) হাজার হাজার মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মেরেছে, আমার ভাই-বোনদেরকে গুম করেছে। তারপরও এদের রক্ত পিপাসা মিটে নাই। চৌদ্দ মাস না যেতেই আবারও তারা জনগণের ওপর জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে। এরা প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করে। এরা অনুশোচনা বা আত্মসমালোচনায় বিশ্বাস করে না। কোথায় তারা জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলবে যে, “আমাদের সুযোগ দিন, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” সেটি না করে বরং তাদের নেত্রী জোর গলায় বলে, “আমি কোনো অন্যায় করিনি, অন্যায় করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।” হায়রে কপাল, এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিল কে। কে বলল গুলি চালাও, কে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার অনুমোদন দিল।’
আওয়ামী লীগের ‘কুকীর্তি’ যখন একে একে বেরিয়ে আসছে, বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে, তখন তারা বিশৃঙ্খলার পাঁয়তারা করছে বলে উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। মানুষের ঐকের কাছে এসব ষড়যন্ত্রকারীরা হেরে যাবে। জনগণের যে গণঐক্য তৈরি হয়েছে, সে ঐক্য জয়যুক্ত হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুশৃঙ্খলভাবে হবে। কোনো ষড়যন্ত্রই এই নির্বাচনকে আটকে রাখতে পারবে না।
মেডিকেল ক্যাম্পে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির দিনাজপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঘোড়াঘাট পৌর শাখার সভাপতি আবদুস সাত্তার (মিলন), ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আল-মামুন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাফুজার রহমান, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মোফাজ্জল হোসেন ও পৌর যুবদলের সদস্যসচিব সজীব কবিরসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র জনগণ র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্থিতিশীলতা বিঘ্নের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়
বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এবং সেটা বেশ একটা ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে আছে। এ ছাড়া বৃহদাকারে যদি আমরা দৃষ্টি দিই, তাহলে বলতে হবে বাংলাদেশ একটা বেশ কঠিন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিপ্লবোত্তর পরিবেশে আমাদের যে ধরনের জাতীয় সংহতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে সেটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি মাত্র পথ খোলা আছে। সেটা হলো সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, রাজনৈতিক ও সমষ্টিগতভাবে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা, যাতে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারি। এটাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণ এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
ভারত থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশে তাদের সমর্থক ও কর্মীদের তাঁরা একধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এটাকে সম্পূর্ণভাবে এবং কঠোর হাতে দমন করতে হবে। কোনোভাবে এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, যাতে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়।
যেকোনো দেশে বিপ্লবোত্তর পরিবেশে বা পরিস্থিতিতে জাতীয় স্থিতিশীলতা এবং অস্থিতিশীলতার ভেতরে খুব ক্ষীণ একটা রেখা থাকে। এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা যদি কোনোভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হই, সেখান থেকে আমাদের ফিরে আসা বেশ কঠিন হবে। কাজেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বাত্মকভাবে নিজেদের কাজে নিয়োজিত থেকে এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড, যেটা আওয়ামী লীগ করার চেষ্টা করছে, সেটাকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
বর্তমানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ধরনের দুর্বলতা লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটাও একটা বড় উদ্বেগের কারণ। আমাদের পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে কাজ করতে পারছে না। গত দেড় বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে এই বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা যায়নি। এর ফলে তাদের যে কর্মদক্ষতা বা যে কর্মক্ষমতা থাকা দরকার ছিল, তার মধ্যে বড় ধরনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের যে গোয়েন্দা সক্ষমতা থাকা দরকার ছিল, সেখানেও বড় ধরনের দুর্বলতা এবং ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। কাজেই দুই ক্ষেত্রেই নজর দিয়ে খুব আশু পরিবর্তন এনে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যদি আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু মতভেদ এমন পর্যায়ে কোনোভাবে পৌঁছানো উচিত নয়, যেটা আমাদের রাজনৈতিক এবং জাতীয় স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করতে পারে। আমাদের সামনে বড় ছবিটা কী, সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। অর্থাৎ ছোটখাটো কারণে যাতে বড় ছবিটা হারিয়ে না যায়, সেটা লক্ষ রেখে আমাদের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। ছোটখাটো বিভেদের কারণে আমরা যাতে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না করি, যাতে আমাদের আসল আকাঙ্ক্ষাটা বাস্তবায়ন হওয়ার আগে হারিয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, যেকোনো বিপ্লবোত্তর পরিবেশ যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য একটা নাজুক পরিবেশ। এখানে যদি কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ