ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবং সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি জাতীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “দেশ এক সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে পাকিস্তানের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছি ভারত কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নতুন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। ক্ষমতাসীন ইউনূস সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থের অনুগত করছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারদের উৎখাত করেছে। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী শাসন আমরা দেখতে চাই না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিনে ‘গণভোটের’ জন্য ড.

ইউনূস যে প্রস্তাবনা হাজির করেছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা করেছে। সাংবিধানিক আদেশ বলবৎ করে সরকার যা করতে যাচ্ছে গণভোটের মধ্য দিয়ে তার বৈধতা হবে না। ঐকমত্যের বাইরে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।”

সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকার সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মধ্য দিয়ে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি এক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন মোড়কে পুরাতন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছে বর্তমান সরকার।”

তিনি বলেন, “সর্বগ্রাসী সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি ও উগ্র ডানপন্থা রুখতে হবে। বিকল্প বামপন্থি ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গড়তে হবে।”

সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সাবেক সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাগিব আহসান মুন্না, এসএ রশীদ, মো. আমিনুল ফরিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং ডা. দিবালোক সিংহ।

সমাবেশে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বর্ষীয়ান মার্কসবাদী চিন্তাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অসুস্থ থাকায় তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়।

সমাবেশে বন্ধুপ্রতীম রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের প্রধান উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। 

প্রান্তিক ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর সাহেব শাহ সূফী হাসান শাহ সুরেশ্বরী দিপু নূরী, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি কৃষ্ণলাল।

সমাবেশ পরিচালনা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক ও জলি তালুকদার।

সমাবেশ সভাপতির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণার দাবি জানান।

নির্বাচনে জামানতের অর্থ কমানো ও প্রার্থীদের সমতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২৪ নভেম্বর, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এছাড়াও তিনি লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তরের চুক্তি স্বাক্ষর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৬ নভেম্বর, দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

২৮ নভেম্বর ঢাকায় নারীদের রাজনৈতিক কনভেনশন এবং ২৯ নভেম্বর, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ বাম-গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল দলসমূহের উদ্যোগে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানের ঘোষণা করেন।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ হয়ে বাটা সিগন্যাল, সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা কলেজ, গাউসিয়া মার্কেট থেকে বামে ঘুরে আবারও বাটা সিগন্যাল, শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সব দলের ঐক্য ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কঠিন হবে: নাগরিক কোয়ালিশন

‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো বলে মন্তব্য করেছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘নাগরিক কোয়ালিশন’। তবে তারা মনে করছে, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া এর পূর্ণ বাস্তবায়ন দুরূহ হবে। আদেশ অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি।

বৃহস্পতিবার প্ল্যাটফর্মের পক্ষে এমন বিবৃতি পাঠিয়েছেন নাগরিক কোয়ালিশনের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর। বিবৃতিতে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ শিরোনামে গেজেট প্রকাশ করেছে। গেজেট প্রকাশের আগে আজই জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই আদেশ প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং সবাইকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ সব সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংস্কারের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণভোট আয়োজনের রূপরেখা তুলে ধরেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রণয়নকে স্বাগত জানিয়ে নাগরিক কোয়ালিশন বলেছে, এই আদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হবে। আমরা মনে করি, ইতিপূর্বে প্রকাশিত ঐকমত্য কমিশনের খসড়া প্রস্তাবের কিছু ধারা ও তফসিল (নোট অব ডিসেন্ট–সংক্রান্ত) সম্পর্কিত ব্যাপারে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যে আশঙ্কা বা আপত্তি ছিল, সেটির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়েছে।

আনুপাতিক ভোটের (পিআর) ভিত্তিতে সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন—গত মে মাসে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তুলে ধরা নাগরিক কোয়ালিশনের এ দুটি প্রস্তাব গণভোটের প্রশ্ন হিসেবে রাখা হয়েছে।

এতে প্ল্যাটফর্মটি আনন্দিত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও ভারসাম্যমূলক উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠিত হবে, যারা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আমাদের দেশে সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক উত্তরণে ভূমিকা রাখবে।

বিবৃতি বলা হয়েছে, আগামী সংসদ যাতে একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবেও কাজ করতে পারে এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট যাতে একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়—এমন দুটি বিষয়ও কোয়ালিশনের প্রস্তাবে ছিল। এগুলো সরকার গ্রহণ করায় প্ল্যাটফর্মটি আনন্দিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে কোন দলের দাবি কতটা রাখা হলো
  • গোঁজামিলের গণভোট অগ্রহণযোগ্য: বাংলাদেশ জাসদ
  • সব দলের ঐক্য ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কঠিন হবে: নাগরিক কোয়ালিশন
  • জুলাই সনদ, জাতীয় নির্বাচন, গণভোট, সংসদের উচ্চকক্ষসহ প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে যা যা আছে
  • প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আলী রীয়াজ
  • প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ
  • জাতীয় নির্বাচন, গণভোট একই দিনে: প্রধান উপদেষ্টা
  • বৈঠকে বসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ, পরে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ
  • গণভোটে ৪টির বেশি প্রশ্ন রাখার চিন্তা সরকারের