কুড়িগ্রামে গাছের ডালে ৯ ফুট লম্বা অজগর
Published: 2nd, December 2025 GMT
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারিয়ার ভাসানীপাড়ায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা প্রায় ৯ ফুট লম্বা একটি অজগর উদ্ধার করেছে পুলিশ ও বন বিভাগ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাপটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেটিকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, দুপুরে মাঠে কাজ করার সময় তাঁরা সাপটিকে দেখতে পান। খবর পেয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে বন বিভাগ ও সমাজসেবা বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। বলদিয়া বাজারের সাপুড়ে মোজাহারও অভিযানে যোগ দেন। উৎসুক জনতার চাপ বাড়তে থাকায় পুলিশ সাপটির চারপাশে সুরক্ষাবেষ্টনী তৈরি করে।
ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুনতাসির মামুন বলেন, কয়েক দিন আগে ভারতের কালজানী নদী দিয়ে কাঠসহ বিভিন্ন ভাসমান বস্তু ভেসে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, সে সময় ভেসে আসা কোনো গাছের সঙ্গেই অজগরটি এপারে এসেছে। পরে অজগরটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাপটির শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। পর্যবেক্ষণ শেষে এটিকে নিরাপদ বন্য পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুনো ব্যাঙের ভবিষ্যদ্বাণী ও পাহাড়ে রাজনৈতিক সংকট
মারমা ও রাখাইন লোকসাহিত্যে ‘তা-বং’ বলে একটি শব্দ আছে। এটি একধরনের ভবিষ্যদ্বাণী। এই ভবিষ্যৎবাণীগুলো প্রবাদ প্রবচন, কবিতা বা গানের আকারে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়।
কিছু ক্ষেত্রে এগুলোকে আত্মিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চাকমা, রাখাইন, মারমা, খিয়াংসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকসাহিত্যে একটি গল্প প্রচলিত আছে।
গল্পে একটি কুনো ব্যাঙের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বলা হয়েছে, যার দ্বারা একটি রাজনৈতিক দুর্যোগের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
রংরাং পাখির আর্তনাদএক বনে এক কুনো ব্যাঙ বাস করত। সে একদিন শহরে বেড়াতে যায়। ফিরে এসে ব্যাঙটি তার ছোট পাখি বন্ধুকে জানায়, অচিরেই মহা ঝড় আসবে, ভয়ানক ভূমিকম্প হবে, মাটির নিচের বুনো আলু সাত টুকরা হয়ে যাবে, পাহাড়ের নারীরা সমতলে স্থানান্তরিত হবে এবং সমতলের নারীরা স্থানান্তরিত হবে পাহাড়ে। সর্বোপরি মানবসমাজ চার ভাগে ভাগ হবে। আর এই দুর্যোগে ছোটদের অস্তিত্ব কেবল তখনই রক্ষা পেতে পারে, যদি তারা বড়দের কাছে আশ্রয় পায়।
এদিকে ঝড় শুরু হলে ভয়ার্ত ছোট পাখিটি রংরাং নামক পাখির হাঁ করা মুখ দিয়ে ঢুকে পড়ে আর পশ্চাদ্দেশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে রংরাং পাখি বিকট স্বরে আর্তনাদ করে ওঠে। তার আর্তনাদ থেকে কিছু ঘটনাপ্রবাহের জন্ম হয়। চমকে গিয়ে একটি বানর তার হাতে থাকা কুমড়া ফেলে দেয় গাছের নিচে শুয়ে থাকা একটি অজগরের ওপর; এতে অজগর ক্ষিপ্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী এক মুরগির ডেরায় গিয়ে তার সব ডিম সাবাড় করে ফেলে; এই ঘটনায় শোকে-দুঃখে মুরগি গিয়ে একদল পিঁপড়ার বাসা লন্ডভন্ড করে দেয়; এতে পিঁপড়ার দল রাগের মাথায় এক শূকরের গোপনাঙ্গে গিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়; আর হতবিহ্বল শূকর ছুটে গিয়ে এক বিধবার জুমখেতের সব ফসল নষ্ট করে ফেলে; দুঃখভারাক্রান্ত বিধবাটি রাজার কাছে গিয়ে নালিশ করে। আর রাজা তদন্ত করার পর কুনো ব্যাঙকে দোষী সাব্যস্ত করে। কেননা তার ভবিষ্যদ্বাণী থেকেই এসব দুর্ঘটনার সূত্রপাত।
আরও পড়ুনপার্বত্য চট্টগ্রাম: বাড়ির পাশে আরশিনগর৩০ মার্চ ২০২২শিশুদের জন্য রচিত বিনোদনমূলক গল্প হলেও এর গভীরে যেন লুকিয়ে আছে একধরনের আগাম বার্তা। এটি পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক সংকটকে নির্দেশ করে, যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুনর্বাসন, পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ, ভূমি বেদখল ও বৈরী রাষ্ট্রীয় নীতির কারণে সৃষ্ট আদিবাসীদের নানা বঞ্চনার গল্প।
কুনো ব্যাঙের ভবিষ্যদ্বাণী, ‘পাহাড়ের নারীরা সমতলে স্থানান্তরিত হবে এবং সমতলের নারীরা স্থানান্তরিত হবে পাহাড়ে’ মূলত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়ে পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার প্রতিচ্ছবি।
ভূগর্ভস্থ বুনো আলুর সাত ভাগে বিভাজনের কথা যেন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের ‘ভাগ করো। শাসন করো’ নীতির ফলে পাহাড়ে তৈরি হওয়া বিভিন্ন দল ও উপদলের ভেতর বিভক্তির রাজনীতিকেই নির্দেশ করে।
১৯৭১ সালের পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহে জাতীয়তাবাদ ও রাজনৈতিক বঞ্চনার এক স্থায়ী চক্র বিদ্যমান। ১৯৯৭ সালের চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং কাঠামোগত বৈষম্য বেড়েছে। কুনো ব্যাঙের ভবিষ্যদ্বাণী যেন এই রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতীক। ভূমি হারানো, অস্তিত্বের সংকট ও রাজনৈতিক বঞ্চনা যেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন বাস্তবতা।জনমিতিগত প্রকৌশলজিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে পাহাড়ে সরকারি উদ্যোগে ১৯৭০–৮০ দশকে চার লাখেরও বেশি বাঙালি পরিবারকে পাহাড়ে নিয়ে আসা হয়। এর ফলে পাহাড়ের জনমিতিগত বৈশিষ্ট্য পাল্টে যায় এবং বিপুলসংখ্যক পাহাড়ির ভূমি বেহাত হয়ে যায়। ৭০ হাজারেরও বেশি পাহাড়ি মানুষ ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে। গুচ্ছগ্রাম তৈরি ও স্থানান্তর, ভূমি বেদখল ও ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ, বিদ্রোহ দমন প্রক্রিয়া, নারীর প্রতি সহিংসতা, গণহত্যা, ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন—সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক গভীর রাজনৈতিক সংকট।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সইয়ের মুহূর্ত