কিশোরগঞ্জে বিলাতি ধনিয়া পাতায় লাভবান কৃষক
Published: 2nd, December 2025 GMT
বিলাতি ধনিয়া বা বন ধনিয়া বা চাটনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Eryngium foetidum (এরিঞ্জিয়াম ফোটিডাম)। এটি ‘কুলান্ট্রো’ নামেও পরিচিত এবং এর সুগন্ধি পাতা চাটনি ও অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই পাতা। ভালো ফলন, বাজারে প্রচুর চাহিদা এবং ভাল দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। কৃষি বিভাগ জেলার সব উপজেলায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ দ্রুত ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।
কিশোরগঞ্জের সদরসহ ১৩ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চাষ হচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতা। ক্ষেতে থাকা এ পাতার দৃশ্য দেখতেও মনোরম। গেলো কয়েক বছর ধরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। এই পাতার ফলন পাওয়া যায় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাধারণত কৃষকরা আগস্ট মাসে জমিতে বীজ বপন করেন।
আরো পড়ুন:
কচু লতিতে ভাগ্য ফিরলো বরুড়াবাসীর
শীতকালীন সবজিতে ধামরাইয়ের কৃষকদের মুখে হাসি
কিশোরগঞ্জে চলতি বছর ৪৫০ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়ার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮৫ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকার বেশি।
বিলাতি ধনিয়া পাতা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় চাষিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এই ধনিয়া পাতার।
করিমগঞ্জ উপজেলার চরসুতারপাড় গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন ভূইয়া বলেন, “আগে তো বুঝতাম না এই পাতার রহস্য। প্রথমে নিজেরা খাওয়ার লাইগ্যা (জন্য) বাড়ির আশ-পাশেই বীজ বুনন করতাম। আর অহন দেখি, বাজারে এর অনেক চাহিদা। তাই ব্যবসার লাইগ্যা (জন্য) ক্ষেত্রে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ শুরু করছি। এটা খুবই লাভজনক, চার পাঁচ বছর ধইরাই করতাছি। আমার চাষ দেইখ্যা (দেখে) অনেকেই চাষ শুরু করছে।”
বিলাতি ধনিয়া পাতার আঁটি বাঁধায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা
তিনি আরও বলেন, “এই পাতা চাষের সুবিধা হলো-এটা বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। ব্যাপারী এসে ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যায়। এবার তিন একর জমিতে এ পাতা চাষ করেছি। খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা, আশা করছি, ৬ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হবে।”
সদর উপজেলার কলাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, “আমি প্রথমে চার শতক জমিতে ধনিয়া পাতা চাষ করেছিলাম। দেখলাম, লোকসান নাই। খুব ভালো লাভবান হয়েছি। এবার ৫০ শতক জমিতে চাষ করেছি, খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। বিক্রি হয়েছে চার লাখ টাকার। বাকি ধনিয়া পাতা বেপারিরা এসে নিয়ে যাবেন।”
সবজি ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে বিলাতি ধনিয়া পাতার প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। আমরা সরাসরি কৃষকের ক্ষেতে চলে যাই, সেখান থেকেই দরদাম করে ধনিয়া পাতা কিনি। এই পাতা ক্ষেত থেকে তুলে, ধুয়ে, বান্ডিল করে এবং বস্তায় ভরে ঢাকার কাওরান বাজার নিয়ে বিক্রি করি। এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট নিয়ে যাই। এ পাতার খুব চাহিদা।”
ক্ষেতে থাকা বিলাতি ধনিয়া পাতা
তিনি বলেন, “বাজারে এই পাতা ২০০-২৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। তবে, সময়ের হিসেবে বাজারে এই পাতার দাম ওঠা-নামা করে।”
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.
পানিতে ধুয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় বিলাতি ধনিয়া পাতা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাদিকুর রহমান বলেন, “বিলাতি ধনিয়া পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপাদেয় একটি উদ্ভিদ। যা মানুষের রক্তচাপ কমায়, রক্তের কোলস্টরল কমায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খাবার হজমে সহায়তা করে। প্রতি বছরই কিশোরগঞ্জে এই পাতার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু, এ ফসলটি খুবই লাভজনক, তাই সামনে এর চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক শ রগঞ জ এই প ত র উপজ ল র চ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
নিশ্চিত আয়ের আশায় বিনিয়োগে ঝোঁক
বাণিজ্যিক আবাসন খাতে বিনিয়োগ এখন বেশ লাভজনক হয়ে উঠছে। আধুনিক ও উচ্চপ্রযুক্তির নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে গড়া এসব স্থাপনায় একদিকে যেমন ক্রেতাদের নজর কাড়ছে; অন্যদিকে এসব স্থাপনায় বিনিয়োগ করে সবচেয়ে বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ভাড়া থেকে আয় করছেন অর্ধেকের বেশি ক্রেতা। আর অফিস কিংবা অন্য ক্রেতাদের নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাকি অংশ বিক্রি হচ্ছে।
বিনিয়োগে লাভজনক স্থাপনাদীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের নজর এখন বাণিজ্যিক স্থাপনায়। ভালো বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে অনেকেই এখন এই স্থাপনা কিনে ভাড়া দিয়ে আয় করছেন। ফলে আগের চেয়ে ক্রেতা বৃদ্ধিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা লাভজনক হয়ে উঠছে। নতুন নতুন প্রকল্প নিচ্ছে আবাসন নির্মাতা কোম্পানি। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই খাতে ক্রেতাদের অর্ধেকের বেশি হচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী। বাকি অংশ কিনছে ব্যাংক, করপোরেট অফিস এবং বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
বাণিজ্যিক স্থাপনা এখন ভাড়াকেন্দ্রিক আয়ের সবচেয়ে নিশ্চিত মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একদিকে করপোরেট ও বহুজাতিক সংস্থার প্রবৃদ্ধি, অন্যদিকে ই–কমার্স ও স্টার্টআপের বিস্তার—দুটি কারণেই শহরভিত্তিক অফিস স্পেসের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ভাড়ার হার ভালো এবং দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা একাধিক ইউনিট কিনে আয়ের পরিকল্পনা করছেন।
ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। তারা বলছে, যেসব এলাকায় করপোরেট চাহিদা বেশি—গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, উত্তরা ও পূর্বাচল—সেসব অঞ্চলে সুপরিকল্পিত কমপ্লেক্স ও সুউচ্চ ভবনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। দেশের বাণিজ্যিক স্থাপনার মূল্য ২০২৫ সাল শেষে ৭৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে—এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টা মার্কেট ইনসাইটস।
চাহিদায় বড় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ও সুউচ্চ ভবনশেখ রবিউল হক