নামাজের মধ্যে দৃষ্টি কখন কোথায় থাকবে
Published: 2nd, December 2025 GMT
নামাজ ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত এবং মুমিনদের সফলতার সোপান। আল্লাহ্ তায়ালা সফল মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “যারা তাদের নামাজে বিনয়ী।” (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১-২)
নামাজে এই বিনয় বা একাগ্রতা, যাকে কোরআনে বলা হয়েছে ‘খুশু’, তা অর্জন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল দৃষ্টির অবস্থান।
যদি মুসল্লি এদিক-ওদিক দৃষ্টি ফেরান, তাহলে তার মন নামাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং খুশু নষ্ট হয়ে যায়। তাই খুশু রক্ষার জন্য দৃষ্টিকে সঠিক স্থানে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
যদি মুসল্লি এদিক-ওদিক দৃষ্টি ফেরান, তাহলে তার মন নামাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং খুশু নষ্ট হয়ে যায়। তাই খুশু রক্ষার জন্য দৃষ্টিকে সঠিক স্থানে রাখা অত্যন্ত জরুরি।আকাশের দিকে তাকানো বারণনামাজ অবস্থায় দৃষ্টিকে আকাশের দিকে তোলা ইসলামে নিষিদ্ধ। কারণ এটি খুশুর পরিপন্থী এবং আল্লাহর প্রতি যথাযথ বিনয় প্রদর্শনের বিপরীত।
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.
এই নিষেধাজ্ঞা প্রমাণ করে যে, নামাজে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা খুশু বা বিনয়ের পরিবেশ থেকে ব্যক্তিকে দূরে সরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনপূর্ব যুগে মুসলিম সমাজে প্রতিবাদের ধরন১০ মে ২০২৫দৃষ্টির অবস্থান নিয়ে ফকিহদের মতদৃষ্টি কোথায় থাকবে, এই বিষয়ে ফিক্হবিদদের মধ্যে তিনটি প্রধান মত রয়েছে। তবে সবার মতামতের মূল কথা হলো: খুশু বা একাগ্রতা যেখানে বেশি হবে, দৃষ্টি সেখানেই থাকবে।
ক. সিজদার স্থানে দৃষ্টি: হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকিহদের মতে, নামাজরত অবস্থায় মুসল্লির দৃষ্টি সেজদার স্থানে নিবদ্ধ থাকা মুস্তাহাব। এর সপক্ষে যুক্তি হল, সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখলে মন বিক্ষিপ্ত হয় না এবং খুশূ' অর্জিত হয়। এই অবস্থান বিনয় প্রকাশের সবচেয়ে কাছাকাছি।
কোনো কোনো আলেম নামাজের বিভিন্ন রোকনে দৃষ্টির স্থান নির্দিষ্ট করেছেন, যা খুশু অর্জনে সহায়ক:
দাঁড়িয়ে থাকা (কিয়াম): সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা।
রুকুতে থাকা: পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা।
সিজদার সময়: নাকের ডগার দিকে দৃষ্টি রাখা।
বসা অবস্থায়: কোলের (হাঁটু ও উরুর সংযোগস্থল) দিকে দৃষ্টি রাখা।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইয়িদ আহমদ আল-মুসাইয়ির এই মতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন যে খুশু এবং আল্লাহর প্রতি মনোযোগ ধরে রাখাই মূল উদ্দেশ্য।
খ. কিবলার দিকে দৃষ্টি: মালিকি মাজহাবের মতে, মুসল্লি কিবলা বা সম্মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। এই মতের ভিত্তি হল, আল্লাহ্ তায়ালা কিবলা পরিবর্তনের সময় বলেন, “আমি আপনার চেহারাকে আকাশের দিকে ফেরাতে দেখছি। অতএব, আমি অবশ্যই আপনাকে এমন কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দেব, যা আপনি পছন্দ করেন।
সুতরাং আপনি আপনার চেহারা মসজিদে হারামের (কাবা শরিফের) দিকে ঘোরান এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমরা তোমাদের চেহারা সেদিকেই ফেরাও।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
তাদের মতে, এই আয়াতে কিবলার দিকে মুখ ফেরানোর নির্দেশ কেবল দেহকে নয়, বরং দৃষ্টিকেও কিবলার দিকে নিবদ্ধ করার প্রতি ইঙ্গিত করে।
আরও পড়ুন‘যাও, আবার নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি’১৮ অক্টোবর ২০২৫তা ছাড়া নবীজি (সা.) সাহাবিদের নিয়ে নামাজ পড়ার পর মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং হাতের ইশারায় মসজিদের কিবলার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “আমি এইমাত্র, যখন তোমাদের নিয়ে নামাজ পড়লাম, জান্নাত ও জাহান্নামকে এই দেয়ালের কিবলার দিকে প্রতিমূর্ত হতে দেখেছি। আজকের মতো ভালো ও মন্দ আমি দেখিনি।”
মালিকিগণ বলেন, এই হাদিস প্রমাণ করে যে রাসুল (সা.) সামনের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন (যা কিবলার দিক)।
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত: খুশুই মূল লক্ষ্যযদিও ফিকহবিদদের মধ্যে দৃষ্টির অবস্থান নিয়ে সামান্য পার্থক্য রয়েছে, তবে সবাই একমত যে নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো খুশু বা একাগ্রতা অর্জন। খুশুর জন্য একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর মহিমা ও মহত্ত্ব স্মরণ করা, শান্তভাবে রুকু ও সেজদা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে স্থির রাখা।
সুতরাং, নামাজে ব্যক্তির দৃষ্টি সেজদার স্থানেই থাকুক বা সম্মুখের কিবলার দিকে, গুরুত্বপূর্ণ হল—কোন অবস্থানে তার মন সবচেয়ে কম বিক্ষিপ্ত হয় এবং আল্লাহর দিকে তার মনোযোগ সর্বাধিক নিবদ্ধ থাকে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিকহবিদদের (হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি) মতে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা খুশু অর্জনের জন্য সর্বোত্তম। তবে মালিকিদের মতে কিবলার দিকে সরাসরি তাকানো বৈধ। উভয় মতের লক্ষ্য হল, চোখকে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে আল্লাহর সাথে সংযোগকে দৃঢ় করা।
নামাজে দৃষ্টির অবস্থান কেবল একটি বাহ্যিক নিয়ম নয়, এটি অভ্যন্তরীণ বিনয় ও একাগ্রতার প্রতিফলন। যখন একজন মানুষ তার দৃষ্টিকে সেজদার স্থানে স্থির রাখে, তখন তা শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং বাইরের জগত থেকে মনকে দূরে রাখতে সহায়তা করে, যার ফলে তার নামাজ আল্লাহর কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হওয়ার আশা করা যায়।
আরও পড়ুননামাজে ভুলের সিজদা কখন কীভাবে দিতে হয়০১ ডিসেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ষ ট র অবস থ ন ক বল র দ ক আল ল হ দ র মত র জন য ত র মন
এছাড়াও পড়ুন:
আনিসুল-মঞ্জুর নেতৃত্বে নির্বাচনী জোটে একমত ১৬ দল, মুখপাত্র রুহুল আমিন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠিত হচ্ছে। জোটের মুখপাত্র করা হচ্ছে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এই জোটের সম্ভাব্য নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাপার উদ্যোগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জোটে অন্তর্ভুক্ত সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করা হবে।
সভায় জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী সেসব দলের সঙ্গে একটি বৃহত্তর জোট গঠন করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ১৬টি রাজনৈতিক দলের নেতারা বৃহত্তর জোট গঠন করার লক্ষ্যে একমত হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে এ জোটের আত্মপ্রকাশ হতে পারে।
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যদি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, তাহলে দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে নির্বাচন আয়োজনের মতো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরি হয়নি।
মতবিনিময় সভায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সবার মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তারপরও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দেশের জনগণের কাছে একটি তৃতীয় ধারার সুস্থ রাজনীতি উপহার দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে দলগুলোর। দেশ আজ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলে ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে।
আরও পড়ুনআনিসুলের জাতীয় পার্টি ও জেপি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, নতুন জোট গঠনেরও উদ্যোগ২৭ নভেম্বর ২০২৫আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান, জোটের মূলমন্ত্র হবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক, জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম, মহাসচিব জাফর আহমেদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি মহসিন রশিদ, গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির একাংশের নির্বাহী সভাপতি আশরাফুল হক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকান্দার আলী মনি, বাংলাদেশ ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসেন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু।