চার দফা দাবিতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে চুয়াডাঙ্গায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে গতকালের (সোমবার) বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষা হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়ে আজকের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। দুই দিন ধরে পরীক্ষা স্থগিত থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা ৮ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২৭ নভেম্বর থেকে হওয়া নির্বাচনী পরীক্ষার শেষ দিন ছিল ১৫ ডিসেম্বর। তবে শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে এসব পরীক্ষা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ১ ডিসেম্বরের পরীক্ষা হয়নি। আজকের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ নতুন করে পরীক্ষা শুরু হবে, তা–ও কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না।

আরও পড়ুনমাধ্যমিকে কর্মবিরতি, বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি ১০ ঘণ্টা আগে

৩০ নভেম্বর রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে ১ ডিসেম্বরের বার্ষিক পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১ ডিসেম্বর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে বিদ্যালয়ে যায়। তারা বিদ্যালয়ের ফটকে আন্দোলনের ব্যানার ও পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেখে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক ও এসএসসি ২০২৬ ব্যাচের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষকদের কর্মবিরতির এমন ঘটনায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা। ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘোষণায় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

রুমানা ইসলাম নামের এক অভিভাবক ফেসবুকে প্রশ্ন করেন, ‘এই আন্দোলন পরীক্ষার আগে বা পরে করা যেত না?’ আরেক অভিভাবক ফারহানা শিউলীর মন্তব্য, ‘বাচ্চারা যখনই শুনছে পরীক্ষা হচ্ছে না, স্থগিত; এখন তারা আর পড়ছে না। চোখের সামনে এগুলো দেখে কী করে ধৈর্য ধরবেন অভিভাবকেরা?’ মো.

ইস্রাফিল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘দাবি আদায়ের জন্য বাচ্চাদের পরীক্ষা স্থগিত করার কোনো মানেই হয় না। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষকের সম্মান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই দাবি আদায় করতে হলে রাজনৈতিক মাঠে গিয়ে আন্দোলন করুন। বেতনে না পোষালে চাকরি ছেড়ে নতুনদের সুযোগ দিন।’

আরও পড়ুন‘আগামীকালের পরীক্ষা হবে কি না, সেটাও জানতে পারছি না’১৭ ঘণ্টা আগে

ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী জুনায়েদ আশরাফ আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি প্রশ্ন তোলে বলে, ‘এভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ধারাবাহিকতা নষ্ট করার কোনো মানে হয়? আপনারা কর্মসূচি পালন করবেন ভালো কথা, নবম গ্রেড নেবেন, তা–ও ভালো কথা। আমাদের পরীক্ষার পরে করলে তো সমস্যা হতো না।’

শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক পরীক্ষার্থী স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করে আগের পরীক্ষাগুলোর গড় নম্বরের ভিত্তিতে ফলাফল ঘোষণার দাবি করে। পরীক্ষার্থী হাসিবুর রহমান রাফাত বলে, ‘আর দুই দিন কর্মসূচি চললে আমরা পরীক্ষায় বসব না।’ অমি জোয়ার্দ্দার নামের এক ছাত্র দাবি করেছে, ‘১০ ডিসেম্বরের পর কোনো পরীক্ষা হবে না। প্রয়োজনে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হোক।’

আরও পড়ুন‘স্কুলে আসার পর স্যাররা বলল আজ পরীক্ষা হবে না’১৮ ঘণ্টা আগে

শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ার টেবিলে থাকে, এ জন্য শিক্ষকেরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে দাবি করেছেন ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জেসমিন আরা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করি, শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো নিয়ে একটি সন্তোষজনক সমাধান আসবে। এরপর স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।’

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চার দফা দাবিতে ১ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরবেন না।

শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ; বিদ্যালয় পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা; সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া এবং ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দু-তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।

আরও পড়ুনদুই স্কুলে পরীক্ষা চলছে, বাকিগুলোয় পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি১৯ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র থ পর ক ষ গ ল ১ ড স ম বর শ ক ষকদ র র পর ক ষ ক পর ক ষ ম বর র ফ সব ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু

গোপালগঞ্জে কথা বিশ্বাস (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিজ বাড়ির ঘরের ভেতর থেকে ওই তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় শোক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। পুলিশ বলেছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) ভোর রাত ৩টার দিকে জেলা শহরের মোহাম্মদপাড়া কমিশনার রোডে এ ঘটনা ঘটে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত তরুণী কথা বিশ্বাস জেলা শহরের মোহাম্মদপাড়া কমিশনার রোডে প্রভাত বিশ্বাসের মেয়ে ও প্রিন্স বৈদ্যের স্ত্রী।

ওসি মো. শাহ আলম জানান, ভোরে নিজ ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় কথাকে দেখতে পায় স্বামী প্রিন্স বৈদ্য। এসময় তিনি চিৎকার দিলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসে কথাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশকে জানালে সদর থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদেন্তর জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা নিশ্চিত নয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও জানান ওসি।

নিহত কথার পরিবার জানায়, কথার স্বামী প্রিন্স একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। মাত্র চার মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ও বিবাদ চলছিল।

ঢাকা/বাদল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সমাধানে প্রয়োজন জরুরি উদ্যোগ
  • এসএসসি ও এইচএসসিতে নম্বর বাড়ানোর সংস্কৃতি ফিরবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা
  • গোপালগঞ্জে এসএসসি পরীক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু