বিপ্লবী নয়, বর্তমান সরকার জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত
Published: 2nd, December 2025 GMT
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রেভল্যুশনারি গভর্নমেন্ট (বিপ্লবী সরকার) নয়, জাতীয় ঐকমত্যের ফল। বর্তমান সরকার জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত সরকার। আর এই সরকারের বৈধতার ভিত্তি হলো প্রয়োজনীয়তা, জনগণের ইচ্ছা, জনগণের অভিপ্রায় ও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানিতে জ্যেষ্ঠ তিন আইনজীবী এসব কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ শুনানি গ্রহণ করেন। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল দিন রাখা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের’ বিষয়ে বলা আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত বছরের ডিসেম্বরে রিট করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৩ জানুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ।
লিভ টু আপিলের (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর গত ২ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর ৬ নভেম্বর শুনানি নিয়ে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়। ১২ নভেম্বর বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে, সেদিন আদালত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়। এর আগে লিভ টু আপিলকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানি করেন।
এই মামলায় ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন লেখক ফিরোজ আহমেদ, যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন। আজ আদালতে তাঁর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড.
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ছাড়া অন্য আরও অনেকভাবে ‘জাস্টিফায়েড’ বলে উল্লেখ করেছেন ফিরোজ আহমেদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সাংবিধানিকতা ১০৬ অনুচ্ছেদের যে মতামত তার ভিত্তিতে না। সাংবিধানিকতায় প্রয়োজনীয়তার একটা তত্ত্ব আছে, এটিও সাংবিধানিক আইনের অংশ। যদি গভীর সাংবিধানিক সংকট বা শূন্যতা তৈরি হয়, তখন তা পূরণ করতে হবে। গত বছরের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত সরকারবিহীন ছিল। কাজেই একটা দেশ সরকারবিহীন অবস্থায় চলতে পারে না। কাজেই একটা সরকার দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন ছিল। এই সরকারকে জনগণই দায়িত্ব দিয়েছে। কারণ জনগণ বলেছেন, তাঁরা চান। যাঁরা জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁরা সবাই এসে বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে একটা সরকার চাই। এর বৈধতার ভিত্তি হলো প্রয়োজনীয়তা, জনগণের চাহিদা ও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ। জনগণের আকাঙ্ক্ষাই এর ভিত্তি।
প্রবিশনাল সংবিধান প্রণয়নসহ আবেদনে (আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ) যে প্রার্থনা করা হয়েছে, সবই ক্রটিপূর্ণ বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। তিনি বলেন, আদালতের এ ধরনের এখতিয়ার নেই। আদালত সংসদকে সাধারণ আইন প্রণয়ণের নির্দেশও দিতে পারেন না। এখানে প্রবিশনাল সংবিধান প্রণয়ন চাওয়া হলো। এই বিষয়গুলো জনগণের বিষয়। জনগণ ঠিক করবে প্রবিশনাল সংবিধান চান, নাকি নতুন সংবিধান চান। নাকি বর্তমান সংবিধানের অধীনেই থাকতে চান। এগুলো জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। আবেদনে যে প্রার্থনা আদালতের কাছে করা হয়েছে, যেসব যুক্তি বা কারণের ভিত্তিতে প্রার্থনা করা হয়েছে সবই ক্রটিপূর্ণ। হাইকোর্ট রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন, যা সঠিক। লিভ টু আপিল গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই, কেননা এখানে আইনগত কোনো প্রশ্ন নেই, যেটি আপিল বিভাগের দেখার প্রয়োজন।
‘বিপ্লবী সরকার নয়, জাতীয় ঐক্যমত্যের ফল’বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রেভল্যুশনারি গভর্নমেন্ট (বিপ্লবী সরকার) নয়, জাতীয় ঐকমত্যের ফল বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সামনে সেসব দল ও অংশীজনের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়ে যে সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে—সেটি রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের জাতীয় ঐকমত্যের ফল। ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির জাতীয় ঐক্যের ফল হিসেবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টারা শপথও নিয়েছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বঙ্গভবন থেকে ৭ আগস্ট ইস্যু করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কুদ্দুস বলেন, ৫ আগস্ট বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ক্রিয়াশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সেদিন সিদ্ধান্ত হয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা এককাট্টা ছিল, তাদের সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হয়। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একজন ব্যক্তি। যেহেতু রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিকভাবে নিয়োজিত ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটি সংবিধানসম্মত। গত বছরের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ হয়। একই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ হয়, একই দিন প্রধান উপদেষ্টার শপথ হয়। সংবিধানের ধারাবাহিকতায় পরদিন ৯ আগস্ট প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন সংবিধান অনুযায়ী। অর্থাৎ ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণ–আন্দোলনের মাধ্যমে একটা ফ্যাসিবাদের পতন হলেও সংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও সংবিধানিক বিধান তখন থেকেই প্রযোজ্য ছিল। পরবর্তী যেসব কার্যক্রম হয়েছে, সবগুলোই এই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও সংবিধানের নিয়মের মধ্যেই হয়েছে। হাইকোর্ট সঠিকভাবে রিটটি খারিজ করেছেন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।
‘বর্তমান সরকার জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত’শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত সরকার।…জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই সরকার গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের ৫ আগস্ট যে অভ্যুত্থান হয়েছে, এরপর ৬ ও ৭ তারিখ কোনো সরকার ছিল না। গত বছরের ৮ আগস্ট যে সরকার গঠিত হয়েছে—এটি জনগণের ক্ষমতা চর্চা করে এই সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারের তিনটি ম্যান্ডেট। একটি বিচার, একটি সংস্কার ও আরেকটি হচ্ছে নির্বাচন এবং এরই আলোকে সরকার পরিচালিত হচ্ছে।
গণ–অভ্যুত্থানে গঠিত সরকার পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে উল্লেখ করে ফিলিপাইন, গ্রানাডা ও লেসোথো—এই তিনটি দেশের এ–সংক্রান্ত উদাহরণ তুলে ধরেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, একই ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল ফিলিপাইন, গ্রানাডা ও লেসোথোর সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করেছেন—এ ধরনের অভ্যুত্থানের ফলে যে সরকার গঠিত হয়, এটি মূলত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে গঠিত সরকার হয়। সেই সরকারের বৈধতা আদালতের মতামতের ওপর নির্ভর করে না।
১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে মতামত নেওয়া হয়েছে, এটির প্রয়োজন ছিল না বলে মনে করেন শিশির মনির। তিনি বলেন, ১০৬ অনুচ্ছেদের মতামতের ওপর এই সরকারের বৈধতা নির্ভরশীল নয়। এই সরকারের বৈধতা নির্ভরশীল হলো দেশের জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। আর এটাই একটা সরকারের সবচেয়ে বড় লেজিটিমেসি (বৈধতা)। এই সরকার দাঁড়িয়ে আছে জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশের ওপরে। সারা দুনিয়ার কোথাও গণ–অভ্যুত্থান হওয়ার পরে সরকার গঠনের জন্য আদালতের কাছে আসা হয় না। জনগণ নিজেরাই সরকার গঠন করে। এখানে তাই হয়েছে। সবাই মিলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়েছে। এখানে আদালতের মতামতের পক্ষে–বিপক্ষে কোনো প্রশ্ন জড়িত নেই। কেননা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি যে নিয়োগ হয়েছে, তাঁদের নিয়োগপত্রের কোথাও ১০৬ অনুচ্ছেদের রেফারেন্স দেখা যায়নি। বর্তমান সরকার বৈধ সরকার। বৈধতার ভিত্তি হলো জনগণের ইচ্ছা, জনগণের অভিপ্রায় ও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য ষ ঠ আইনজ ব সরক র গঠন কর এই সরক র র ধ র ব হ কত শ শ র মন র র ষ ট রপত র মত মত র ঐকমত য র গত বছর র ন আইনজ ব ম হ ম মদ খ র জ কর ন র জন য ৫ আগস ট উপদ ষ ট প রক শ য র ফল কর ছ ন অন য য় মত র প
এছাড়াও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন–কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেটসহ যাবতীয় কাজ শেষ করার আহ্বান
জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপন, সচিবালয়ের কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এই সচিবালয়।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে বলেছে, জারি করা অধ্যাদেশের ধারা ১ (২)–এ উল্লেখ রয়েছে, ‘(২) সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন সম্পন্ন ও ইহার কার্যক্রম পূর্ণরূপে চালু হওয়া সাপেক্ষে সরকার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে, ধারা ৭–এর বিধানাবলি সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কার্যকর করিবে।’ অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আইন হলেও তা বাস্তবায়ন হওয়ার আগপর্যন্ত বিচারকদের বদলি, পদায়ন, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান–সংক্রান্ত বিষয় সরকারের অধীনই রয়ে গেছে। তাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তার মেয়াদের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে পৃথক সচিবালয় স্থাপন ও এর কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে। এই অধ্যাদেশ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অন্যতম বন্দোবস্ত এবং ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ঐতিহাসিকভাবে আলোচিত হলেও তা বিভিন্ন কারণে এ দেশে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৯৯ সালে বিখ্যাত মাসদার হোসেন মামলার রায়ে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা হলেও কার্যত তা নির্বাহী বিভাগের অধীন থেকে যায়। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আপামর জনগণ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদী হয়। অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো তরুণ বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইয়ং জাজেস ফর জুডিশিয়াল রিফর্ম’ তাদের ১২ দফা দাবি ঘোষণা করে। এর ১ নম্বর দফা ছিল সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের প্রধান বিচারপতি সারা দেশের বিচারকদের সম্মুখে অভিভাষণের সময় স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যা বিচারকদের মনে অকৃত্রিম আশার সঞ্চার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর অফিশিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গত ১ বছরে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সব বিচারক এবং বিচার বিভাগ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ও সেমিনারের আয়োজন করে।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে’
বিবৃতিতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে, যা এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অ্যাসোসিয়েশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।