সব চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ডাকসু, রাকসু, চাকসু, জাকসু। বিবৃতিতে বলা হয়, একজন মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এই প্রক্রিয়া সংবিধান ও সুশাসনের পরিপন্থী।

আজ মঙ্গলবার এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ, রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার, চাকসুর জিএস সাইদ বিন হাবিব ও জাকসুর জিএস মো.

মাজহারুল ইসলাম।

বিবৃতিতে ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ জন শিক্ষার্থীকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিয়োগের চূড়ান্ত গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাদ পড়া এই শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ প্রস্তুতি, কঠিন প্রতিযোগিতা ও কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে মেধার স্বাক্ষর রেখে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁদের কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার প্রমাণ না থাকলে তাদের গেজেটভুক্ত করার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিজেএস, বিসিএসসহ সব চাকরিতে নিয়োগের ভিত্তি হবে মেধা ও যোগ্যতা। জুলাই বিপ্লব–পরবর্তী সময়েও শুধু পারিবারিক কিংবা বংশীয় রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরির সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে তাঁদের স্বপ্ন কেড়ে নেওয়া সংবিধান, নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও সুশাসনের মৌলিক নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ডাকসু, রাকসু, চাকসু, জাকসুর পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি জানানো হয়৷

দাবিগুলো হলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৭তম বিজেএস গেজেটবঞ্চিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের প্রমাণ না পেলে সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করতে হবে; বিজেএস, বিসিএসসহ সব চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেবল মেধা ও যোগ্যতাকে একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে; পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে অযথা হয়রানি বন্ধ করতে হবে; কাউকে গেজেট থেকে বাদ দিতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে গেজেটবঞ্চিত ব্যক্তিদের নিজেদের বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দিতে হবে এবং আরোপিত অভিযোগের যথাযথ জবাব প্রদান করতে সমর্থ হলে কোনো ধরনের হয়রানি ব্যতীত দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের গেজেটভুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন‘জজের মা’ ডাক শোনার আনন্দ মিলিয়ে গেল কান্নায়৩ ঘণ্টা আগে

উল্লেখ্য, বাদ পড়া ১৩ জন হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তানসেনা হোসেন মনীষা, অনিক আহমেদ, মাহমুদুল হোসেন মুন্না ও গগন পাল; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিশাত মনি, নাহিম হাসান, রেজাউল ইসলাম ও সাজ্জাদুল হক; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইমন সৈয়দ; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মামুন হোসেন; গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদিকুর রহমান; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুব্রত পোদ্দার এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হুমায়রা মেহনাজ। আরেকজন প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁর পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জ এস

এছাড়াও পড়ুন:

‘জজের মা’ ডাক শোনার আনন্দ মিলিয়ে গেল কান্নায়

নওগাঁর মমতাজ বেগম। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ এক গৃহিণী। ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন। ১৭তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে তাঁর বড় ছেলে মাহমুদুল হোসেন মুন্নার নাম আসতেই পাড়াপ্রতিবেশীরা তাঁকে ‘জজের মা’ বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন। ছেলের সাফল্যে গর্বে বুক ভরে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে মমতাজ বেগমের সেই আনন্দ এখন শুধুই বিষাদ।

গত ২৭ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয় সহকারী জজ নিয়োগের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে। সেখানে সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ জনের মধ্যে স্থান হয়নি মাহমুদুল হোসেনের। কেন বাদ পড়েছেন, এর কোনো যৌক্তিক কারণও উল্লেখ করা হয়নি। সেই থেকে মমতাজ বেগমের কান্না আর থামছে না। রাষ্ট্রের কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘তাঁদের চোখের জলের কি কোনো মূল্য নেই?’

শুধু মমতাজ বেগমের ছেলে নন, ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থী। অভিযোগ উঠেছে, সংবিধান, মেধা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা উপেক্ষা করে ‘নেতিবাচক’ পুলিশি প্রতিবেদনের পুরোনো প্রথা মেনেই আটকে দেওয়া হয়েছে তাঁদের নিয়োগ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কোর্স, আবেদনসহ জেনে নিন সব৫ ঘণ্টা আগে১৩ জন প্রার্থীর নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়নি। অস্পষ্ট পুলিশি প্রতিবেদন থাকার কারণে পুনরায় মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগ কিছুদিন পরে হলেও তা সিনিয়রিটিতে ব্যাঘাত করবে নাআসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা স্বপ্নভঙ্গ ও পারিবারিক হাহাকার

মমতাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। ওদের বাবা একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। টানাটানির সংসারে ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব দুঃখ ভুলে থাকতাম। ছেলেরাও আমাদের আশাহত করেনি। বড় ছেলে এসএসসি ও এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়। রাজনৈতিক দলাদলি অপছন্দ বলে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠেনি। টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালিয়েছে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার সোনার ছেলে মেধার স্বাক্ষর রেখে জজের পরীক্ষায় টিকল, আর এখন শুনছি পুলিশ নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা রাজনীতির সাতেপাঁচে কোনো দিন ছিলাম না। তবু কেন এই অপরাজনীতির শিকার হতে হলো? জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছোট ছেলেকে ঘরে আটকে রাখিনি। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও মিছিলে পাঠিয়েছি...। কিন্তু আমার ছেলের সঙ্গে যে অন্যায় হলো, তার প্রতিকার কে করবে?’

বাদ পড়া মাহমুদুল হোসেন মুন্না বলেন, ‘নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। চূড়ান্তভাবে সফলও হয়েছিলাম। কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও আমাকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো, তা মেনে নেওয়া কঠিন। মা–বাবার মুখের দিকে এখন তাকাতে পারছি না।’

রাষ্ট্রীয় অসংগতির এক নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাইমন সৈয়দের ঘটনায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোয় যখন অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন, তখন তরুণ আইনজীবী সাইমন প্ল্যাকার্ড হাতে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন। ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘চট্টগ্রামে কোনো এইচএসসি পরীক্ষার্থী কারাগারে থাকলে দ্রুত যোগাযোগ করুন। জুলাই যোদ্ধাদের সম্পূর্ণ বিনা ফিতে মুক্ত করব ইনশা আল্লাহ।’

অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের আমলেও জজ নিয়োগের গেজেট থেকে বাদ পড়েছেন সাইমন। এর আগে চারবার মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। পঞ্চমবারের চেষ্টায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে আর্থিক লেনদেনের যে গুঞ্জন শোনা যায়, সাইমনের বাদ পড়া সেই সন্দেহকেই জোরালো করছে।

আরও পড়ুনসহকারী শিক্ষক নিয়োগে আবেদন সাড়ে ৭ লাখ, প্রতি পদে ৭৩ প্রার্থী, পরীক্ষা কবে২৬ নভেম্বর ২০২৫পুরোনো বৃত্তেই আটকে আছে পুলিশ ভেরিফিকেশন

গেজেটভুক্ত না হওয়া আরেক প্রার্থী অনিক আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ট্যাগ এড়াতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জীবন মেসে কাটিয়েছি। হলে উঠিনি। তবু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ধুয়া তুলে আমাকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে লিখিত এবং চলতি বছরের শুরুতে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১০২ জনকে চূড়ান্ত সুপারিশ করে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। দীর্ঘ ১০ মাস পর গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় যে গেজেট প্রকাশ করে, সেখানে ৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মানববন্ধন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘জজের মা’ ডাক শোনার আনন্দ মিলিয়ে গেল কান্নায়