পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পুকুরে ডুবিয়ে আটটি কুকুরছানাকে মারার ঘটনায় সরকারি বাসভবন ছেড়েছেন উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন।

সোমবার (০১ ডিসেম্বর) উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে এ নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করা হয়। পরে আজ মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) তিনি পরিবার নিয়ে সরকারি বাসভবন ছেড়ে দিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছেন। 

আরো পড়ুন:

কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ তারকারা

পাবনায় ৮ কুকুরছানা পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

মনিরুজ্জামান মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘‘সোমবার (১ নভেম্বর) তাকে বাসা ছেড়ে দিতে নোটিশ দেওয়া হয়। আজ তিনি বাসা খুঁজে নিয়ে মালামাল নিয়ে সরকারি বাসভবন ছেড়ে চলে গেছেন।’’ 

এদিকে, কুকুরছানা হত্যার দায়ে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘‘কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।’’ 

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. স. ম আব্দুন নুর বলেন, ‘‘মামলার এজাহার লেখার কাজ চলছে। এজাহার পেলে মামলা রুজু হবে।’’ 

দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের একটি কোণায় থাকতো এই কুকুর। কুকুরটি বিশ্বস্ত হওয়ায় মানুষজন তাকে খুব ভালবাসত। নাম রাখা হয় টম। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে তার ছানাগুলো না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থায় ছুটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুর টমকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তার স্ত্রী আটটি কুকুর ছানাকে বস্তার মধ্যে ভরে হত্যার উদ্দেশ্য রবিবার রাতের কোনো এক সময় উপজেলা পরিষদের পুকুরে ফেলে দেন। সোমবার সকালে মরা কুকুর ছানাগুলো পাওয়া যায়। দুপুরের পর মৃত কুকুর ছানাগুলোকে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটি চাপা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাসানুর রহমান নয়ন বলেন, দরজার সামনে ডাকাডাকি করায় তার স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বাসার কাজের মহিলাকে দিয়ে কুকুরছানাগুলো বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল।

মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার সামনে মা কুকুরটিকে ঘুরতে দেখা যায়। বারবার সরানোর চেষ্টা করলেও সরানো যায়নি। পরে সরানো গেলেও সারা দিন উপজেলা চত্বরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

ঢাকা/শাহীন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব সভবন ছ ড় কর মকর ত ড স ম বর হত য র স মব র ন নয়ন সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগরে ‘বাউলের দ্রোহ’ গানের আসর বন্ধের অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে

সারা দেশে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গতকাল রোববার বিচারগানের আসরের আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। তবে অনুষ্ঠানটি জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গতকাল রাত পৌনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।


প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছে। গানের উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছিল—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজকদের অনুরোধ করলে তাঁরা গান বন্ধ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, আয়োজক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ‘বাউলের দ্রোহ’ শিরোনামে গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত ৯টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি শিক্ষার্থীভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে গানের উচ্চ শব্দে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোস্ট করেন। রাত ১০টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে যায়।

প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।”নবীন কিশোর গোস্বামী, আয়োজকদের একজন

এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আয়োজকদের শব্দ কমানোর এবং রাত ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানান। এরপর আয়োজকেরা শব্দ কমিয়ে অনুষ্ঠান চালাতে থাকেন।

রাত ১টার দিকে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দ বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান চালাবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে সোয়া একটার দিকে তাঁরা হ্যান্ডমাইক ও ছোট সাউন্ডবক্স নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে গান বাজাতে থাকেন।

রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।সিফাতউল্লাহ সিফাত, ভিপি, তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদ

একপর্যায়ে প্রক্টর পরিবহন চত্বরে ‘বাউলের দ্রোহের’ মঞ্চে গিয়ে আয়োজকদের গান বন্ধ করতে বলেন। তখন আয়োজকদের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, এ সময় প্রক্টর দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদকে গালিগালাজও করেন।

আয়োজকদের অন্যতম নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী নবীন কিশোর গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের সাউন্ড ছিল খুবই কম। শুধু মনিটরে সাউন্ড ছিল। তারপরও প্রক্টর এসে গান বন্ধ করতে বললে আমরা বলি, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে যেহেতু পালাগান, এটা শেষ হলেই বন্ধ করে দেব। কিন্তু প্রক্টর ডিরেক্ট এসে বলছেন, “প্রোগ্রাম বন্ধ, গান থামাও।” অনেক মানুষ সাক্ষী আছেন।’

পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।এ কে এম রাশিদুল আলম, প্রক্টর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অন্যদিকে গভীর রাতে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান বাজান কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সিফাতউল্লাহ সিফাত বলেন, ‘রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।’

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে বাউল সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বললেন, পেটালে পিটুনি খাব২৪ নভেম্বর ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শব্দ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। কারণ, তাদের পরীক্ষা চলছে, এখন পরীক্ষার মৌসুম। অনেক শিক্ষার্থী গানের উচ্চ শব্দে মাইগ্রেনের সমস্যার কথাও জানিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজকদের শব্দ কমাতে বলেছিলাম। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য অনুরোধ করলে তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় চায় এবং সে সময়ের পর আমার অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে।’

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আরেকদল শিক্ষার্থীর গান বাজানো প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, ‘পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দের গানের প্রতিবাদস্বরূপ একদল শিক্ষার্থী মাননীয় ভিসি স্যারের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁরাও কিছুটা উচ্চ স্বরে কিছু অ্যাকটিভিটিস করেছেন। সেগুলোও আমরা তাঁদের কাছে আশা করি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনায় ৮ কুকুরছানা পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগ
  • জাহাঙ্গীরনগরে ‘বাউলের দ্রোহ’ গানের আসর বন্ধের অভিযোগ প্রশাসনের বিরুদ্ধে
  • বন্দীদের পোশাকে কলার স্তূপে ‘নেতানিয়াহুকে বসিয়ে’ বিক্ষোভ