জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় আজ
Published: 17th, November 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে আজ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর এজলাস থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় হতে যাচ্ছে আজ সোমবার।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো.
এই মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) একাধিকবার বলেছে, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী সব ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ড (পরিকল্পনাকারী), হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা)।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর এজলাস থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে।গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জবানবন্দিতে বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘লেথাল উইপন’ (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে পেয়েছিলেন তিনি।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল।
এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে প্রসিকিউশন। একই সঙ্গে তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জুলাইয়ে শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর পাশাপাশি আহত জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে হস্তান্তর করতে প্রসিকিউশন আবেদন জানিয়েছে। এ ছাড়া প্রসিকিউশন মনে করে, সাবেক আইজিপি মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে ঘটনার পূর্ণ সত্য প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল যথাযথ আদেশ দেবেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস চেয়েছেন তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।
তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন।পাঁচ অভিযোগশেখ হাসিনাসহ এ মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে গতকাল রোববার এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ তাঁরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যে আদেশ দিক না কেন, প্রসিকিউশন সেটা মেনে নেবে।
এই প্রসিকিউটর বলেন, এ মামলার রায়ের যে অংশটুকু ট্রাইব্যুনাল পড়ে শোনাবেন, সেটুকু ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করেছিল বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, রায়ে যদি ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে ইন্টারপোলে আরেকটি ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করবে প্রসিকিউশন, তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য।
শেখ হাসিনাসহ এ মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।পলাতক থাকায় আপিল করতে পারবেন না শেখ হাসিনাব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। ট্রাইব্যুনাল আইনে পরিষ্কার বলা আছে, রায় দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। তবে আপিলের সুযোগ নিতে হলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আত্মসমর্পণ করতে হয়। অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি গ্রেপ্তার করতে পারে, তাহলেও আপিলের সুযোগ পান আসামি।
ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এই মামলার প্রধান আসামি একজন নারী। নারী হওয়ার কারণে আইনে বিশেষ কোনো সুবিধা তিনি পাবেন কি না?
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) জামিনের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর, বালক ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ আইনেও আলাদা কোনো প্রিভিলেজ (অগ্রাধিকার) দেওয়া হয় না। ট্রাইব্যুনাল আইনেও আলাদা কোনো প্রিভিলেজ নেই। অতএব রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তাঁর অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের গ্র্যাভিটি (গুরুত্ব) বিবেচনা করে শাস্তি দেওয়া হবে। আর মামলা প্রমাণ না হলে আসামিকে খালাস দেওয়া হবে।
আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, সরাসরি হত্যার নির্দেশ কাউকেই দেননি।
এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে শেখ হাসিনা সব কথা বলতে পারবেন। হাজির না হয়ে তিনি যেসব কথা বলবেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্যই নয়। তাঁর ভয়েস রেকর্ড (কণ্ঠস্বর) বাজিয়ে শোনানো হয়েছে উন্মুক্ত আদালতে, যা সম্প্রচার হয়েছে। সেখানে শোনা গেছে, শেখ হাসিনা নিজ মুখে এই আদেশটা (মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ) দিয়েছেন কথোপকথনের মাধ্যমে। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, কেউই স্বীকার করেনি যে তারা অপরাধী।
আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তাঁর অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের গ্র্যাভিটি (গুরুত্ব) বিবেচনা করে শাস্তি দেওয়া হবে। আর মামলা প্রমাণ না হলে আসামিকে খালাস দেওয়া হবে।ভারতে বসে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন—এ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে সরকারের ও কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে প্রসিকিউশন। এটাকে (শেখ হাসিনার বক্তব্যকে) আমলে নিচ্ছে না প্রসিকিউশন। শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
একটি মামলা: ৩৯৭ দিনের যাত্রাগণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। একই দিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এরপর চলতি বছরের ১৬ মার্চ শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও এ মামলায় আসামি করা হয়। একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এ মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে তদন্ত প্রতিবেদনে (১২ মে)। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন (শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন)। শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়। এ মামলায় গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই (১০ জুলাই) সাবেক আইজিপি মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সূচনা বক্তব্যের পর এই মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর (আজ) এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
ট্রাইব্যুনালের যাত্রা ২০১০ সালে, অনেকের মৃত্যুদণ্ডবিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু করে। এই ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার গুরুত্ব পায়। বিচার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিগত সরকার।
ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৪৪টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি মামলার রায় এসেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ের ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনই জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ের ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজনই জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় নেতা।২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও হত্যার ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও গুরুত্ব পাচ্ছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার মামলামানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট চারটি মামলা চলছে। এর মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় হতে যাচ্ছে আজ।
এ ছাড়া ২০১৩ সালের মে মাসে মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি করা হয়েছে ২১ জনকে। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে ১২ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা দুটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি ২৮ জন। আসামিদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান ২৩ জন সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। এই দুটি মামলার পরবর্তী শুনানি ২৩ নভেম্বর।
শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের সাজা দেন ট্রাইব্যুনালআদালত অবমাননার একটি মামলায় গত ২ জুলাই শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—শেখ হাসিনার এমন একটি বক্তব্যের অডিও রেকর্ড অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছিল এ বছরের শুরুর দিকে। তাঁর এমন বক্তব্য বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা উল্লেখ করে আদালত অবমাননার মামলা করেছিল প্রসিকিউশন। সেই মামলায় শেখ হাসিনাকে সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ আল ম ম ন ত ন আস ম র ব র দ ধ ও আস দ জ জ ম ন স ত র ব যবহ র শ খ হ স ন সহ ব যবহ র কর র তৎক ল ন অপর ধ র র ঘটন য় সরক র র অবস থ ন ন কর ন র হয় ছ আওয় ম ল করত প রথম আগস ট সদস য আইজ প ইসল ম বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে কেন গড়িমসি
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কারাগারকে সংশোধনাগার বলার একটা রেওয়াজ চালু হয়েছে আমাদের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। তবে বাস্তবে ঔপনিবেশিক আমলের অমানবিক পরিবেশ থেকে দেশের কারাগারগুলোকে কতটা বের করে আনা গেছে, তা নিয়ে বড় প্রশ্নই রয়ে গেছে। গাদাগাদি করে বন্দীদের রাখা, নিম্নমানের খাবার দেওয়া—কারাগারের পরিবেশ নিয়ে এমন অভিযোগ সব সময়ই ছিল। কিন্তু বন্দীদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিও যেভাবে উপেক্ষা করে আসা হচ্ছে, সেটি এককথায় অমানবিক।
কারা অধিদপ্তরের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত ৪ বছর ৯ মাসে কারাগারে মারা গেছেন ৯৩৩ জন। এর অর্থ বছরে গড়ে ১৯৬ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৫ জন বন্দী মারা গেছেন কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে। অথচ দেশের ৭৪টি কারাগারে স্থায়ী চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ২। এ তথ্যই বলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট যে কারাগারে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অবহেলা কতটা গভীর। অথচ বন্দীরা রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকেন। তাঁদের সুচিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান যথার্থই বলেছেন, কারাগারে কোনো বন্দীর অবহেলায় মৃত্যু হলে তার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। অথচ বছরের পর বছর ধরে গাদাগাদি করে বন্দী না রাখা, চিকিৎসক–সংকট কাটানো, খাবারের মান—এসব বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছে। বাস্তবে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।
দেশের ৭৪টি কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা যেখানে ৪৬ হাজার, সেখানে থাকতে হচ্ছে প্রায় ৮২ হাজার জনকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বন্দী থাকলে কারাগারের পরিবেশ কেমন হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। কারাগারে অনেক বন্দীই আছেন, যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি অসুখ যেমন হৃদ্রোগ, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও লিভারের নানাবিধ অসুখে ভুগছেন। এ ছাড়া অনেক বন্দী আছেন, যাঁদের বয়স সত্তরের বেশি। তাঁদের সবারই নিয়মিত চিকিৎসা দরকার। অথচ দুটি কারাগার বাদে বাকি ৭২টিতে কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রেষণে কারাগারগুলোতে চিকিৎসক পাঠানো হলেও তাঁরা সকাল থেকে দুপুর বা বিকেল পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা দেন। ৭৪টি কারগারের জন্য অস্থায়ী চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ১০২। প্রশ্ন হচ্ছে, এত কমসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে কীভাবে ৮২ হাজার বন্দীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব?
চিকিৎসকেরা যে কারা হাসপাতালে যেতে অনাগ্রহী, তার বাস্তব কারণও আছে। পদোন্নতির সুযোগ না থাকা, কাজের চাপ ও নন–কাডার কর্মকর্তার অধীন দায়িত্ব পালন করতে হয় বলে তাঁরা সেখানে যেতে চান না। সরকারকে অবশ্যই এই সমস্যার যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বন্দীদের চিকিৎসাসেবার সুযোগ থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না। কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে গড়মসি করা যাবে না।