বিকলাঙ্গ নগর তৈরি হচ্ছে, স্থপতি ইকবাল হাবিব
Published: 2nd, December 2025 GMT
অব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন ও দীর্ঘদিনের ভুল নীতির কারণে ‘বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরির নগরায়ণ’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ‘নগরজীবনের অভিঘাত ও দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ দেখব, তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। আমরা বিকলাঙ্গ নগর তৈরি করছি।’
ইকবাল হাবিব বলেন, বর্তমান নগরদূষণ ও পরিবেশগত অভিঘাত শিশুর ভবিষ্যৎ বিপন্ন করছে। শিশুরা বড় হতে হতে শ্বাসকষ্ট, পেটের ব্যাধি, কান ও চোখের বড় সমস্যায় পড়ছে। এসব অসুস্থতা অনেকটা বেড়ে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, বর্তমানে বিকলাঙ্গ প্রজন্ম তৈরির নগরায়ণ হচ্ছে। নগরায়ণ হচ্ছে, কিন্তু নগর দর্শন তৈরি হচ্ছে না।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন ইকবাল হাবিব। ‘টেকসই পরিকল্পিত নগরায়ণ: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং আগামীর কর্মপন্থা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করেছে দৈনিক প্রথম আলো।
গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ভলিউমজিরো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক স্থপতি তৌফিক উৎপল, রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল লতিফ ও লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, স্থাপত্য বিভাগের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ আহমেদ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) এরাদুল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ গোপেন কুমার কুন্ডু, গবেষক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।
ইকবাল হাবিব আরও বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ণের দিক থেকে ঢাকা ইতিহাসগতভাবেই পিছিয়ে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্যার প্রবাহপথ, সংরক্ষিত জলাধার ও কৃষিজমি ধ্বংস করে অবৈধভাবে আবাসন খাতের বিস্তার ঘটেছে। সেটাই আজকের বিপর্যয়ের মূল কারণ।
পুনর্গঠন জরুরি
এ বাস্তবতায় স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, ঢাকায় আর নতুন উন্নয়ন নয়, জরুরি ভিত্তিতে পুনর্গঠন প্রয়োজন। তিনি বলেন, ঢাকার প্রায় ৬৮ শতাংশ ভবন একতলা, আরও প্রায় ১৫ শতাংশ দুই থেকে তিনতলা। অর্থাৎ বিপুল অংশই এখনো পুনর্গঠনযোগ্য। মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভবনের তুলনামূলক স্থায়ী উন্নয়ন হয়েছে। সম্ভাবনার জায়গা এখনো আছে।
ঢাকার পুনর্গঠনে পাঁচ দফা পরামর্শ দেন ইকবাল হাবিব। সেগুলো হচ্ছে—১.
ঢাকার প্রতিটি ভবনকে বার্ষিক নিরাপত্তা প্রত্যয়নের আওতায় আনলেই নগর নিরাপদ করা সম্ভব। সারা বিশ্বে এই পদ্ধতিই কার্যকর।
২. বাংলাদেশ বিল্ডিং রেকর্ড (বিবিআর) চালু করে জাতীয় ভবন কোড (বিএনবিসি) বাস্তবায়ন। ভবন অনুমোদন, নিরাপত্তা, কাঠামো বিশ্লেষণ—সবই নিয়ন্ত্রণহীন থেকে গেছে। গার্মেন্টস খাতকে আমরা তিন বছরে পরিবেশবান্ধব শিল্পে রূপ দিয়েছি। জবাবদিহির চাপ তৈরি হলে ভবন খাতেও একই পরিবর্তন সম্ভব।
৩. আরবান রেজিলিয়েন্স প্ল্যান ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপের টিডিআর (ট্রান্সফার অব ডেভেলপমেন্ট রাইটস) বাস্তবায়ন। রাজউক বিদেশি অর্থায়নে আরবান রেজিলিয়েন্স প্ল্যান করলেও তা ‘ফাইলবন্দী’ অবস্থায় পড়ে আছে। এ ছাড়া ড্যাপের আওতায় অনুমোদিত টিডিআর কার্যকর হলে পুরান ঢাকার সংকুচিত এলাকা পুনর্গঠন, খেলার মাঠ–উন্মুক্ত স্থান রক্ষা ও রাস্তা সম্প্রসারণ সম্ভব বলে জানান তিনি।
৪. পাড়া–মহল্লাভিত্তিক সিভিল ডিফেন্স পুনর্গঠন। ইকবাল হাবিব বলেন, ভূমিকম্প, আগুন বা অন্যান্য দুর্যোগে মানুষ কী করবে, সে বিষয়ে নগরবাসী এখনো অজ্ঞ।
৫. পেশাজীবীদের জবাবদিহি ও ‘ব্লক ডেভেলপমেন্ট’ মডেল চালু। স্থপতি–প্রকৌশলীদের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দায়বদ্ধতার আওতায় আনতে হবে। ঢাকার ৬৯ শতাংশ এলাকা এখনো পুনর্গঠন করা সম্ভব। নতুনভাবে উন্নয়ন ছাড়া ঢাকা বাঁচানো যাবে না।
অনুষ্ঠানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) এরাদুল হক বলেন, ঢাকার অবকাঠামো উন্নয়নে এককভাবে কোনো খাতের ওপর নির্ভর করলে চলবে না; স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, শিক্ষা, স্থিতিশীলতা—সব মিলিয়ে নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে।
সরকারের নির্দেশনায় ঢাকা নগর উন্নয়নে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এটি প্রকাশ করা হবে বলে জানান এরাদুল হক।
অতীতে রাজউকের নানা অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে এরাদুল হক বলেন, ‘এককভাবে কারও পক্ষে বেশি অনিয়ম করা সম্ভব নয়। বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করার কারণেই অনেকে রাজউকের অসাধু কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করেন। এখন আমরা আইনি সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছি।’ বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি নামের নতুন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানান তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইকব ল হ ব ব ব কল ঙ গ অন ম দ পর ব শ র জউক স থপত
এছাড়াও পড়ুন:
আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো জোড় ইজতেমা
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শুরায়ী নেজামের অধীনে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা গাজীপুরসহ আশপাশের জেলার ধর্ম পান মুসল্লীদের ঢল নামে ইজতেমা ময়দানে। দোয়ায় অংশ নেন প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মুসুল্লি।
এদিন সকাল ৮টা ৫১ মিনিটে দোয়া শুরু হয়ে ৯টা ১৩ মিনিটে শেষ হয়। আমিন আমিন ধ্বনিতে কম্পিত হতে থাকে সমগ্র টঙ্গী ময়দান। দোয়ার মুহূর্তে মাঠ জুড়ে কান্নার রোল পড়ে যায়। দোয়া পরিচালনা করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমেদ বাটলা। এবারের জোড় ইজতেমায় ২৭টি দেশ থেকে ৭৩২ জন বিদেশি মেহমান অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো- পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, ইয়েমেন, কানাডা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, আফগানিস্তান, জার্মানি, জাপান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। জোড় ইজতেমা চলাকালে ছয় জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা সমন্বয়করা।
ঢাকা/রেজাউল/এস