পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা সেই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ধানবান্ধি এলাকার জে সি রোডের মতিন সাহেবের ঘাট-সংলগ্ন স্থান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার তরুণের নাম তুষার হোসেন (২১)। তিনি ঈশ্বরদী পৌর শহরের ভেলুপাড়া মহল্লার আবু তাহেরের ছেলে। তিনি জামায়াতের কর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁর কাছ থেকে একটি পিস্তল ও দুটি গুলি জব্দ করেছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে তুষার পলাতক ছিলেন। তাঁর পরিচয় শনাক্তের পর থেকে তাঁকে খুঁজছিল পুলিশ। স্থানীয় সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তুষার নিজের হেফাজতে থাকা একটি অবৈধ পিস্তল ও দুটি কার্তুজ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভেলুপাড়া এলাকায় মাটি খুঁড়ে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় সেগুলো জব্দ করা হয়।

জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তুষারের বিরুদ্ধে সকালে ঈশ্বরদী থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে। বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনঈশ্বরদীতে জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা, গ্রেপ্তার ৫৩০ নভেম্বর ২০২৫

ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আবদুর নূর প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর ওই যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাঁর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে। তিনি জামায়াতের কর্মী বলে জানা গেছে।

পাবনা-৪ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী জেলা শাখার আমির আবু তালেব মণ্ডল। দুজনই দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। দুই দিন আগে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুনপাবনায় দুই দলের সংঘর্ষ: গুলি ছোড়া যুবককে নিয়ে বিএনপি–জামায়াতের পাল্টাপাল্টি দাবি২৮ নভেম্বর ২০২৫

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জামায়াতের প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডল ওই এলাকায় গণসংযোগে যান। তখন দুই পক্ষের কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি গুলি ছোড়া হয় এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। ঘটনার সময় এক তরুণকে পিস্তল হাতে গুলি ছোড়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জামায়াত ও বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঈশ্বরদীতে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২৫২৭ নভেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র কর স ঘর ষ ব এনপ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম স্থায়ী কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ৪৩ বছর

১৯৮২ সালের ২ ডিসেম্বর চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছিল। এই দিনে চিকিৎসকেরা প্রথমবারের মতো এক রোগীর দেহে একটি স্থায়ী কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড স্থাপন করেন। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে প্রযুক্তির এক কঠিন লড়াই, যা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষের জন্য আশার আলো নিয়ে আসে। আজ থেকে ৪৩ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উটাহ হেলথ কেয়ারে সম্পন্ন হওয়া সেই ঐতিহাসিক সার্জারি আজও চিকিৎসাক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।

দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগে ভুগছিলেন ডেন্টাল সার্জন বার্নি ক্লার্ক। জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় এই ৬১ বছর বয়সী রোগী স্বেচ্ছায় পরীক্ষামূলকভাবে জারভিক-৭ নামের সেই কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।তাঁর অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন চিকিৎসক উইলিয়াম ডিভ্রিস ও তাঁর দল। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার দীর্ঘ ও জটিল অস্ত্রোপচারের পর কৃত্রিমভাবে তৈরি এই অঙ্গ বার্নি ক্লার্কের অকেজো হৃৎপিণ্ডের স্থানে বসানো হয়। জারভিক-৭ হৃৎপিণ্ডটি ছিল বায়ুচালিত, যা কাজ করার জন্য একটি বাহ্যিক কম্প্রেসরইউনিটের সঙ্গে টিউবের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকত। এই অস্ত্রোপচারসফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে মানুষ একটি যান্ত্রিক হৃৎপিণ্ড নিয়েও বেঁচে থাকতে পারে।

কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডটির নাম ছিল এর অন্যতম উদ্ভাবক বিজ্ঞানী রবার্ট জারভিকের নামানুসারে জারভিক-৭। এটি ছিল অ্যালুমিনিয়াম ও পলিউরেথেন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি একটি দুই প্রকোষ্ঠের ভেন্ট্রিকুলার পাম্প। বার্নি ক্লার্ক এই কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড নিয়ে ১১২ দিন বেঁচে ছিলেন।

বার্নি ক্লার্কের ওপর চালানো সেই পরীক্ষা ছিল এক সাহসী বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ। প্রথম প্রতিস্থাপনের পরবর্তী চার দশকে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড-প্রযুক্তিতে আমূল পরিবর্তন দেখা গেছে। জারভিক-৭-এর মতো বায়ুচালিত যন্ত্রের অসুবিধা কাটিয়ে ওঠার জন্য গবেষকেরা ক্রমাগত কাজ করেছেন।

সূত্র: উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ