সুনামগঞ্জে টিটিসি নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 2nd, December 2025 GMT
হাওর–অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের আলফাত স্কয়ারে ‘তাহিরপুর উপজেলাবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় দেশের অন্যান্য উপজেলার সঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় দুটি টিটিসি নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হয়। এখন তা হবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। শান্তিগঞ্জের বিষয়টি চূড়ান্ত না হলেও তাহিরপুরের কেন্দ্রটি জেলার জগন্নাথপুরে স্থানান্তরের চূড়ান্ত প্রস্তাব দিয়ে গণপূর্ত কর্তৃপক্ষকে ভবন নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প স্থানান্তরের খবর জানাজানি হওয়ার পর রোববার তাহিরপুর উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
তাহিরপুরে টিটিসি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব সুহেল আলমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর–জামালগঞ্জ–ধর্মপাশা–মধ্যনগর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের জেলা আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির নেতা আনিসুল হক, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির নেতা কামরুজ্জামান; তাহিরপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাওর–অধ্যুষিত তাহিরপুর উপজেলা নানা কারণে পিছিয়ে আছে। এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র হলে হাওর এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন। এই এলাকার তরুণেরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। তাঁরা দেশে-বিদেশে কাজের সুযোগ পাবেন। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। অন্য উপজেলায় নয়, তাহিরপুরেই এটি স্থাপন করতে হবে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাহিরপুরে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে না। এটি হবে জগন্নাথপুরে হবে বলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার কেন্দ্রটি নির্মাণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীর আরডিএ কমপ্লেক্সের ইজারা বাতিল করে সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র করার দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহীর আরডিএ কমপ্লেক্স একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র করার দাবিতে ‘রাজশাহী নগরবাসী’র ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে নগরীর তালাইমারী মোড়ে অবস্থিত ওই কমপ্লেক্সের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র হিসেবে ভবনটি নির্মাণ করা হলেও এটি এখন সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে না। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) একটি জনবিরোধী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটিকে লিজ দিয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বক্তারা অবিলম্বে এই ইজারা বাতিল করে ভবনটিকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের সময় মতিহার চত্বর, তথা তালাইমারী মোড় ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী কলেজ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নাগরিক সমাজ ও আমজনতা আন্দোলন সংঘটিত করে। ভবনটিকে জুলাই ইতিহাসসহ এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস, বরেন্দ্র ভূমির ইতিহাস এবং ১৯৪৭ থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলার আন্দোলন–সংগ্রাম, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস উপস্থাপন এবং সংরক্ষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে আরডিএ কমপ্লেক্স ভবনের জনবিরোধী ইজারা বাতিলের দাবি জানান এবং এর নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র’ করার দাবি জানান।
নদীগবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নই। শিক্ষানগরীর ধারাবাহিকতা আমরা রাখতে চাই। কিন্তু ভবনটি নির্মিত হয়েছিল ইতিহাস সংরক্ষণ ও সংস্কৃতিচর্চার উদ্দেশ্যে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়।’
জুলাই ৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, ‘৫ আগস্ট পরিবর্তনের পর আমরা আশা করেছিলাম, দখলবাজি ও অন্যায়ের অবসান হবে। কিন্তু ভবনটি নানা কৌশলে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে এখানে ইতিহাস সংরক্ষণ ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ছাত্র-জনতা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
রাজশাহী মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা বলেন, ‘ভবনটি হওয়ার কথা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যেখানে অডিটরিয়াম, আর্ট গ্যালারি, ও নাট্যশালা থাকবে। রাজশাহীতে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার অভাব আছে। অথচ এটিকে একটি বেসরকারি স্কুলকে লিজ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, এটি তার মূল উদ্দেশ্যে ফিরে আসুক।’
আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর তালাইমারী মোড়ে ১২ হাজার ৫১৮ বর্গমিটার জমিতে ৬০ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ নামে শুরু হলেও পরে নাম পরিবর্তন করে ‘আরডিএ কমপ্লেক্স’ রাখা হয়। সম্প্রতি ২৯ হাজার ৫০০ বর্গফুট স্পেস মাসে ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় ১০ বছরের জন্য দেবাশীষ প্রামাণিক নামের এক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়, যিনি পরবর্তী সময়ে এটি একটি স্কুলকে ভাড়া দেন। ইতিমধ্যে স্কুলটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক হোসেন আলী পিয়ারা, নারীনেত্রী ঈশিতা ইয়াসমিন, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।
এর আগে ৫ নভেম্বর ৩৬ জুলাই ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠন ইজারা বাতিল চেয়ে মানববন্ধন করে।
আরডিএ কমপ্লেক্স স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিক বলেন, ‘আজ কারা কর্মসূচি পালন করেছেন, তা মাত্র জানলাম। এ বিষয়ে জেনে পরে মন্তব্য করতে পারব।’