‘জজের মা’ ডাক শোনার আনন্দ মিলিয়ে গেল কান্নায়
Published: 2nd, December 2025 GMT
নওগাঁর মমতাজ বেগম। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ এক গৃহিণী। ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন। ১৭তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে তাঁর বড় ছেলে মাহমুদুল হোসেন মুন্নার নাম আসতেই পাড়াপ্রতিবেশীরা তাঁকে ‘জজের মা’ বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন। ছেলের সাফল্যে গর্বে বুক ভরে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে মমতাজ বেগমের সেই আনন্দ এখন শুধুই বিষাদ।
গত ২৭ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয় সহকারী জজ নিয়োগের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে। সেখানে সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ জনের মধ্যে স্থান হয়নি মাহমুদুল হোসেনের। কেন বাদ পড়েছেন, এর কোনো যৌক্তিক কারণও উল্লেখ করা হয়নি। সেই থেকে মমতাজ বেগমের কান্না আর থামছে না। রাষ্ট্রের কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘তাঁদের চোখের জলের কি কোনো মূল্য নেই?’
শুধু মমতাজ বেগমের ছেলে নন, ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। অভিযোগ উঠেছে, সংবিধান, মেধা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা উপেক্ষা করে ‘নেতিবাচক’ পুলিশি প্রতিবেদনের পুরোনো প্রথা মেনেই আটকে দেওয়া হয়েছে তাঁদের নিয়োগ।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কোর্স, আবেদনসহ জেনে নিন সব৫ ঘণ্টা আগে১৩ জন প্রার্থীর নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়নি। অস্পষ্ট পুলিশি প্রতিবেদন থাকার কারণে পুনরায় মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগ কিছুদিন পরে হলেও তা সিনিয়রিটিতে ব্যাঘাত করবে নাআসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা স্বপ্নভঙ্গ ও পারিবারিক হাহাকারমমতাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। ওদের বাবা একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। টানাটানির সংসারে ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব দুঃখ ভুলে থাকতাম। ছেলেরাও আমাদের আশাহত করেনি। বড় ছেলে এসএসসি ও এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়। রাজনৈতিক দলাদলি অপছন্দ বলে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠেনি। টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালিয়েছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার সোনার ছেলে মেধার স্বাক্ষর রেখে জজের পরীক্ষায় টিকল, আর এখন শুনছি পুলিশ নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা রাজনীতির সাতেপাঁচে কোনো দিন ছিলাম না। তবু কেন এই অপরাজনীতির শিকার হতে হলো? জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছোট ছেলেকে ঘরে আটকে রাখিনি। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও মিছিলে পাঠিয়েছি.
বাদ পড়া মাহমুদুল হোসেন মুন্না বলেন, ‘নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। চূড়ান্তভাবে সফলও হয়েছিলাম। কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও আমাকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো, তা মেনে নেওয়া কঠিন। মা–বাবার মুখের দিকে এখন তাকাতে পারছি না।’
রাষ্ট্রীয় অসংগতির এক নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইমন সৈয়দের ঘটনায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোয় যখন অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন, তখন তরুণ আইনজীবী সাইমন প্ল্যাকার্ড হাতে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘চট্টগ্রামে কোনো এইচএসসি পরীক্ষার্থী কারাগারে থাকলে দ্রুত যোগাযোগ করুন। জুলাই যোদ্ধাদের সম্পূর্ণ বিনা ফিতে মুক্ত করব ইনশা আল্লাহ।’
অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের আমলেও জজ নিয়োগের গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন সাইমন। এর আগে চারবার মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। পঞ্চমবারের চেষ্টায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে আর্থিক লেনদেনের যে গুঞ্জন শোনা যায়, সাইমনের বাদ পড়া সেই সন্দেহকেই জোরালো করছে।
আরও পড়ুনসহকারী শিক্ষক নিয়োগে আবেদন সাড়ে ৭ লাখ, প্রতি পদে ৭৩ প্রার্থী, পরীক্ষা কবে২৬ নভেম্বর ২০২৫পুরোনো বৃত্তেই আটকে আছে পুলিশ ভেরিফিকেশনগেজেটভুক্ত না হওয়া আরেক প্রার্থী অনিক আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ট্যাগ এড়াতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জীবন মেসে কাটিয়েছি। হলে উঠিনি। তবু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ধুয়া তুলে আমাকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে লিখিত এবং চলতি বছরের শুরুতে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১০২ জনকে চূড়ান্ত সুপারিশ করে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। দীর্ঘ ১০ মাস পর গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় যে গেজেট প্রকাশ করে, সেখানে ৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মানববন্ধনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক পর ক ষ স ইমন
এছাড়াও পড়ুন:
‘জজের মা’ ডাক শোনার আনন্দ মিলিয়ে গেল কান্নায়
নওগাঁর মমতাজ বেগম। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ এক গৃহিণী। ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন। ১৭তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে তাঁর বড় ছেলে মাহমুদুল হোসেন মুন্নার নাম আসতেই পাড়াপ্রতিবেশীরা তাঁকে ‘জজের মা’ বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন। ছেলের সাফল্যে গর্বে বুক ভরে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে মমতাজ বেগমের সেই আনন্দ এখন শুধুই বিষাদ।
গত ২৭ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয় সহকারী জজ নিয়োগের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে। সেখানে সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ জনের মধ্যে স্থান হয়নি মাহমুদুল হোসেনের। কেন বাদ পড়েছেন, এর কোনো যৌক্তিক কারণও উল্লেখ করা হয়নি। সেই থেকে মমতাজ বেগমের কান্না আর থামছে না। রাষ্ট্রের কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘তাঁদের চোখের জলের কি কোনো মূল্য নেই?’
শুধু মমতাজ বেগমের ছেলে নন, ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। অভিযোগ উঠেছে, সংবিধান, মেধা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা উপেক্ষা করে ‘নেতিবাচক’ পুলিশি প্রতিবেদনের পুরোনো প্রথা মেনেই আটকে দেওয়া হয়েছে তাঁদের নিয়োগ।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কোর্স, আবেদনসহ জেনে নিন সব৫ ঘণ্টা আগে১৩ জন প্রার্থীর নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়নি। অস্পষ্ট পুলিশি প্রতিবেদন থাকার কারণে পুনরায় মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগ কিছুদিন পরে হলেও তা সিনিয়রিটিতে ব্যাঘাত করবে নাআসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা স্বপ্নভঙ্গ ও পারিবারিক হাহাকারমমতাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। ওদের বাবা একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। টানাটানির সংসারে ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব দুঃখ ভুলে থাকতাম। ছেলেরাও আমাদের আশাহত করেনি। বড় ছেলে এসএসসি ও এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়। রাজনৈতিক দলাদলি অপছন্দ বলে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠেনি। টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালিয়েছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার সোনার ছেলে মেধার স্বাক্ষর রেখে জজের পরীক্ষায় টিকল, আর এখন শুনছি পুলিশ নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা রাজনীতির সাতেপাঁচে কোনো দিন ছিলাম না। তবু কেন এই অপরাজনীতির শিকার হতে হলো? জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছোট ছেলেকে ঘরে আটকে রাখিনি। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও মিছিলে পাঠিয়েছি...। কিন্তু আমার ছেলের সঙ্গে যে অন্যায় হলো, তার প্রতিকার কে করবে?’
বাদ পড়া মাহমুদুল হোসেন মুন্না বলেন, ‘নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। চূড়ান্তভাবে সফলও হয়েছিলাম। কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও আমাকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো, তা মেনে নেওয়া কঠিন। মা–বাবার মুখের দিকে এখন তাকাতে পারছি না।’
রাষ্ট্রীয় অসংগতির এক নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইমন সৈয়দের ঘটনায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোয় যখন অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন, তখন তরুণ আইনজীবী সাইমন প্ল্যাকার্ড হাতে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘চট্টগ্রামে কোনো এইচএসসি পরীক্ষার্থী কারাগারে থাকলে দ্রুত যোগাযোগ করুন। জুলাই যোদ্ধাদের সম্পূর্ণ বিনা ফিতে মুক্ত করব ইনশা আল্লাহ।’
অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের আমলেও জজ নিয়োগের গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন সাইমন। এর আগে চারবার মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। পঞ্চমবারের চেষ্টায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে আর্থিক লেনদেনের যে গুঞ্জন শোনা যায়, সাইমনের বাদ পড়া সেই সন্দেহকেই জোরালো করছে।
আরও পড়ুনসহকারী শিক্ষক নিয়োগে আবেদন সাড়ে ৭ লাখ, প্রতি পদে ৭৩ প্রার্থী, পরীক্ষা কবে২৬ নভেম্বর ২০২৫পুরোনো বৃত্তেই আটকে আছে পুলিশ ভেরিফিকেশনগেজেটভুক্ত না হওয়া আরেক প্রার্থী অনিক আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ট্যাগ এড়াতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জীবন মেসে কাটিয়েছি। হলে উঠিনি। তবু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ধুয়া তুলে আমাকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে লিখিত এবং চলতি বছরের শুরুতে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১০২ জনকে চূড়ান্ত সুপারিশ করে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। দীর্ঘ ১০ মাস পর গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় যে গেজেট প্রকাশ করে, সেখানে ৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মানববন্ধন