কার্টিস ক্যাম্ফার এমনিতেও ধুঁকছিলেন। ১৫ বলে তাঁর রান ছিল ৯। কিন্তু তাঁর আউটটা বাংলাদেশের জন্য উইকেট পতনের পাশাপাশি অন্যরকম এক প্রাপ্তিও। রিশাদ হোসেন যখন স্টাম্প উপড়ে ফেললেন কার্টিস ক্যাম্ফারের— উচ্ছ্বাসে ভাসল পুরো মাঠ।

এই উচ্ছ্বাসে ছিল দীর্ঘদিনের একটা অপেক্ষা শেষ হওয়ার প্রশান্তিও। বাংলাদেশের কোনো লেগ স্পিনারের গুগলিতে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানের স্টাম্প উপড়ে যাবে— এই দৃশ্য তো খুব খুব কমই দেখা গেছে। অনেকের কল্পনায় ভেসে বেড়ানো এই দৃশ্যটা বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন রিশাদ।

বাংলাদেশের অনেকদিন ধরেই হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছে লেগ স্পিনার। সেই অপেক্ষা গত দুই বছর ধরে ঘুচেছে রিশাদে। এখন সেই লেগ স্পিনে আরও নতুন নতুন অস্ত্র যোগ করছেন রিশাদ— গত এশিয়া কাপ থেকেই গুগলি করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ক্যাম্ফারকে বোল্ড আউটও করেছেন এই গুগলিতেই। স্কয়ার কাট খেলতে গিয়ে বোকা বনে যান ক্যাম্ফার।

আজ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে একাদশে ফেরানো হয় রিশাদকে। আগের দুই ম্যাচের মতো আজও ভালো শুরু পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেছিলেন পল স্টার্লিং ও টিম টেক্টর।

রিশাদের বোলিংয়ে আজ গুগলি দেখা গেছে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৫ দিনের ছাতক যুদ্ধ বেকায়দায় ফেলে পাকিস্তানি বাহিনীকে

‘১৯৭১ সালে আমি বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আহত হয়েছিলাম একবার। তবে ছাতকের যুদ্ধ ছিল ভয়াবহ। মনে হয়েছিল, এই যুদ্ধেই হয়তো প্রাণ যাবে। সুনামগঞ্জ অঞ্চলে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।’ বলছিলেন সুনামগঞ্জের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান।

সুনামগঞ্জের ছাতক মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে ছিল। সেটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে অক্টোবরে ছাতক অপারেশনের পরিকল্পনা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই যুদ্ধের কথা উঠে এসেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (দ্বিতীয় খণ্ড), প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত সম্মুখযুদ্ধ ১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের কলমে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (চতুর্থ খণ্ড) বইয়ে।

সম্মুখযুদ্ধ ১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধাদের কলমে বইয়ে মো. ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক ‘অপারেশন ছাতক’ নামে একটি লেখা লিখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ছাতকের উত্তরে দোয়ারাবাজারের সীমান্তে বাঁশতলার অবস্থান। এটি ৫ নম্বর সেক্টরের সেলা সাবসেক্টরের সদর দপ্তর। তাদের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল মীর শওকত আলী। ছাতক অপারেশন চালাতে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গারো পাহাড়ের তেলঢালা ক্যাম্প থেকে বাঁশতলায় আসে। এই রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর শাফায়াত জামিল।

পাঁচ দিনের এই যুদ্ধে ২৫ থেকে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। ছাতক যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়েছিল, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক তাঁর উইটনেস টু সারেন্ডার বইয়ে সে কথা স্বীকার করেন।মো. ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক

ছাতক শহর ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ঘিরে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। এই পুরো এলাকায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সেনা। সঙ্গে ১২ আজাদ-কাশ্মীর ফোর্স (একেএফ), ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স (ইপিসিএএফ) ও স্থানীয় রাজাকারদের দল।

সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী ছাতক যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর লেখা রক্তাক্ত ৭১ সুনামগঞ্জ বইয়ে তিনি এই যুদ্ধ সম্পর্কে লিখেছেন, ক্যাপ্টেন আনোয়ারের ‘এ’ কোম্পানি বালিউড়া বাজারে অবস্থান নেয়। মেজর আকবরের ‘বি’ কোম্পানি জয়নগর টিলায় যায়। ‘সি’ কোম্পানির মেজর মহসিনকে দোয়ারাবাজারে এবং ‘ডি’ কোম্পানির অধিনায়ক লে. নুরুন্নবীকে ছাতক-সিলেট রোডের গোবিন্দগঞ্জে অবস্থান নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। লে. মনজুর ‘ই’ কোম্পানি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের বিপরীতে রাধানগরে অবস্থান নেন। এ ছাড়া সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলালের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর তিনটি কোম্পানি, ক্যাপ্টেন আনোয়ার ও ক্যাপ্টেন আকবরের কোম্পানিও ছিল।

ছাতক যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বাঁশতলা এলাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ