আগাম টমেটো চাষে ‘ফিল কার্ল’ ভাইরাসের হানা, দুশ্চিন্তায় কৃষক
Published: 2nd, December 2025 GMT
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ারবেড়ি ও সুতার গোপ্টা এলাকায় আগাম টমেটো চাষ করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জমিতে ‘লিফ কার্ল’ ভাইরাসের আক্রমণে মরে যাচ্ছে গাছ। ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান চাষিরা। তাদের ভাষ্য, ফলন পাওয়ার আগেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এই ভাইরাসের বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। ঋতুর স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে অক্টোবর মাসে বৃষ্টি, দিনে অতিরিক্ত গরম ও রাতে শীত পড়ার কারণে ভাইরাসের বিস্তার দ্রুত ঘটছে। এই ভাইরাসের কারণে গাছের পাতা কোঁকড়ে যায়, পুরু হয়ে যায়, ফুল ঝরে পড়ে এবং ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
আরো পড়ুন:
৩০ হাজারের চিচিঙ্গায় লাভের আশা ২ লাখ
নেত্রকোণায় আমন কাটা শুরু, ব্যস্ত চাষির মুখে হাসি
ভাইরাস আক্রান্ত গাছগুলো তুলে মাটিতে পুঁতে দিতে বলা হয়েছে। কৃষকদের অনেকেই গাছ তুলে ফেলার ব্যাপারে অনীহা দেখাচ্ছেন।
ভবানীগঞ্জের চাষি মহিউদ্দিন জানান, তিনি এক একর জমিতে আগাম টমেটো চাষ করেছেন। প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দেড় মাস আগে রোপণ করা গাছে এখন ফুল আসতে শুরু করেছিল। আরো দেড় মাস পর ফল বিক্রির আশা ছিল। ভাইরাস আক্রমণে গাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। একই পরিস্থিতি পাশের ৮ একর জমিতে টমেটো চাষ করা কৃষক জালালের ক্ষেতেও।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ভাইরাসটির নাম ‘লিফ কার্ল ভাইরাস’। সাদা মাছির মাধ্যমে এটি এক ক্ষেত থেকে আরেক ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। এবারই প্রথম এই এলাকায় এমন সংক্রমণ দেখা গেল। কৃষকদের অনেকেই ভাইরাসটি সম্পর্কে জানতেন না, ফলে সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করতে পারেননি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জহির আহমেদ বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ভাইরাস আক্রান্ত গাছগুলো তুলে ফেলে মাটিতে পুঁতে দিতে বলা হয়েছে। তবে, কৃষকদের অনেকেই গাছ তুলে ফেলার ব্যাপারে অনীহা দেখাচ্ছেন।”
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে টমেটো চাষ হচ্ছে প্রায় ৭৭৮ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে এই সবজির আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল ক ষকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
আজকের বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা হচ্ছে না, অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ
চার দফা দাবিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে চুয়াডাঙ্গায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে গতকালের (সোমবার) বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়ে আজকের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। দুই দিন ধরে পরীক্ষা স্থগিত থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা ৮ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২৭ নভেম্বর থেকে হওয়া নির্বাচনী পরীক্ষার শেষ দিন ছিল ১৫ ডিসেম্বর। তবে শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে এসব পরীক্ষা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ১ ডিসেম্বরের পরীক্ষা হয়নি। আজকের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ নতুন করে পরীক্ষা শুরু হবে, তা–ও কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না।
আরও পড়ুনমাধ্যমিকে কর্মবিরতি, বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি ১০ ঘণ্টা আগে৩০ নভেম্বর রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে ১ ডিসেম্বরের বার্ষিক পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১ ডিসেম্বর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে বিদ্যালয়ে যায়। তারা বিদ্যালয়ের ফটকে আন্দোলনের ব্যানার ও পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেখে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক ও এসএসসি ২০২৬ ব্যাচের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষকদের কর্মবিরতির এমন ঘটনায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা। ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘোষণায় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
রুমানা ইসলাম নামের এক অভিভাবক ফেসবুকে প্রশ্ন করেন, ‘এই আন্দোলন পরীক্ষার আগে বা পরে করা যেত না?’ আরেক অভিভাবক ফারহানা শিউলীর মন্তব্য, ‘বাচ্চারা যখনই শুনছে পরীক্ষা হচ্ছে না, স্থগিত; এখন তারা আর পড়ছে না। চোখের সামনে এগুলো দেখে কী করে ধৈর্য ধরবেন অভিভাবকেরা?’ মো. ইস্রাফিল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘দাবি আদায়ের জন্য বাচ্চাদের পরীক্ষা স্থগিত করার কোনো মানেই হয় না। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষকের সম্মান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই দাবি আদায় করতে হলে রাজনৈতিক মাঠে গিয়ে আন্দোলন করুন। বেতনে না পোষালে চাকরি ছেড়ে নতুনদের সুযোগ দিন।’
আরও পড়ুন‘আগামীকালের পরীক্ষা হবে কি না, সেটাও জানতে পারছি না’১৭ ঘণ্টা আগেভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী জুনায়েদ আশরাফ আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি প্রশ্ন তোলে বলে, ‘এভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ধারাবাহিকতা নষ্ট করার কোনো মানে হয়? আপনারা কর্মসূচি পালন করবেন ভালো কথা, নবম গ্রেড নেবেন, তা–ও ভালো কথা। আমাদের পরীক্ষার পরে করলে তো সমস্যা হতো না।’
শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক পরীক্ষার্থী স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করে আগের পরীক্ষাগুলোর গড় নম্বরের ভিত্তিতে ফলাফল ঘোষণার দাবি করে। পরীক্ষার্থী হাসিবুর রহমান রাফাত বলে, ‘আর দুই দিন কর্মসূচি চললে আমরা পরীক্ষায় বসব না।’ অমি জোয়ার্দ্দার নামের এক ছাত্র দাবি করেছে, ‘১০ ডিসেম্বরের পর কোনো পরীক্ষা হবে না। প্রয়োজনে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হোক।’
আরও পড়ুন‘স্কুলে আসার পর স্যাররা বলল আজ পরীক্ষা হবে না’১৮ ঘণ্টা আগেশিক্ষার্থীরা যাতে পড়ার টেবিলে থাকে, এ জন্য শিক্ষকেরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে দাবি করেছেন ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জেসমিন আরা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করি, শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো নিয়ে একটি সন্তোষজনক সমাধান আসবে। এরপর স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।’
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চার দফা দাবিতে ১ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরবেন না।
শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ; বিদ্যালয় পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা; সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া এবং ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দু-তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
আরও পড়ুনদুই স্কুলে পরীক্ষা চলছে, বাকিগুলোয় পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি১৯ ঘণ্টা আগে