বিগত সময়ে দেশে কয়েকবার সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য শুধু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বদিউল আলম মজুমদার এ কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজক সুজন। এতে সভাপতিত্ব করেন সুজনের সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন।

নির্বাচন অবশ্যই গণতান্ত্রিক যাত্রার প্রথম পথ বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার। এ প্রসঙ্গে বলেন, কিন্তু নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়। অতীতে বেশ কয়েকটা নির্বাচন হয়েছে, যেগুলোকে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ বলা যায়। কিন্তু এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেনি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণ মানে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। যেন প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় এবং এর মাধ্যমে সুশাসন কায়েম হয়। মানুষের যে নাগরিক অধিকারগুলো, যে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো, সেগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কয়েকটি সুষ্ঠু নির্বাচন সত্ত্বেও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।

সুষ্ঠু নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক উত্তরণ করতে হলে আরও অনেকগুলো বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া দরকার বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এর জন্য দরকার পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক অঙ্গন।

রাজনৈতিক অঙ্গন অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বদিউল আলম মজুমদার উল্লেখ করেন, নির্বাচনী ব্যবস্থায় দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। অনেক খারাপ ব্যক্তি সংসদে গিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছেন। এসব কারণে রাজনৈতিক অঙ্গন অপরিচ্ছন্ন হয়েছে।

দেশে এখন যত বড় বড় দুর্নীতি হয়, তার সবগুলো রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় হয় বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ, একশ্রেণির আমলা ও ব্যবসায়ী—এই তিন শক্তির আঁতাতে বড় দুর্নীতি হয়। এমন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দেন তিনি।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, নির্বাচনবিশেষজ্ঞ জেসমীন টুলী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবস থ ন র জন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয় কোথায়

সারি সারি গাছের ডালে ঝুলছে সবুজ মাল্টা। এখন ফল তোলার মৌসুম। বড় বাগানটিতে তাই ব্যস্ততার শেষ নেই। বাগানি আর শ্রমিকেরা গাছ বাছাই করে পরিপক্ব ফল পাড়ছেন। বাগানের এক পাশে শ্রমিকেরা ফল এনে জড়ো করে রাখছেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। জেলাটিতে পাহাড়ি ঢালে মাল্টার চাষ করেছেন হাজারো চাষি। কম পরিচর্চায় বেশি ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন অনেকে। জানতে চাইলে রোয়াংছড়ির চাষি মংমংসিং বলেন, বিদেশি মাল্টার চেয়ে দেশি মাল্টার দাম কম হওয়ায় চাহিদাও বেশি, এ কারণে চাষ বাড়ছে।

অবশ্য শুধু বান্দরবান নয়, পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতেও দেখা যায় একই চিত্রের। এ তিন পার্বত্য জেলাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয়, পরিমাণে যা ১৩ হাজার ৪৩ টন, অর্থাৎ ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৩ হাজার কেজি। এ তিন জেলার বাইরে বরিশাল অঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাল্টার উৎপাদন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চলতি বছরের ফল উৎপাদনের হিসাবে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

পার্বত্য জেলায় উৎপাদন বেশি

মাটি ও আবহাওয়া ভেদে দেশের কৃষিকে ১৪টি অঞ্চলে ভাগ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ ১৪ অঞ্চলে ১৭ হাজার ৮০০ একর জমিতে ৭৩ হাজার ৫৯৫ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ৩ পার্বত্য জেলা মিলিয়ে গঠন করা রাঙামাটি অঞ্চলে ৩ হাজার ৪১৯ একর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৪৩ টন, যা দেশের মোট উৎপাদিত মাল্টার ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। জেলা হিসাবে খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ৫৬০ একরে ৫ হাজার ৮৩৯ টন, বান্দরবানে ১ হাজার ১৯৭ একরে ৪ হাজার ৬৮৬ টন ও রাঙামাটিতে ৬৬২ একরে ২ হাজার ৫১৮ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে।

‘চাষিরা পরিপক্ব হওয়ার আগে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ফল আহরণ করেন। এ জন্য মাল্টা লাল রঙের হয় না, এর ফলে দামও কম পাওয়া যায়।’কৃষি কর্মকর্তা মেথুইচিং মারমা

এর বাইরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় (বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাটি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা) ১ হাজার ৬০৭ একর জমিতে ১০ হাজার ৪৬০ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের হিসাবে এ অঞ্চল দ্বিতীয় আর তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদিত হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। বিভাগের পাঁচটি জেলা (চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার) মিলিয়ে ২ হাজার ৭ একর জমিতে ৫ হাজার ১৬৪ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে।

বাগানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ের মাল্টা চাষের ঐতিহ্য বহুদিনের। বাড়ির আঙিনায় প্রথমে নিজেরা খাওয়ার জন্য এ ফলের গাছ লাগাতেন বাসিন্দারা। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাইট্রাস উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৫ সালের বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে এ ফলের চাষ শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে এ প্রকল্প সমতলেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে সম্প্রসারণের একটি প্রকল্প ৩ পার্বত্য জেলাসহ ৩০ জেলার ১২৩টি উপজেলা পর্যন্ত বর্ধিত হয়।

সম্প্রতি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও চিম্বুক পাহাড় বান্দরবান সদর উপজেলায় কয়েকটি মাল্টার বাগান ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ে মূলত বারি-১ ও ভিয়েতনামের জাতের মাল্টার চাষ হচ্ছে। চাষিরা জানান, মার্চ থেকে এপ্রিলে মাল্টাগাছে ফুল ধরে। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে ফল আহরণ হয়। প্রতি কেজি মাল্টা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। যদিও বিদেশি মাল্টা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

জেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেথুইচিং মারমা বলেন, চাষিরা পরিপক্ব হওয়ার আগে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ফল আহরণ করেন। এ জন্য মাল্টা লাল রঙের হয় না, এর ফলে দামও কম পাওয়া যায়।

অল্প খরচেও বেশি মুনাফা পাওয়ায় খুশি চাষিরাও। খাগড়াছড়ির চাষি প্রতিবিন্দু দেওয়ান বলেন, তিনি আড়াই একর জমিতে মাল্টার চাষ করেছেন। পরিচর্চা ও অন্যান্য বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। চলতি বছর মাল্টা বিক্রি করে পেয়েছেন ৬ লাখ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বান্দরবানের উপপরিচালক আবু নাঈম মো. সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাহাড়ে মাল্টার চাষ সম্প্রসারণের আরও সম্ভাবনা রয়েছে। লাভজনক হওয়ায় অনেক চাষি অন্য জাতের ফলের পরিবর্তে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু প্রকল্প না থাকায় শুধু পরামর্শ দিয়ে উৎসাহী করা ছাড়া আনুষঙ্গিক সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ