ইউক্রেন চুক্তি চূড়ান্ত করতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প
Published: 2nd, December 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তি চূড়ান্ত করতে হোয়াইট হাউজ ‘খুব আশাবাদী’ বলে জানানোর পর, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ মঙ্গলবার মস্কোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, পুতিন ও উইটকফের বৈঠকটি মস্কোর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরের পর হওয়ার কথা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনারও উপস্থিত থাকতে পারেন। তিনি কূটনৈতিক আলোচনায় বহিরাগত উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি রাশিয়ার
কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা: রাশিয়ার ২ ট্যাংকারে আগুন
ফ্লোরিডায় ইউক্রেনীয় ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দিনের আলোচনার পর মস্কোতে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান করতে যুক্তরাষ্ট্র যে বিতর্কিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছিল, তাতে পরিমার্জন করার জন্য ফ্লোরিডায় উইটকফ এবং কুশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে বলেছেন যে, ‘কিছু কঠিন বিষয় রয়েছে যা এখনও সমাধান করা বাকি’।
সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, খসড়া শান্তি চুক্তি ‘অনেক পরিমার্জিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “আমি মনে হয় প্রশাসন খুব আশাবাদী। কিন্তু বিস্তারিত জানার জন্য, আমি আলোচকদের আলোচনা করতে দেব। তবে আমরা বেশ ভালো বোধ করছি এবং আমরা আশাবাদী যে, এই যুদ্ধ অবশেষে শেষ হতে পারে।”
গত সপ্তাহে পুতিন জানিয়েছিলেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া শান্তি পরিকল্পনা দেখেছেন এবং এটি যুদ্ধের অবসানের জন্য ভবিষ্যতের চুক্তির ‘ভিত্তি’ হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু কিয়েভ এবং ইউরোপীয় মিত্ররা যখন এতে পরিবর্তন আনার তথ্য নিশ্চিত করে, তখন ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা এটি গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল মস্কো।
গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কিয়েভের মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তারা বলেছিল, এটি মস্কোর স্বার্থের দিকে তীব্রভাবে ঝুঁকে পড়বে। কারণ এতে ইউরোপীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জব্দ থাকা কয়েক বিলিয়ন রুশ সম্পদ কীভাবে বিনিয়োগ করা উচিত সে নির্দেশনার পাশাপাশি ইউরোপের বাজারে ইউক্রেনের প্রবেশের শর্তাবলীও নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সোমবার প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর বলেন, ‘বর্তমানে কোনো শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই জাতীয় কোনো প্রস্তাব কেবল ইউক্রেন ও ইউরোপের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করা যেতে পারে।
ম্যাখোঁ বলেন, রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ের প্রশ্নটি ‘কেবল প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দ্বারা চূড়ান্ত করা যেতে পারে।” ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “জব্দ করা রুশ সম্পদ, নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং ইউক্রেনের ইইউতে যোগদান সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে জড়িত করা প্রয়োজন।”
ফরাসি নেতা ২০১৪ সালে রাশিয়ার অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে শুরু হওয়া চলমান সংঘাতের অবসানে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন। ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া।
ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা ক্যালাস বলেন, “এই সপ্তাহটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হতে পারে, কিন্তু মস্কো কেবল ‘তাদের সঙ্গেই আলোচনা করতে চায় যারা রাশিয়ার কাছে ইতিমধ্যে যা আছে তার চেয়ে বেশি কিছু দেওয়ার প্রস্তাব করছে’।”
তিনি আরো বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি যে, সমস্ত চাপ দুর্বল পক্ষের ওপর চাপানো হবে কারণ ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করলে এই যুদ্ধ বন্ধ করার এটাই সহজ উপায়।”
ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে আগ্রহী, যেমন: ন্যাটো সদস্যপদ- যা দেশটিকে পুনরায় হামলা থেকে রক্ষা করবে।
কিন্তু রাশিয়া এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে এবং ট্রাম্প ইউক্রেনকে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মঙ্গলবার মস্কোয় এই আলোচনা এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন রাশিয়ান কর্মকর্তারা ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করার দাবি করেছেন। ক্রেমলিন পূর্ব ইউক্রেনের ভোভচানস্ক শহরও দখল করার দাবি করেছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ক্রেমলিনের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেননি। যুদ্ধের সম্মুখভাগ পর্যবেক্ষণকারী ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা প্রকল্পগুলোর মতে, ভোভচানস্ক বা পোকরোভস্ক এখনও রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হাতে সম্পূর্ণরূপে দখল হয়নি।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ য ক তর ষ ট র ইউক র ন ইউক র ন র কর মকর ত প রস ত ব র অবস ন ন ত কর র জন য ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান-আফগানিস্তান-মিয়ানমার থেকে দূতাবাস গুটিয়ে নিচ্ছে ফিনল্যা
ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড এক ঘোষণা বলেছে, তারা ‘কৌশলগত ও কার্যক্ষমতাগত’ কারণে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমারে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেবে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
১২ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব গৃহীত
সম্প্রতি জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভাল্টোনেন বলেছেন, “২০২৬ সাল থেকে ইসলামাবাদ, কাবুল এবং ইয়াঙ্গুনে ফিনল্যান্ডের দূতাবাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “কার্যক্ষমতাগত ও কৌশলগত কারণে দূতাবাসগুলো বন্ধ থাকবে, যা দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং ফিনল্যান্ডের সঙ্গে তাদের সীমিত বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
এতে আরো বল হয়, “ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের জারি করা একটি ডিক্রির মাধ্যমে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিনটি দেশের দূতাবাস বন্ধ করার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে এবং ২০২৬ সালে দূতাবাসগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফিনল্যান্ডের মিশন নেটওয়ার্কের ‘কৌশলগত পর্যালোচনা’ এর অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এতে ফিনল্যান্ডের বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতির স্বার্থ এবং ফিনল্যান্ডের রপ্তানি প্রচার কার্যক্রমের চাহিদা বিবেচনা করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, “এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ফিনল্যান্ডের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত করা।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভাল্টোনেন বলেন, “আমাদের অপারেটিং পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো আমাদের একটি শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক ফিনল্যান্ড গড়তে এবং আমাদের অগ্রাধিকার অনুযায়ী বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।”
এর আগে, বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে ফিনল্যান্ড ২০১২ সালেও পাকিস্তানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু পরে ২০২২ সালে মিশনটি পুনরায় চালু করা হয়।
২০২৩ সালে, সুইডেনও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণ উল্লেখ করে ইসলামাবাদে তাদের দূতাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়।
ঢাকা/ফিরোজ