দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার আজ মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চান। তাঁর প্রশাসন এই সংঘাতকে ‘রক্তপাত’ ও ‘প্রক্সি যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে গত আগস্টে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকসহ এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো প্রচেষ্টা শান্তি আনতে পারেনি।

গত সপ্তাহে ফাঁস হওয়া ২৮ দফার মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের খসড়া ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তাঁদের ধারণা, এই খসড়ায় ন্যাটোর বিষয়ে মস্কোর মূল দাবি, ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ওপর বিধিনিষেধের মতো বিষয় রয়েছে।

এরপর ইউরোপীয় শক্তিগুলো যুদ্ধ বন্ধে পাল্টা প্রস্তাব দেয়। জেনেভার আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন জানায়, তারা যুদ্ধ শেষ করতে একটি ‘হালনাগাদ ও সংশোধিত’ শান্তি প্রস্তাব তৈরি করেছে।

পুতিন বলেছেন, এখন পর্যন্ত কোনো খসড়া চুক্তি নিয়ে নয়, বরং একগুচ্ছ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে এসব প্রস্তাব চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের জানান, উইটকফের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকটি আজ দিনের দ্বিতীয়ার্ধে হবে। তবে রাশিয়ার ‘রেড লাইন’(যেসব শর্ত তারা কোনো অবস্থাতেই ছাড়বে না) সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

পেসকভ বলেন, ‘উচ্চস্বরের’ কূটনীতি সহায়ক নয়। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, উইটকফের এই রাশিয়া সফরে কুশনার তাঁর সঙ্গে যোগ দেবেন।

পুতিন বারবার বলছেন, তিনি শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত। তবে ইউক্রেন কোনো চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলে রাশিয়ার বাহিনী আরও এগিয়ে যাবে এবং ইউক্রেনের আরও বেশি অঞ্চল দখল করবে।

ইউক্রেনপন্থী মানচিত্র অনুসারে রাশিয়ার বাহিনী ইউক্রেনের ১৯ শতাংশের বেশি অঞ্চল বা ১ লাখ ১৫ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ করছে, যা দুই বছর আগের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের পর ২০২৫ সালে রুশ বাহিনী দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়েছে।

রুশ সামরিক কমান্ডাররা গতকাল সোমবার পুতিনকে জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সম্মুখসারির শহর পোক্রোভস্ক ও ভোভচানস্ক দখল করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধে ১২ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। ইউক্রেন বা রাশিয়া কেউই তাদের ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা প্রকাশ করে না।

ট্রাম্প, ইউরোপ, ন্যাটো ও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা

গত মাসের শেষের দিকে মার্কিন খসড়া প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় শক্তিগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। তাদের আশঙ্কা, এই রুশপন্থী কঠোর শান্তিচুক্তি রাশিয়াকে তেল, গ্যাস ও বিরল খনিজে মার্কিন বিনিয়োগের পথ খুলে দিতে পারে এবং মস্কোকে জি৮-এ ফিরিয়ে আনতে পারে।

রাশিয়ার মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেন কখনো ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ওপর নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ থাকবে, পুরো দনবাসের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং ক্রিমিয়া, দনবাস, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষী ও রুশ অর্থোডক্স অনুসারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

ইউক্রেন বলছে, এসব শর্ত মেনে নেওয়ার অর্থ আত্মসমর্পণ করা এবং ভবিষ্যতে রাশিয়া হামলা করলে তাদের কিছুই করার থাকবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভের জন্য ১০ বছরের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাবও দিয়েছে।

উইটকফ, কুশনার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত রোববার মিয়ামি–সংলগ্ন উইটকফের শেল বে ক্লাবে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র ইউক র ন য প রস ত ব র ওপর ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন চুক্তি চূড়ান্ত করতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তি চূড়ান্ত করতে হোয়াইট হাউজ ‘খুব আশাবাদী’ বলে জানানোর পর, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ মঙ্গলবার মস্কোতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, পুতিন ও উইটকফের বৈঠকটি মস্কোর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরের পর হওয়ার কথা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনারও উপস্থিত থাকতে পারেন। তিনি কূটনৈতিক আলোচনায় বহিরাগত উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। 

আরো পড়ুন:

ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখলের দাবি রাশিয়ার

কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা: রাশিয়ার ২ ট্যাংকারে আগুন

ফ্লোরিডায় ইউক্রেনীয় ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দিনের আলোচনার পর মস্কোতে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান করতে যুক্তরাষ্ট্র যে বিতর্কিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছিল, তাতে পরিমার্জন করার জন্য ফ্লোরিডায় উইটকফ এবং কুশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে বলেছেন যে, ‘কিছু কঠিন বিষয় রয়েছে যা এখনও সমাধান করা বাকি’।

সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, খসড়া শান্তি চুক্তি ‘অনেক পরিমার্জিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “আমি মনে হয় প্রশাসন খুব আশাবাদী। কিন্তু বিস্তারিত জানার জন্য, আমি আলোচকদের আলোচনা করতে দেব। তবে আমরা বেশ ভালো বোধ করছি এবং আমরা আশাবাদী যে, এই যুদ্ধ অবশেষে শেষ হতে পারে।”

গত সপ্তাহে পুতিন জানিয়েছিলেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া শান্তি পরিকল্পনা দেখেছেন এবং এটি যুদ্ধের অবসানের জন্য ভবিষ্যতের চুক্তির ‘ভিত্তি’ হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু কিয়েভ এবং ইউরোপীয় মিত্ররা যখন এতে পরিবর্তন আনার তথ্য নিশ্চিত করে, তখন ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা এটি গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল মস্কো।

গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খসড়া শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কিয়েভের মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তারা বলেছিল, এটি মস্কোর স্বার্থের দিকে তীব্রভাবে ঝুঁকে পড়বে। কারণ এতে ইউরোপীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জব্দ থাকা কয়েক বিলিয়ন রুশ সম্পদ কীভাবে বিনিয়োগ করা উচিত সে নির্দেশনার পাশাপাশি ইউরোপের বাজারে ইউক্রেনের প্রবেশের শর্তাবলীও নির্ধারণ করা হয়েছিল। 

সোমবার প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর বলেন, ‘বর্তমানে কোনো শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই জাতীয় কোনো প্রস্তাব কেবল ইউক্রেন ও ইউরোপের মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করা যেতে পারে।

ম্যাখোঁ বলেন, রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ের প্রশ্নটি ‘কেবল প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দ্বারা চূড়ান্ত করা যেতে পারে।” ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “জব্দ করা রুশ সম্পদ, নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং ইউক্রেনের ইইউতে যোগদান সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে জড়িত করা প্রয়োজন।”

ফরাসি নেতা ২০১৪ সালে রাশিয়ার অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখলের মাধ্যমে শুরু হওয়া চলমান সংঘাতের অবসানে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন। ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। 

ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা ক্যালাস বলেন, “এই সপ্তাহটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হতে পারে, কিন্তু মস্কো কেবল ‘তাদের সঙ্গেই আলোচনা করতে চায় যারা রাশিয়ার কাছে ইতিমধ্যে যা আছে তার চেয়ে বেশি কিছু দেওয়ার প্রস্তাব করছে’।”

তিনি আরো বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি যে, সমস্ত চাপ দুর্বল পক্ষের ওপর চাপানো হবে কারণ ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করলে এই যুদ্ধ বন্ধ করার এটাই সহজ উপায়।”

ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা কিয়েভকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে আগ্রহী, যেমন: ন্যাটো সদস্যপদ- যা দেশটিকে পুনরায় হামলা থেকে রক্ষা করবে।

কিন্তু রাশিয়া এর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে এবং ট্রাম্প ইউক্রেনকে ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মঙ্গলবার মস্কোয় এই আলোচনা এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন রাশিয়ান কর্মকর্তারা ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করার দাবি করেছেন। ক্রেমলিন পূর্ব ইউক্রেনের ভোভচানস্ক শহরও দখল করার দাবি করেছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ক্রেমলিনের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেননি। যুদ্ধের সম্মুখভাগ পর্যবেক্ষণকারী ওপেন-সোর্স গোয়েন্দা প্রকল্পগুলোর মতে, ভোভচানস্ক বা পোকরোভস্ক এখনও রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হাতে সম্পূর্ণরূপে দখল হয়নি।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেন চুক্তি চূড়ান্ত করতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প
  • রাশিয়াকে ভূখণ্ডগত ছাড় না দেওয়াটাই ইউক্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: জেলেনস্কি