নতুন ব্যবসা চালু করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন বহু উদ্যোক্তা। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

জিইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন যদি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক গতিপথ ঠিক করে এবং নতুন সরকার এসে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, আর্থিক ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পাবে।

জিইডির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ দেখিয়েছে জিইডি। জিইডি বলছে, একদিকে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে স্থায়ী মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত স্থানীয় চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভালো অবস্থায়

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বেড়েছে, যা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান ভালো হওয়ার বড় কারণ।

জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বহির্বাণিজ্যের সূচকে অস্থিরতা ছিল। রপ্তানি আয়ের সূচকও ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয়ে পতন দেখা যায়। তবে অক্টোবরে এই সূচকের অবস্থানে উন্নতি দেখা যায়। তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানির সূচকে বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ধীরগতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে উন্নতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। এর কারণ খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহের শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা ও আমদানি করা পণ্যের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার বড় কারণ হচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ৪৭ শতাংশ

খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে চাল। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম। আর মাছ ও মাংসের ভূমিকা ছিল যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে পর্যাপ্ত মৌসুমি সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির দাম কম ছিল। তাই সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সবজি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তর জ ত ক ব ণ জ য অবস থ দশম ক বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সাত কলেজের সমস্যা নিয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির হুমকি শিক্ষকদের

ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘শাটডাউন’সহ কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর সর্বস্তরে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজায় অবস্থিত শিক্ষাবিদ ইনস্টিটিউটে সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। লিখিত বক্তব্য পড়েন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও এসব কলেজে কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকেরা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। চূড়ান্ত অধ্যাদেশ, পাঠ্যসূচি ও প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারিত না হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—উভয়েই বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল বা কাঠামোর ফলে নানাবিদ সংকট তৈরি হবে বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।

এসব নিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিনে আগামীকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে গণজমায়েত, ৩ ডিসেম্বর সারা দেশের সব সরকারি কলেজে মানববন্ধন, ৪ ডিসেম্বর পরীক্ষা বন্ধসহ সাত কলেজে কর্মবিরতি এবং ৬ ডিসেম্বর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশ করা হবে।

এ ছাড়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মতামত ও দাবি উপেক্ষা করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের সব সরকারি কলেজ ও দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি (টোটাল শাটডাউন) শুরু করা হবে বলে আজকরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।

আগে থেকেই ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজে সংকট বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়; বাকি পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—তিন স্তরেই পাঠদান হয়। এগুলোতে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। সাত কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনঢাকার সাত কলেজ: বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর আগেই তীব্র সেশনজটে শিক্ষার্থীরা ২৩ নভেম্বর ২০২৫

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় কার্যক্রম চলছে।

সম্প্রতি সাত কলেজকে একীভূত করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সরকারি পরিকল্পনা আলোচনায় আসে। কিন্তু এর কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। সংকট কাটার পরিবর্তে নতুন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনও চলছে। সংকটের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা পড়েছেন তীব্র সেশনজটে।

আরও পড়ুনসাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুয়েট ভর্তি পরীক্ষা: জেনে নিন ১০৬৫ আসনের খুটিনাটি
  • নারায়ণগঞ্জে পানি সরবরাহ খাতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন 
  • সাত কলেজের সমস্যা নিয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির হুমকি শিক্ষকদের
  • ছাত্র সংসদ নির্বাচন হঠাৎ স্থগিত, উপাচার্যের দপ্তরের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান  
  • সরকার কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের অধিকারের তোয়াক্কা করছে না: জোনায়েদ সাকি
  • বাংলাদেশে এইচআইভির নীরব বিস্তার, আগামী প্রজন্ম কি নিরাপদ?
  • মুক্তিযুদ্ধের সরল গল্পের বাইরের গল্প
  • এবার পদ্মা ও মেঘনা কোম্পানিতে ডিজেল ‘গায়েব’, দেড় লাখ লিটার গেল কোথায়
  • পোশাক, ইস্পাত, সারসহ শিল্প খাতে উৎপাদন ৩০–৫০% কমেছে: ঢাকা চেম্বার সভাপতি