বয়স, শিক্ষাদীক্ষা, অর্থ-সম্পদে স্বামীর চেয়ে এগিয়ে সামান্থা?
Published: 2nd, December 2025 GMT
অভিনেতা নাগা চৈতন্যকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সামান্থা রুথ প্রভু। ২০২১ সালে ভেঙে যায় এ সংসার। সামান্থার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর অভিনেত্রী শোবিতা ঢুলিপালারের সঙ্গে সম্পর্ক জড়ান নাগা চৈতন্য; পরে তারা সাতপাকে বাঁধা পড়েন। তবে দীর্ঘদিন একা ছিলেন সামান্থা। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পরিচালক রাজ নিদিমোরুর সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন প্রকাশ্যে আসে।
রাজ-সামান্থার প্রেম নিয়ে নানা ধরনের কানাঘুষা শোনা গেলেই মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন এই জুটি। সোমবার (১ ডিসেম্বর) গোপনে বিয়ে করেন তারা। এদিন দুপুরে বিয়ের ছবি প্রকাশ করে সবাইকে চমকে দেন সামান্থা। তারপর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই যুগল। এ জুটির বয়সের ব্যবধান, পড়াশোনা, অর্থ-সম্পদের পরিমাণ নিয়েও চলছে চর্চা। চলুন এক নজরে দেখে নিই, রাজ-সামান্থার আড়ালের গল্প—
কার অর্থ-সম্পদ বেশি?
ডেইলি জাগরণ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজ নিদিমোরুর মোট সম্পদের পরিমাণ ৮৫–৮৯ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১২-১২১ কোটি টাকা)। রাজ একাধারে পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। প্রতি সিনেমার জন্য কত টাকা পারিশ্রমিক নেন, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ফলে ধারনা করা হয়, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে এই অর্থ আয় করেছেন রাজ।
আরো পড়ুন:
গোপন বিয়ের ছবি প্রকাশ করলেন সামান্থা
সেই প্রেমিককে বিয়ে করলেন সামান্থা?
ভারতের দক্ষিণী সিনেমার সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেত্রীদের তালিকায় এক সময় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তেলেগু সিনেমার এই অভিনেত্রী। তবে বিবাহবিচ্ছেদ-শারীরিক অসুস্থতা পিছিয়ে দেয় তাকে। মানি কন্ট্রোলের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী সামান্থা রুথ প্রভুর মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০-১১০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৬-১৪৯ কোটি টাকা)।
সাধারণত, প্রতি সিনেমার জন্য ৩-৮ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন সামান্থা। তবে ‘সিটাডেল: হানি বানি’-এর জন্য ১০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। সিনেমা, ওটিটি সিরিজ, বিজ্ঞাপন থেকে এসব অর্থ আয় করেছেন সামান্থা। তাছাড়া ব্যবসায়েও বিনিয়োগ করেছেন এই অভিনেত্রী।
সামান্থা-রাজের বয়সের ব্যবধান কত?
১৯৮৭ সালের ২৮ এপ্রিল চেন্নাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন সামান্থা রুথ প্রভু। তার বয়স এখন ৩৮ বছর। অন্যদিকে, রাজ নিদিমোরু ১৯৭৯ সালের ৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স এখন ৪৬ বছর। সামান্থার চেয়ে ৮ বছরের বড় রাজ। বয়সের ব্যবধান ৮ বছর হলেও এ দম্পতির মাঝে বোঝাপড়া দারুণ বলে জানা গেছে।
রাজ-সামান্থার শিক্ষাদীক্ষা
রাজ নিদিমোরু অন্ধ্র প্রদেশের তিরুপতিতে তেলুগু-ভাষী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এসভিইউ কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বি.
তামিল নাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণ করেন সামান্থা রুথ প্রভু। তার বাবা জোসেফ প্রভু, মা নাইনেট। সামান্থার বাবা জোসেফ প্রভু তেলেগু অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। আর তার মা নাইনেট সিরিয়ান মালায়ালি। সামান্থা ছাড়াও এ দম্পতির আরো দুটো পুত্রসন্তান রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে মারা যান সামান্থার বাবা জোসেফ।
হলি অ্যাঞ্জেলস অ্যাংলো ইন্ডিয়ান হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন সামান্থা। ২০২০ সালে ক্লাস টেনের নম্বরপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। কারণ গণিতে ১০০, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯৫, ইংলিশে ৯০, বোটানিতে ৮৪, ইতিহাসে ৯১ এবং জিওগ্রাফিতে ৮৩ নম্বর পেয়েছিলেন সামান্থা। পরবর্তীতে চেন্নাইয়ের স্টেলা মেরিস কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। আরো উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সামান্থা। কিন্তু কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তা আর সম্ভব হয়নি।
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র পর ছ ন এই কর ছ ন র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ১৬ মাসে খুলনায় ট্রিপল ও ডাবলসহ ৪৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২০টি। চলতি নভেম্বর মাসেই সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার (৩০ নভেম্বর) খুলনার আদালত পাড়ায় প্রকাশ্যে দুইজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন রাতে নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় আরো এক যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
একের পর এক হত্যাকাণ্ডে ভয় আর আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা। দিন-দুপুরে আদালত এলাকার মতো জনবহুল জায়গায় হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
আরো পড়ুন:
আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি
খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
পুলিশের তথ্য বলছে, গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারের কালভার্ট এলাকায় বাড়ির মধ্যে নানি মহিতুন্নেসা (৫৫), তার নাতি মুস্তাকিম (৮) এবং নাতনি ফাতিহাকে (৬) হত্যা করা হয়। ওই রাতেই করিমনগরে নিজ বাড়ির ভেতর আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ২৭ নভেম্বর রাতে খালিশপুর ফেয়ার ক্লিনিকের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় যুবক ইমানকে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কর্মচারী মো. মহসিন শেখ লিটুর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মহানগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা খুঠিরঘাট এলাকার ওই বাড়িতে গুলিবর্ষণ হয়। তবে, কেউ আহত হননি।
গত ৯ অক্টোবর সকালে খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকায় সবুজ খান (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনার রূপসা উপজেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক (৩৪) নামে এক যুবক নিহত হন।
সে সময় রূপসা থানার ডিউটি অফিসার জনি আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “রাতে মানিক একটি ভ্যানযোগে ইলাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করেন। তারা মানিককে লক্ষ্য করে পরপর দুইটি গুলি ছোড়েন। একটি গুলি মানিকের মাথায় লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।”
এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা মহানগরীর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে প্রকাশ্যে এক যুবককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ওই যুবকের নাম নিক। তিনি নগরীর কালীবাড়ী এলাকার মন্টু দাশের ছেলে।
একের পর হত্যাকাণ্ডে উদ্বিগ্ন নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ধারাবাহিক হত্যা ও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। এছাড়া, আইনশৃখলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে গত শনিবার নগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইন অধিকার বাস্তবায়ন ফোরাম। তার একদিন পরেই রবিবার দুটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটল। এর আগে, খুলনার আদালত চত্বর থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গত ২০ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বস্তুটি পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চরমপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল খুলনা। নতুন শতাব্দির শুরুতেও তা বহাল ছিল। বোমা মেরে অথবা গুলি করে মানুষ হত্যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারান সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার দক্ষিণাঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে র্যাব গঠন করে। যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে শুরু হয় অপারেশন ক্লিনহাট, অপারেশন স্পাইডার ওয়েব। এসব অপারেশন অধিকাংশ চরমপন্থি সন্ত্রাসী নিহত ও অনেকে গ্রেপ্তার হন। ধীরে ধীরে শান্তি ফিরে আসে খুলনায়। খুলনার আইনশৃখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আবারো বিশেষ অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে। এ থেকে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।”
খুলনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি বিশেষ করে গতকাল রবিবার আদালত অঙ্গনে দিনে দুপুরে লোমহর্ষক জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু এবং সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা। আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা জোরদারসহ খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আরো কঠোর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “বেশিরভাগ হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। রবিবার দুপুরে দুই হত্যার সঙ্গে জড়িতরাও দ্রুত গ্রেপ্তার হবেন।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ