ইমরান খান সুস্থ আছেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে জানালেন বোন উজমা
Published: 2nd, December 2025 GMT
পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পুরোপুরি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বোন উজমা খান। আজ মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডিতে আদিয়ালা কারাগারে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
উজমা খান বলেন, ‘আমি বোনদের (আলিমা খান ও নোরিন খান) সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানাব।’
আজই উজমা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান। পাকিস্তানের আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ তাঁকে এ অনুমতি দিয়েছে।
আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও দলীয় নেতৃত্ব ও পরিবারের সদস্যদের ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিল না। এরপর থেকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল।
এর আগে দলটি ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে বিক্ষোভ কর্মসূচির হুমকি দেয়। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, সেখান থেকে তারা ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার দাবি নিয়ে কারাগার অভিমুখে রওনা হবেন।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নন, অন্যান্য বন্দীর নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁরা আরও অভিযোগ করেছেন, ইমরান খানের সঙ্গে আগে যারা দেখা করেছেন, তাঁরা তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমর ন খ ন র
এছাড়াও পড়ুন:
স্মার্টফোনে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাপ বাধ্যতামূলক করেছে মোদি সরকার, এ নিয়ে কেন এত উদ্বেগ
ভারতে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সব প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনের সময় স্মার্টফোনে সরকারি সাইবার নিরাপত্তা অ্যাপ ইনস্টল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের কারণে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সরকারি নজরদারি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গত সপ্তাহে পাস হওয়া আদেশটি গতকাল সোমবার প্রকাশ্যে আসে। এতে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারকদের ৯০ দিনের মধ্যে সব নতুন ডিভাইসে সরকারের ‘সঞ্চার সাথি’ অ্যাপটি যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদেশে আরও বলা হয়েছে, অ্যাপটির ‘কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় বা সীমাবদ্ধ করা যাবে না।’
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নাগরিকেরা যেন ফোন যাচাই করতে পারেন এবং টেলিকম সম্পদের অপব্যবহারের সন্দেহ হলে অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য এই অ্যাপ প্রয়োজন। তবে সরকারের এই উদ্যোগ সমালোচনার মুখে পড়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ।
অ্যাপটির গোপনীয়তা নীতিমালায় বলা হয়েছে, এটি ফোনকল করা ও পরিচালনা, বার্তা পাঠানো, কল ও বার্তার লগ, ছবি, ফাইল এবং ফোনের ক্যামেরায় প্রবেশ করতে পারবে।
ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন নামের স্থানীয় একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বলেছে, ‘সহজ কথায়, এই নির্দেশ ভারতে বিক্রি হওয়া প্রতিটি স্মার্টফোনকে রাষ্ট্র-নির্ধারিত সফটওয়্যার রাখার মাধ্যমে পরিণত করবে, যা এই সফটওয়্যার ব্যবহারকারীরা চাইলেও প্রত্যাখ্যান, নিয়ন্ত্রণ বা সরাতে পারবেন না।’
ব্যাপক সমালোচনার মুখে ভারতের যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া অবশ্য জানিয়েছেন, মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা চাইলে অ্যাপটি মুছে (আন-ইনস্টল) ফেলতে পারবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘এটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী ও গণতান্ত্রিক একটি ব্যবস্থা। ব্যবহারকারীরা চাইলে অ্যাপটি সক্রিয় করে এর সুবিধা নিতে পারেন। আর না চাইলে যেকোনো সময় মোবাইল ফোন থেকে সহজেই এটি মুছে ফেলতে পারেন।’
তবে সরকারি আদেশে যেখানে বলা হয়েছে অ্যাপটির কার্যকারিতা ‘নিষ্ক্রিয় বা সীমাবদ্ধ করা যাবে না’, সেখানে কীভাবে এটি মুছে ফেলা সম্ভব, সেই বিষয় তিনি স্পষ্ট করেননি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে চালু হওয়া ‘সঞ্চার সাথি’ অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ডিভাইসের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর পরীক্ষা, হারানো বা চুরি যাওয়া ফোন সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে এবং সন্দেহজনক প্রতারণামূলক যোগাযোগ চিহ্নিত করতে পারছেন।
ভারতের টেলিকম বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নকল বা পরিবর্তিত আইএমইআই নম্বরযুক্ত মোবাইল হ্যান্ডসেট সাইবার নিরাপত্তার জন্য ‘গুরুতর হুমকি’ তৈরি করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ভারতে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের একটি বড় বাজার রয়েছে। সেখানে চুরি যাওয়া বা কালো তালিকাভুক্ত ফোনও বিক্রি হতে দেখা যায়।’
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, উৎপাদনের সময় ইনস্টল করা অ্যাপটি ডিভাইস চালুর সময় ব্যবহারকারীর কাছে ‘সহজে দৃশ্যমান ও ব্যবহারযোগ্য’ হতে হবে। স্মার্টফোন প্রস্তুতকারকদের কারখানায় থাকা, কিন্তু এখনো বিক্রি হয়নি, এমন ডিভাইসেও সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে অ্যাপটি যুক্ত করার ‘চেষ্টা’ চালাতে বলা হয়েছে। সব কোম্পানিকে ১২০ দিনের মধ্যে এই আদেশ পালনের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
ভারতের সরকার বলছে, এই পদক্ষেপ টেলিকম খাতের সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাপটি ইতিমধ্যে সাত লাখের বেশি হারানো ফোন উদ্ধার করতে সাহায্য করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপটির বিস্তৃত পরিসরে নানা অনুমতি নজরদারির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক প্রশান্ত কে রায় বলেন, মূল উদ্বেগ হলো, ভবিষ্যতে অ্যাপটিকে ডিভাইসে কতটুকু প্রবেশাধিকার দেওয়া হতে পারে, তা নিয়ে। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি না, অ্যাপটি কী কাজ করছে। তবে এটি টর্চলাইট থেকে শুরু করে ক্যামেরা পর্যন্ত, প্রায় সবকিছুর অনুমতি চাইছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি নিজেই একটি উদ্বেগের বিষয়।’
প্রশান্ত কে রায় আরও বলেন, এই আদেশ মেনে চলা ফোন নির্মাতাদের জন্য কঠিন হবে। কারণ, এটি অ্যাপলসহ বেশির ভাগ কোম্পানির নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অ্যাপল এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, কোম্পানিটি এই নির্দেশ মানতে চায় না এবং ‘দিল্লিকে তাদের উদ্বেগের কথা জানাবে।’
অবশ্য ডিভাইস যাচাই–সংক্রান্ত নিয়ম কঠোর করার ক্ষেত্রে ভারতই একমাত্র দেশ নয়। গত আগস্টে রাশিয়া সব ফোন ও ট্যাবলেটে রাষ্ট্রসমর্থিত ‘ম্যাক্স মেসেঞ্জার’ অ্যাপ আগে থেকে ইনস্টল করা বাধ্যতামূলক করেছে। সেটি নিয়েও একই ধরনের গোপনীয়তা ও নজরদারির উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।