ট্রাম্পের ব্যবস্থা ভাঙার রাজনীতির আড়ালে কী
Published: 2nd, December 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দুর্নীতি হয়তো স্বাভাবিক জীবনযাপনের অংশ। কিন্তু আরও গুরুতর সমস্যা হলো তাঁর প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে বড় পরিচয়ই হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুর্নীতি। অর্থ বা সুবিধার বিনিময়ে ক্ষমা ও নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়া, আবার বিদেশি সরকার ও রাষ্ট্রবহির্ভূত গোষ্ঠীগুলোকে তাঁর পরিবারের ক্রিপ্টো পণ্যে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া—এসবের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের দুর্নীতির কৌশল এমন মাত্রা ও অভিনব রূপ নিয়েছে, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ও নিয়মকানুন ধ্বংসের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত স্বার্থ কীভাবে জড়িয়ে আছে তা যদি বোঝা না যায়, তাহলে ট্রাম্পের এ দুর্নীতির গুরুত্ব বোঝা যাবে না।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি যে পদ্ধতি ব্যবহার করছেন, তা শুধু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কেলেঙ্কারিপূর্ণ (ক্লেপ্টোক্রেটিক) ক্রেমলিনের মতো নয়; বরং সোভিয়েত যুগের কমিউনিস্ট ক্ষমতার কাঠামোর সঙ্গেও মিল রয়েছে। ট্রাম্প শাসন করেন খেয়ালখুশি ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা দিয়ে এবং আইনের তোয়াক্কা না করে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আমি লিখেছিলাম, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসার লাভ বাড়াতে ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের কোনো সমস্যা নেই। প্রকাশ্য স্বজনপ্রীতি, ছোটখাটো দুর্নীতি আর অর্থ ও প্রভাবের বিনিময়ে সুবিধা দেওয়ার সংস্কৃতি—সবই এখানে চলেছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ‘মাগা’ যেভাবে পশ্চিমাদের ভাগ করে ফেলছে২৬ নভেম্বর ২০২৫ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসন প্রথমটির তুলনায় অনেক বেশি চরম। তিনি ও তাঁর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরকারকে এমনভাবে ঢেলে সাজাচ্ছেন, যাতে দুর্নীতি করা সহজ হয়, লাভজনক হয় ও শাস্তিযোগ্য না থাকে। এসবের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থাকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি আর ‘ব্যবস্থা ধ্বংসের’ লক্ষ্য—দুটোই একসঙ্গে এগোচ্ছে।
ট্রাম্পের ‘মিম কয়েন’ তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এর মাধ্যমে বিশ্বের যে কেউ গোপনে তাঁকে অর্থ দিতে পারেন এবং বদলে ব্যক্তিগত সুবিধা পেতে পারেন। তাঁর পরিবারের ক্রিপ্টো ব্যবসা থেকে ইতিমধ্যে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এই লোভী ও লুটেরা মানসিকতা মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর কিছু অলিগার্ক-দুর্নীতিবাজ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে নিয়েছিলেন, যাকে বলা হয় ‘গ্র্যাবিটাইজেশন’ (প্রিখভাতিজাতসিয়া)। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। ট্রাম্প এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন, যেখানে আগে আলাদা থাকা দুটি জগৎ (পশ্চিমা বিশ্ব ও সাবেক সোভিয়েত ব্লক) এখন একে অন্যের সঙ্গে মিশে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে এক হয়ে গেছে।
ট্রাম্প ‘সিস্টেম ভাঙার’ অংশ হিসেবে যে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ (ডিওজিই) গঠন করেছেন, সেটি কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থারই একধরনের অনুকরণ। সোভিয়েত ব্যবস্থায় প্রায়ই দেখা যেত, ক্ষমতাসীন দলের অনানুষ্ঠানিক সংগঠনগুলো সরকারি দপ্তর ও আইনি কাঠামোর ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিত।
ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো কারেন্সির প্রতি আগ্রহ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ আছে, অন্যদিকে তেমনি পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল বা অস্থিতিশীল করার সুযোগও তৈরি হচ্ছে।কংগ্রেসের অনুমোদন বা যাচাই ছাড়াই ইলন মাস্ককে ফেডারেল সরকারের মধ্যে এক নজিরবিহীন ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তাঁর কাজ আইনসম্মত কি না, তা প্রায় গুরুত্বই পায়নি। কমিউনিস্ট শাসনের মতো এখানেও দলের নেতা ছাড়া আর কোনো নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ছিল না।
অবশ্য অনানুষ্ঠানিক ও আইনের বাইরে চলে সরাসরি নেতার কাছে জবাবদিহি করার এমন একটি মডেলের ছোটখাটো আমেরিকান দৃষ্টান্ত আছে। যেমন ১৯৮০-এর দশকের ‘ইরান-কন্ট্রা’ কেলেঙ্কারি।
তখন রিগ্যান প্রশাসন সরকার ও কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে কয়েকজন বিশ্বাসভাজন কর্মকর্তাকে দিয়ে ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করিয়েছিল। সেই অর্থ দিয়ে নিকারাগুয়ার কন্ট্রা বিদ্রোহীদের অর্থায়ন করা হয়, যা কিনা কংগ্রেস আগেই নিষিদ্ধ করেছিল। তবে ইরান-কন্ট্রার সঙ্গে ডিওজিইর একটি বড় পার্থক্য আছে। ইরান-কন্ট্রা ফাঁস হওয়ার পর কংগ্রেস এবং উভয় রাজনৈতিক দল সেটির নিন্দা করেছিল এবং অন্তত কিছু মানুষকে জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু আজ রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস বা সুপ্রিম কোর্ট—কেউই ডিওজিই বন্ধ করার চেষ্টা করেননি। এ ব্যবস্থায় স্বার্থসংঘাতের নিয়মকানুন যেন হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর নিজের পদকে ‘দুধেল গাই’ হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প কোনো গোপনীয়তাই রাখেননি। আর তিনি এটা করতে পারছেন এক পরীক্ষিত সোভিয়েত কৌশলে। সেই কৌশল হলো অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ লোকদের বড় পদে বসানো, যাতে তাঁরা পুরোপুরি তাঁর ওপর নির্ভরশীল থাকেন। তাঁর মন্ত্রিসভার প্রায় হাস্যকর অপেশাদারি সদস্যদের রাজনৈতিকভাবে ‘পুতুলে’ পরিণত করেছে। এক অনুগত, কিন্তু পুরোপুরি জড়িত একটি দলকে নিয়ে (যা প্রথম মেয়াদে সব সময় তাঁর ছিল না) ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে দুর্নীতি ও বিদেশি প্রভাব নজরদারি করা এবং তা ঠেকানোর নিয়ম কার্যকর করা সরকারি দপ্তরগুলো ভেঙে দিচ্ছেন।
ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো কারেন্সির প্রতি আগ্রহ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ আছে, অন্যদিকে তেমনি পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল বা অস্থিতিশীল করার সুযোগও তৈরি হচ্ছে।
বাস্তবতা হলো ক্রিপ্টো কারেন্সি অনেক ক্ষেত্রেই মানি লন্ডারিং ও আইন এড়িয়ে অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই লেনদেনগুলো বেশির ভাগ সময় গোপন থাকে। কে এসব এক্সচেঞ্জ চালায়, কোথায় চালায় বা কারা ব্যবহার করছে—এগুলো অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থাও জানে না। ‘ট্রাম্প ডলার’ নামের কয়েনের দাম যেভাবে হঠাৎ হঠাৎ বেড়ে যায়, এর পেছনে কারা কাজ করছে, তা স্পষ্ট নয়।
সব মিলিয়ে ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর এই অস্বচ্ছ আর্থিক কর্মকাণ্ডই একসময় পুরো ব্যবস্থার জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে। তাঁর প্রথম মেয়াদেই যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি অনেকটা অস্থির হয়ে পড়েছিল। এখন মনে হচ্ছে, তিনি শুধু রাজনীতিই নয়—গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে দিতে চাইছেন। সোভিয়েত যুগের নেতারা হলে হয়তো তাঁর এই কৌশল দেখে অবাক হওয়ার পাশাপাশি মুগ্ধও হতেন।
জেনিন আর ওয়েডেল জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কার স্কুল অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্টের সামাজিক নৃবিজ্ঞানী
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র ক র প ট য ক তর ষ ট র ব যবস থ ক র জন ত ব যবহ ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কুড়িগ্রামে ৯ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাতআংগারিয়া ভাসানীপাড়া গ্রাম থেকে প্রায় ৯ ফুট লম্বা অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে স্থানীয় বলদিয়া বাজারের সাপুড়ে মোজাহারের সহযোগিতায় সাপটি উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন:
নড়াইলে সাপের কামড়ে ইমামের মৃত্যু
সাপের কামড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম না থাকার অভিযোগ
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক সকাল থেকে জমিতে কাজ করছিলেন। তাদের চোখে পড়ে অজগর সাপটি। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান সার্কেল এএসপি মামুন মুন। তিনি স্থানীয়দের সাপটির ক্ষতি না করার আহ্বান জানান। পরে নিরাপদে সাপটি উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কুড়িগ্রাম বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, “অজগর সাপটি স্থানীয় এক সাপুড়ে ধরেছিলেন। আমরা এটি গ্রহণ করে রংপুর বিভাগীয় বন দপ্তরে পাঠিয়েছি।”
ঢাকা/সৈকত/বকুল