চামড়াশিল্প, জুতা তৈরির যন্ত্রপাতি, জুতার বিভিন্ন উপকরণ, রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক পণ্য নিয়ে রাজধানী ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। ৪ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ‘লেদারটেক বাংলাদেশ ২০২৫’ নামে আয়োজিত এ প্রদর্শনী শুরু হবে। ১১তম বারের মতো আয়োজিত এ আসরে বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশনস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

আয়োজকেরা জানান, প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ মোট আটটি দেশ থেকে প্রায় ২০০টি কোম্পানি তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে বিনা মূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন। প্রদর্শনীতে কাউন্সিল ফর লেদার এক্সপোর্টস ইন্ডিয়া (সিএলই), পাকিস্তান ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিএ), ইন্ডিয়া ফুটওয়্যার কম্পোনেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইফকোমা) ও চীনের গুয়াংডং সু–মেকিং মেশিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) আলাদা প্যাভিলিয়ন থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লেদারটেক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১১ বছর আগে। শুরুতে এটি ছিল একটি প্রযুক্তি প্রদর্শনী প্ল্যাটফর্ম। সময়ের সঙ্গে এ আয়োজনটি বাংলাদেশের চামড়া, জুতা ও সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্ভাবন ও বাজার সম্প্রসারণের অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের পরই বাংলাদেশের চামড়া ও জুতাশিল্পের অবস্থান। বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের ৩ শতাংশ ও বৈশ্বিক চামড়ার মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে এই শিল্প। শিল্পনীতি ২০২২–এ রপ্তানি বহুমুখীকরণের অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চামড়াকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঘটককে বাঘে খায় না

এক কনের বাড়ি ছিল ধাড় দেশে। আর বরের শিলদাতে। বড় একটি জঙ্গলের পাশেই একত্রে এসে মিশেছে ধাড় দেশের নদী ও শিলদার নদীটি। কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে যাওয়ার একমাত্র পথটি ছিল সে জঙ্গলের ভেতর দিয়েই। ও পথেই কনেপক্ষের ঘটক প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছিল বরের বাড়িতে। ওই জঙ্গলে বাঘের উপদ্রব হতো প্রায়ই। জঙ্গলের পাশ দিয়ে চলে গেছে আরেকটি ছোট্ট নদী। ঘটক বরের বাড়ি যাচ্ছিল নদীর ধার দিয়েই।

দূর থেকে ঘটককে যেতে দেখে এক বাঘিনী। সে হুংকার দিয়ে লাফিয়ে পড়ে তার সামনে। হঠাৎ বাঘিনীকে দেখে ঘটকের প্রাণ যায় যায়। বাঘিনী ঘটককে দুই থাবার মধ্যে নিয়ে খেলা করতে থাকে। এটাই তাদের নিয়ম। শিকারকে সঙ্গে সঙ্গে খায় না।

সে সময় বাঘিনী ঘটককে জিজ্ঞেস করল, কে হে তুমি? কোথায় যাচ্ছিলে?

বাঘিনীর কথায় ঘটক একটু সাহস পেল। ভয়ে ভয়ে সে বলল, মহারানি, আমি ধর্মের কাজে যাচ্ছিলাম, আমাকে তুমি মেরো না।

বাঘিনীর বেশ কৌতূহল হলো। সে বলল, কেমন ধর্মের কাজ হে?

ঘটক বলল, আমি দুটি পরিবারকে একত্র করি। দুজন আলাদা লোককে একজনে পরিণত করি।

বাঘিনী বলে, তাহলে আমার জন্যও স্বামী জোগাড় করে দাও। এক যুগ আগে আমার স্বামীকে দুষ্ট লোকেরা মেরে ফেলেছে। সেই থেকে আমি একা। সুযোগ বুঝে ঘটক বলল, তাহলে তো আমাকে কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে দিতে হবে মহারানি।

বাঘিনী বলল, কেমন করে সেটা করো?

ঘটক বলে, যার বউ নেই তাকে বউ জোগাড় করে দিই। যার স্বামী নেই তার জন্য স্বামী জোগাড় করে দিই।

ঘটকের উত্তর শুনে বাঘিনী বলে, তাহলে আমার জন্যও স্বামী জোগাড় করে দাও। এক যুগ আগে আমার স্বামীকে দুষ্ট লোকেরা মেরে ফেলেছে। সেই থেকে আমি একা।

সুযোগ বুঝে ঘটক বাঘিনীর কথায় রাজি হলো। সে বলল, তাহলে তো আমাকে কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে দিতে হবে মহারানি।

আরও পড়ুনচন্দ্র কেন কম আলো দেয়২৯ নভেম্বর ২০২৫

তাকে বিশ্বাস করে বাঘিনী তাকে ছেড়ে দিল। ঘটকের ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। ছাড়া পেয়ে সে গেল সেই গ্রামে। অনেক খুঁজে গ্রামের ভেতর পেল একটা দোকান। দোকান থেকে দুটো নতুন বস্তা কিনে নিল। তা সেলাই করার জন্য কিনল একটি সুই ও দড়ি। ওই গ্রামের শেষ প্রান্তের বাড়িতে থাকত দুজন বুড়ো ও বুড়ি। গ্রামের যেকোনো বিয়েতে তারাই হলুদ ও পাতা বাছাই করে দিত।

ঘটক তাদের কাছে গিয়ে খুশিমনে বলল, যাও, একটু হলুদ বেটে এবং পাতা বেছে পরগাছার সরু কাঠি দিয়ে শালপাতার চার কোণের থালা তৈরি করো। সেই থালায় দিয়ে দাও বাটা হলুদ ও তেলটুকু। বুড়ো-বুড়ি তা–ই করল।

ঘটক এবার নতুন বস্তা, সুই, শনের দড়ি ও তেল-হলুদ নিয়ে ফিরে গেল বাঘিনীর কাছে।

বাঘিনীকে সে বলল, মহারানি, তোমার জন্য পাত্রের সন্ধান পেয়েছি।

শুনে বাঘিনী তো মহাখুশি।

বিয়ের আনন্দে বাঘিনী ঘটকের কথামতো বস্তার ভেতর ঢুকে পড়ল। ঘটক তখন থালাটি বাঘিনীর হাতে দিয়ে ভালো করে ধরে থাকতে বলল। সরল বিশ্বাসে বাঘিনীও তা–ই করল। ঘটক দড়ি দিয়ে ওই বস্তাটি ভালো করে সেলাই করে দিল।

ঘটক বলল, যদি আমাকে বিশ্বাস করো এবং বিয়ে করতে চাও তবে তুমি এই বস্তার ভেতর প্রবেশ করো।

বিয়ের আনন্দে বাঘিনী ঘটকের কথামতো বস্তার ভেতর ঢুকে পড়ল। ঘটক তখন সেই তেল-হলুদের থালাটি বাঘিনীর হাতে দিয়ে ভালো করে ধরে থাকতে বলল। সরল বিশ্বাসে বাঘিনীও তা–ই করল। ঘটক এবার সেই শনের দড়ি দিয়ে ওই বস্তাটি ভালো করে সেলাই করে দিল।

অতঃপর ঘটক বাঘিনীকে বলল, মহারানি, নড়াচড়া কোরো না। তোমাকে এই নদীর জলে নামিয়ে দিচ্ছি। এই জলের নিচেই তোমার স্বামী তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে যখন তোমাকে নদীর জল থেকে তুলে নেবে, তুমি তখন হাতে থাকা তেল-হলুদ তার মুখে মাখিয়ে দিয়ো। এ কথা বলেই ঘটক বস্তাটি নদীর জলে ভাসিয়ে দিল।

সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। নদীতেও বান দেখা দিয়েছে। অন্য একটি গ্রামে ছিল একটি বাঘ। তার স্ত্রীকেও মানুষেরা মেরে ফেলেছে ১২ বছর আগে। সেই বাঘটি প্রতিদিন বান দেখতে নদীর ধারে এসে বসে থাকত। মাঝেমধ্যে বানের জলে গরু, ছাগল, মহিষ ভেসে এলেই নদী থেকে সে তা তুলে এনে খেত। সেদিনও সে নদীর ধারে বসে ছিল। একটি বস্তা ভেসে আসতে দেখেই সে জলে নেমে সেটাকে ওপরে তুলে আনল। দাঁত দিয়ে বস্তাটি ছিঁড়তে যাবে, অমনি বস্তার ভেতর থেকে বাঘিনীর গর্জন।

বাঘ তাড়াতাড়ি বস্তাটি ছিঁড়ে ফেলল। ঠিক তখনই বাঘিনী আস্তে আস্তে বস্তা থেকে বেরিয়ে এল। সে হাতের তেল-হলুদ বাটা ভালো করে মাখিয়ে দিল বাঘটির মুখে এবং তাকে চুমু খেতে থাকল। অতঃপর তাদের বিয়ে হয়ে গেল। সুখে-শান্তিতে কাটতে থাকল বাঘ-বাঘিনীর জীবন।

সাঁওতালরা মনে করে, সেই থেকে বাঘেরা ঘটকদের ওপর খুব খুশি। ফলে তারা ঘটককে খায় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ