অনেকেই এখন পারসোনাল লোন বা ব্যক্তিগত ঋণের দিকে ঝুঁকছেন। সাধারণত প্রয়োজনীয় খরচ চালাতে ব্যক্তিগত ঋণ নেন অনেকে। অনেকে বাড়ি-গাড়ি কেনার জন্যও এই ধরনের ঋণ নেন।

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন শর্তে এসব ঋণ দেয়। সেগুলো ভালোভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিলে পরে ঝামেলায় পড়তে হয় না। এসব ঋণের সুদ, মাশুল, যোগ্যতা, মেয়াদ—প্রতিটি দিকই আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত ঋণ ২৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মানে, সাধারণ গ্রাহকেরা ব্যক্তিগত ঋণের দিকে ঝুঁকছেন। এবার ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় ভাবতে হবে। যেমন—

১.

সুদের হার ও মোট খরচ

পারসোনাল ঋণের বার্ষিক সুদহার ব্যাংকভেদে আলাদা হয়। এতে ভূমিকা রাখে ক্রেডিট স্কোর, পরিশোধ সক্ষমতা ও ঋণপূর্ব ইতিহাস ইত্যাদি বিবেচনায় রাখতে হবে। শুধু ঘোষিত সুদহার নয়; ঋণ প্রক্রিয়া মাশুল, আগাম পরিশোধ মাশুলসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ যোগ করে প্রকৃত ব্যয় হিসাব করতে হবে।

২. লুকানো মাশুল

সাধারণত মোট ঋণের ব্যাংকভেদে ০.৫ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত প্রক্রিয়াকরণ মাশুল হিসেবে নেওয়া হয়। আবার কেউ আগে ঋণ শোধ করতে চাইলেও মাশুল দিতে হয়। এ ছাড়া ঋণ পরিশোধের কিস্তি মিস হলে অতিরিক্ত মাশুল, আইনি জটিলতা ইত্যাদিতে পড়তে হয়।

৩. গ্রাহকের প্রোফাইল ও যোগ্যতা

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রোফাইল বা যোগ্যতা দেখে। ব্যাংক গ্রাহকের আয়-স্থিতি, চাকরির ধারাবাহিকতা এবং ডেট টু ইনকাম অনুপাত ইত্যাদি বিবেচনা করে ব্যাংক।

৪. ঋণের পরিমাণ ও মেয়াদ

কিস্তি কম রাখতে অনেকেই দীর্ঘ মেয়াদ নেন, কিন্তু এতে সুদের মোট খরচ বাড়ে। আবার কম মেয়াদে কিস্তি বাড়ে বটে, তবে মোট খরচ কমে। বড় অঙ্কের ঋণে ঝুঁকি বিবেচনায় বাড়তি সুদহার আরোপ হতে পারে। এটা ব্যাংকভেদে ভিন্ন।

৫. আগাম পরিশোধ ও নমনীয়তা

আগাম কিস্তি পরিশোধ করলে মাশুল আছে কি না—শুরুতেই জেনে নেওয়া জরুরি। যাঁরা বেতন বা সঞ্চয় হিসাব একই ব্যাংকে রাখেন, তাঁরা অনেক সময় ভালো শর্তে দর-কষাকষি করতে পারেন। পুরো ঋণ দ্রুত বন্ধ করতে চাইলে শর্ত বিস্তারিত জেনে নেওয়া দরকার।

ভোক্তাঋণ বেড়েছে ২৬ শতাংশ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে সব মিলিয়ে চলতি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ উৎপাদনমুখী খাতগুলোর অবস্থা খারাপ হলেও ভোক্তা ঋণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। গত জুনে ভোক্তা ঋণে ২৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মানুষ সংসার চালাতে ব্যক্তিগত ঋণের ওপর নির্ভর করছেন, পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডে ব্যয়ও বাড়ছে। গাড়ি ও বাড়ি কেনার ঋণেও কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

কত ঋণ মেলে

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ, ৬০ লাখ টাকার গাড়িঋণ এবং ২ কোটি টাকার আবাসন ঋণ নিতে পারেন। এগুলো মিলেই ব্যাংক খাতে ভোক্তা ঋণের হিসাব করা হয়। এসব ঋণের সুদহার এখন ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। তবে ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে।

ব্যক্তিগত ঋণের ঝুঁকি

উচ্চ সুদ, লুকানো মাশুল, কিস্তি মিস হলে ভোগান্তি ক্ষতি এবং সহজ অনুমোদনের কারণে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার ঝুঁকি—সব মিলিয়ে ব্যক্তিগত ঋণ সতর্কতার সঙ্গে নিতে হয়। প্রয়োজন হলে আর্থিক পরামর্শকের মতামত নিতে পারেন।

শেষ পর্যন্ত বিষয়টি শুধু কম সুদহার খোঁজার বিষয় নয়; ঋণের কাঠামো, মোট খরচ, ব্যক্তিগত আয়-সামর্থ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে শর্ত মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র হক র ম ট খরচ ত ঋণ ন ত ঋণ র পর শ ধ আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

একটি দল প্রকাশ্যে, আরেকটি গোপনে সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা যেই সংস্কার অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলাম, সেখানে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। একটি দল প্রকাশ্যে সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, আরেকটি দল গোপনে সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সেজন্য সংস্কার নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগের পর ২৪ জনের দেশে ফিরে আসা উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, “এনসিপি গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা একটি রাজনৈতিক দল। আমরা কখনো বলিনি গণঅভ্যুত্থান এনসিপির। যদিও এমন অভিযোগ অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু জুলাইয়ের শহীদ পরিবার, আহতদের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গ আসে কিংবা এই কারাবন্দি প্রবাসীরা এতদিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় দৌড়াচ্ছেন, কোনো অফিসে অথবা দলের কাছে গেলে তাদেরকে বলা হতো এটা এনসিপির দায়িত্ব।”

নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্র-জনতা মিলেই গণঅভ্যুত্থান সফল করেছিল। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতাদের এখানে অবদান রয়েছে, তারা রাজপথে ছিলেন। অথচ অভ্যুত্থানের ফসল নেওয়ার বেলায় কিন্তু সবাই এগিয়ে আসে। এটার ফসল বিএনপি-জামায়াত সমানভাবে নিচ্ছে। এমনকি আগামী নির্বাচনেও তারা সেই ধরনের একটা বন্দোবস্ত তৈরি করছে।”

কারাবন্দি প্রবাসীদের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “আরো আগে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। তাদের পরিবারগুলোকে বিভিন্নভাবে কষ্ট করতে হয়েছে। এই প্রবাসীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধা। তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব। সরকার পতন না হলে তারা কোনোদিন মুক্তি পেত না। নিশ্চিত ঝুঁকি জেনেও তারা রাজপথে নেমেছিল। তাদের অবদান সারাজীবন মনে রাখবো। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে আবেদন থাকবে।” 

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ