দেশে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয় কোথায়
Published: 2nd, December 2025 GMT
সারি সারি গাছের ডালে ঝুলছে সবুজ মাল্টা। এখন ফল তোলার মৌসুম। বড় বাগানটিতে তাই ব্যস্ততার শেষ নেই। বাগানি আর শ্রমিকেরা গাছ বাছাই করে পরিপক্ব ফল পাড়ছেন। বাগানের এক পাশে শ্রমিকেরা ফল এনে জড়ো করে রাখছেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। জেলাটিতে পাহাড়ি ঢালে মাল্টার চাষ করেছেন হাজারো চাষি। কম পরিচর্চায় বেশি ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন অনেকে। জানতে চাইলে রোয়াংছড়ির চাষি মংমংসিং বলেন, বিদেশি মাল্টার চেয়ে দেশি মাল্টার দাম কম হওয়ায় চাহিদাও বেশি, এ কারণে চাষ বাড়ছে।
অবশ্য শুধু বান্দরবান নয়, পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতেও দেখা যায় একই চিত্রের। এ তিন পার্বত্য জেলাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয়, পরিমাণে যা ১৩ হাজার ৪৩ টন, অর্থাৎ ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৩ হাজার কেজি। এ তিন জেলার বাইরে বরিশাল অঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাল্টার উৎপাদন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চলতি বছরের ফল উৎপাদনের হিসাবে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
পার্বত্য জেলায় উৎপাদন বেশি
মাটি ও আবহাওয়া ভেদে দেশের কৃষিকে ১৪টি অঞ্চলে ভাগ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ ১৪ অঞ্চলে ১৭ হাজার ৮০০ একর জমিতে ৭৩ হাজার ৫৯৫ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ৩ পার্বত্য জেলা মিলিয়ে গঠন করা রাঙামাটি অঞ্চলে ৩ হাজার ৪১৯ একর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৪৩ টন, যা দেশের মোট উৎপাদিত মাল্টার ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। জেলা হিসাবে খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ৫৬০ একরে ৫ হাজার ৮৩৯ টন, বান্দরবানে ১ হাজার ১৯৭ একরে ৪ হাজার ৬৮৬ টন ও রাঙামাটিতে ৬৬২ একরে ২ হাজার ৫১৮ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে।
‘চাষিরা পরিপক্ব হওয়ার আগে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ফল আহরণ করেন। এ জন্য মাল্টা লাল রঙের হয় না, এর ফলে দামও কম পাওয়া যায়।’কৃষি কর্মকর্তা মেথুইচিং মারমাএর বাইরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় (বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাটি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা) ১ হাজার ৬০৭ একর জমিতে ১০ হাজার ৪৬০ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের হিসাবে এ অঞ্চল দ্বিতীয় আর তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদিত হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। বিভাগের পাঁচটি জেলা (চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার) মিলিয়ে ২ হাজার ৭ একর জমিতে ৫ হাজার ১৬৪ টন মাল্টার উৎপাদন হয়েছে।
বাগানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ের মাল্টা চাষের ঐতিহ্য বহুদিনের। বাড়ির আঙিনায় প্রথমে নিজেরা খাওয়ার জন্য এ ফলের গাছ লাগাতেন বাসিন্দারা। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাইট্রাস উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৫ সালের বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে এ ফলের চাষ শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে এ প্রকল্প সমতলেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে সম্প্রসারণের একটি প্রকল্প ৩ পার্বত্য জেলাসহ ৩০ জেলার ১২৩টি উপজেলা পর্যন্ত বর্ধিত হয়।
সম্প্রতি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও চিম্বুক পাহাড় বান্দরবান সদর উপজেলায় কয়েকটি মাল্টার বাগান ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ে মূলত বারি-১ ও ভিয়েতনামের জাতের মাল্টার চাষ হচ্ছে। চাষিরা জানান, মার্চ থেকে এপ্রিলে মাল্টাগাছে ফুল ধরে। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে ফল আহরণ হয়। প্রতি কেজি মাল্টা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। যদিও বিদেশি মাল্টা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
জেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেথুইচিং মারমা বলেন, চাষিরা পরিপক্ব হওয়ার আগে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ফল আহরণ করেন। এ জন্য মাল্টা লাল রঙের হয় না, এর ফলে দামও কম পাওয়া যায়।
অল্প খরচেও বেশি মুনাফা পাওয়ায় খুশি চাষিরাও। খাগড়াছড়ির চাষি প্রতিবিন্দু দেওয়ান বলেন, তিনি আড়াই একর জমিতে মাল্টার চাষ করেছেন। পরিচর্চা ও অন্যান্য বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। চলতি বছর মাল্টা বিক্রি করে পেয়েছেন ৬ লাখ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বান্দরবানের উপপরিচালক আবু নাঈম মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর ব ন দরব ন প রকল প ন হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
বাংলাদেশের টেকসই সামুদ্রিক উন্নয়ন, ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিতে সমুদ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে কার্যকর সুশাসন ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ও অবৈধ, অপ্রকাশিত এবং অনিয়ন্ত্রিত (আইইউইউ) মাছ ধরা একক দেশের পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এজন্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।”
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের দ্য পেনিনসুলা হোটেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস আয়োজিত ‘মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড ব্লু ইনোভেশনস: সেইফগার্ডিং ওশান হারমনি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘সেইফগার্ডিং ওশান হারমনি’।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে ঠিকই, তবে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দায়িত্বশীল আহরণ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত এবং কার্যকর সুশাসন অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি আরো বলেন, “ব্লু ইকোনমিকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করায় বিজ্ঞান–নীতি–কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সমন্বয়ে একটি টেকসই সামুদ্রিক ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, “ড. ফ্রিটজফ নানসেন কর্মসূচির ২০২৫ সালের সামুদ্রিক জরিপ অনুযায়ী, গত সাত বছরে ছোট পেলাজিক মাছের মজুদ ১,৫৮,০০০ টন থেকে কমে ৩৩,৮১১ টনে নেমে এসেছে, যা ৭৮.৬% হ্রাস। বড় শিকারী মাছ কমে যাওয়ায় জেলিফিশের আধিক্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য বিপজ্জনক সংকেত।”
তিনি বলেন, “এসব ফলাফল বঙ্গোপসাগরের ইকোসিস্টেমে দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।”
উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে অত্যন্ত দক্ষ গবেষক ও বিজ্ঞানী আছেন। নীতিনির্ধারণে তাঁদের গবেষণালব্ধ তথ্য প্রাধান্য দিতে হবে।” এসময় তিনি ইকোসিস্টেম সুরক্ষা, সমুদ্র ভিত্তিক পরিকল্পনা এবং জলবায়ু–সহনশীল মৎস্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেন।
ইলিশকে জাতীয় ও বৈশ্বিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে কিন্তু এই সম্পদ এখন হুমকির মুখে। সাগরের প্রতিটি স্তরে ইলিশ রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। প্লেনারি সেশনে “গ্লোবাল ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়ন: চ্যালেঞ্জ, অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত অন্তর্দৃষ্টি”- শীর্ষক বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. পিয়ের ফাইলার (Dr. Pierre Failler)।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সের পরিচালক ড. শেখ আফতাব উদ্দিন আহমেদ।
এসময় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, গবেষক, বিজ্ঞানী, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/রেজাউল/এস