অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা তুষার গ্রেপ্তার, পিস্তল উদ্ধার
Published: 2nd, December 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের সংঘর্ষে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা যুবক তুষার হোসেন (২১) গ্রেপ্তার হয়েছে। অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পলাতক ছিলেন তুষার। অবশেষে রেহাই পেলেন না তিনি। ঘটনার চার দিনের মাথায় ধরা পড়লেন পুলিশের হাতে।
আরো পড়ুন:
ঝিনাইদহে ট্রাকচাপায় পুলিশ সদস্যের মৃত্যু
উঠান থেকে শিশুকে নিয়ে গেল শিয়াল, মিলল মরদেহ
সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ধানবান্ধি এলাকার জে সি রোডের মতিন সাহেবের ঘাট সংলগ্ন স্থান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পাবনা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
পাবনা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান। গ্রেপ্তার তুষার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ভেলুপাড়া মহল্লার আবু তাহেরের ছেলে।
ডিবি পুলিশ জানান, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি, স্থানীয় সোর্স ও দীর্ঘ ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তুষারের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর অভিযানে নামেন তারা। ডিবি পুলিশের ওসি মো.
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তুষার তার হেফাজতে থাকা একটি অবৈধ পিস্তল ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে ভেলুপাড়া এলাকায় মাটি খুঁড়ে প্রায় ৬–৭ ইঞ্চি নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একটি লোডেড পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
ডিবি ওসি রাশিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তুষারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে ঈশ্বরদী থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ০৬। তারিখ ০২/১২/২০২৫। বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপি'র মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী সমর্থক আহত হয়। ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলে।
সেই সংঘর্ষের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যে ভিডিওতে দেখা যায়, তুষার নামের ওই যুবক পিস্তল উঁচিয়ে সামনে থাকা প্রতিপক্ষের দিকে গুলি ছুঁড়ছে। তুষার বিএনপি নাকি জামায়াতকর্মী তা নিয়ে দুই দলের পাল্টপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যায়।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব দাবি করেন, “দিবালোকে তুষার মণ্ডল আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তিনি জামায়াত নেতা তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মন্ডলের ঘনিষ্ঠ সহচর।’’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা জামায়াতের আমির ও জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল বলেন, “অস্ত্রধারী ওই যুবক আমাদের দলের কেউ না, তার সঙ্গে দলের ন্যুনতম সম্পর্ক নেই।”
তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুর নূর গত ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যায় জানান, গুলি ছোঁড়া তুষার জামায়াতের কর্মী। তিনি বিএনপির দায়ের করা মামলার তালিকাভুক্ত ৬ নম্বর আসামি।
সংঘর্ষের ঘটনার পর ২৯ নভেম্বর সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক মক্কেল মৃধার ছেলে ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বাঁধন হাসান আলিম বাদী হয়ে ৩২ জন জামায়াত নেতার নাম উল্লেখ করে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ১৫০ থেকে ২০০ জন অজ্ঞাতনাম ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় পাবনা জেলা জামায়াতের আমির এবং পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলকে।
ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে একই দিন একই থানায় ৩৮ জন বিএনপির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক মক্কেল মৃধাকে। এছাড়া ১০০ থেকে ১৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই পাবনা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের আত্মীয় এবং অনুসারী।
সংঘর্ষের সময় লুট হওয়া জামায়াত নেতাকর্মীদের দারি করা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের মধ্যে গত শনিবার বিকেলে মক্কেল মৃধার বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে ৯টি, সোমবার ৭টি, মঙ্গলবার ১টি এবং ঘটনাস্থল থেকে আগুনে পোড়াসহ মোট ২১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
ঢাকা/শাহীন/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মন ন ত প র র থ দ ল ইসল ম ন ত কর ম ব এনপ র র আহ ব স ঘর ষ উদ ধ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় দিনে সেন্ট মার্টিন গেলেন আরও ১ হাজার ১৯৪ পর্যটক
কক্সবাজারে জাহাজ চলাচল শুরুর পর দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার তিনটি জাহাজে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে গেলেন আরও ১ হাজার ১৯৪ জন পর্যটক। গতকাল সোমবার প্রথম দিন ভ্রমণে গেছেন ১ হাজার ১৭৪ জন। দৈনিক ভ্রমণের অনুমতি আছে দুই হাজার জনের।
আজ সকাল সাতটায় শহরের নুনিয়াছাটা বিআইডব্লিউটিএ-জেটিঘাট থেকে পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করে তিনটি জাহাজ এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ। ১২০ কিলোমিটারের গভীর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে জাহাজগুলো সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছায় বেলা দেড়টায়। বেলা তিনটার দিকে আগের দিনে যাওয়া পর্যটকদের নিয়ে জাহাজগুলো পুনরায় কক্সবাজার ফিরে আসবে। এভাবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও রাত যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন।
জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের পর্যটক বেড়েছে মাত্র ২০ জন। আজও ১ হাজার ১৯৪ জন যাত্রী নিয়ে তিনটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন গেছে। পর্যটকের সংখ্যা না বাড়লে জাহাজমালিকদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল—সরকার নির্ধারিত দৈনিক দুই হাজার পর্যটক পাওয়া যাবে। এখন প্রতিদিন ৮০০ জন কম হচ্ছে। গত বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাসে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছিলেন ১ লাখ ১০ হাজারের মতো।
হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক, একটি জাহাজের ব্যবস্থাপক ও কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যটকদের ভ্রমণে আসতে নিরুৎসাহিত করছে। অনেকে ভ্রমণে আসার হোটেলকক্ষ অগ্রিম বুকিং এবং জাহাজের টিকিট বাতিল করছেন।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু রাত যাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকেরা যেতে উৎসাহিত হননি। জাহাজও চলাচল করেনি।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপন করা যাবে না। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
তা ছাড়াও সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজ কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল, পলিথিন বহন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনি প্যাক, পানির প্লাস্টিক বোতল) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনেই পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে হচ্ছে। টিকিটে কিউআর কোড না থাকলে জাহাজ মালিককে জরিমানা করা হচ্ছে। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। জাহাজে ওঠার আগে যাত্রীরা সঙ্গে করে প্লাস্টিক, পলিথিন নিয়ে যাচ্ছেন কি না, তা–ও তদারকি হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, জাহাজে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।