দ্বিতীয় দিনে সেন্ট মার্টিন গেলেন আরও ১ হাজার ১৯৪ পর্যটক
Published: 2nd, December 2025 GMT
কক্সবাজারে জাহাজ চলাচল শুরুর পর দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার তিনটি জাহাজে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে গেলেন আরও ১ হাজার ১৯৪ জন পর্যটক। গতকাল সোমবার প্রথম দিন ভ্রমণে গেছেন ১ হাজার ১৭৪ জন। দৈনিক ভ্রমণের অনুমতি আছে দুই হাজার জনের।
আজ সকাল সাতটায় শহরের নুনিয়াছাটা বিআইডব্লিউটিএ-জেটিঘাট থেকে পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করে তিনটি জাহাজ এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ। ১২০ কিলোমিটারের গভীর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে জাহাজগুলো সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছায় বেলা দেড়টায়। বেলা তিনটার দিকে আগের দিনে যাওয়া পর্যটকদের নিয়ে জাহাজগুলো পুনরায় কক্সবাজার ফিরে আসবে। এভাবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও রাত যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন।
জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের পর্যটক বেড়েছে মাত্র ২০ জন। আজও ১ হাজার ১৯৪ জন যাত্রী নিয়ে তিনটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন গেছে। পর্যটকের সংখ্যা না বাড়লে জাহাজমালিকদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল—সরকার নির্ধারিত দৈনিক দুই হাজার পর্যটক পাওয়া যাবে। এখন প্রতিদিন ৮০০ জন কম হচ্ছে। গত বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাসে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছিলেন ১ লাখ ১০ হাজারের মতো।
হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক, একটি জাহাজের ব্যবস্থাপক ও কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যটকদের ভ্রমণে আসতে নিরুৎসাহিত করছে। অনেকে ভ্রমণে আসার হোটেলকক্ষ অগ্রিম বুকিং এবং জাহাজের টিকিট বাতিল করছেন।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু রাত যাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকেরা যেতে উৎসাহিত হননি। জাহাজও চলাচল করেনি।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপন করা যাবে না। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
তা ছাড়াও সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজ কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল, পলিথিন বহন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনি প্যাক, পানির প্লাস্টিক বোতল) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনেই পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে হচ্ছে। টিকিটে কিউআর কোড না থাকলে জাহাজ মালিককে জরিমানা করা হচ্ছে। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। জাহাজে ওঠার আগে যাত্রীরা সঙ্গে করে প্লাস্টিক, পলিথিন নিয়ে যাচ্ছেন কি না, তা–ও তদারকি হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, জাহাজে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন ট ম র ট ন ভ রমণ পর যটক র ভ রমণ র পর ব শ সরক র চল চল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাভেল পাস ছাড়া সেন্টমার্টিনের টিকিট বিক্রি: কেয়ারি সিন্দাবাদকে জরিমানা
সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল পাস ছাড়া অবৈধভাবে পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রির অভিযোগে সেন্টমার্টিনগামী কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। যাত্রার আগে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অনিয়ম শনাক্ত করলে কেয়ারি সিন্দাবাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা
ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে বাধা, এনসিপি নেতাকে আসামি করে মামলা
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, “তিনজন পর্যটকের কাছে ১৮০০ টাকা করে ট্রাভেল পাস ছাড়া (কিউআর কোডবিহীন) সরাসরি টিকিট বিক্রির সত্যতা পাওয়ায় জাহাজ কর্তৃপক্ষকে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “নির্দেশনা অনুযায়ী এভাবে টিকিট বিক্রি করা যাবে না। প্রথমদিন হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়নি, মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এমন অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানান, কেবল কক্সবাজারের স্থানীয়রা জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। অন্যান্য পর্যটকদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল পাস নিতে হবে।
এদিকে, ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকায় পর্যটকরা তখন আগ্রহ দেখাননি। তবে, আজ ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকায় মৌসুমের প্রতীক্ষিত জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথমদিন সেন্ট মার্টিনগামী যাত্রী ছিলেন ১ হাজার ১৭৪ জন পর্যটক।
জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, প্রশাসন মোট ৬টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে। যাত্রীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রথমদিন ৩টি জাহাজ চলাচল করেছে। সেগুলো হলো- এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ।
মৌসুমের প্রথম দিনের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ওপর সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা, হয়রানি রোধ ও পরিবেশ রক্ষায় নেওয়া ব্যবস্থা নিয়মিত তদারকি করা হবে।”
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান (অতিরিক্ত ডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ