গুমের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। গতকাল সোমবার সাজার এই বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়।

গুমকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিজ পরিচয়ের বলে অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, সমর্থন বা সম্মতির ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা অন্য যেকোনোভাবে স্বাধীনতা হরণ করলে এবং পরে সেই ঘটনা অস্বীকার করলে বা ব্যক্তির অবস্থান, অবস্থা বা পরিণতি গোপন রাখলে—এটি ‘গুম’ হিসেবে গণ্য হবে।

এখানে ‘স্বাধীনতা হরণ’ বলতে কোনো ব্যক্তিকে তাঁর সম্মতি ছাড়া নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ রাখাকে বোঝাবে।

এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ভুক্তভোগী আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হলে দায়ী ব্যক্তি যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে আইনে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হলে, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার আগপর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রেপ্তারের তথ্য গোপন রাখা হলে, তা গুম হিসেবে বিবেচিত হবে না।

সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গুমের ফলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে, লাশ পাওয়া গেলে বা গুমের পাঁচ বছর পরও তাঁকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব না হলে—দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অন্য কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে। তবে এই ধারার অন্য কোনো উপধারায় মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেলে একই ঘটনার জন্য নতুন মামলা দায়ের করা যাবে না।

গুমের সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করলেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। গুম-সংক্রান্ত কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ইচ্ছাকৃতভাবে বিনষ্ট, গোপন, বিকৃত বা পরিবর্তন করলে আইনে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে গোপন আটককেন্দ্র নির্মাণ, স্থাপন বা ব্যবহার করলে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গুমের মতো অপরাধ সংঘটনে চেষ্টা, আদেশ, নির্দেশ, সহায়তা, প্ররোচনা বা ষড়যন্ত্র করলে মূল অপরাধের দণ্ডই প্রযোজ্য হবে।

অধস্তনদের অপরাধে ঊর্ধ্বতনও দায়ী হবে—এমন বিধানও রাখা হয়েছে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশে। এতে বলা হয়, শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডার অধস্তনদের গুম–সংক্রান্ত অপরাধে আদেশ, অনুমতি বা সম্মতি দিলে, পরিকল্পনায় যুক্ত থাকলে অথবা শৃঙ্খলা রক্ষা ও তদারকির দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে—তাঁর বিরুদ্ধেও মূল অপরাধের দণ্ড প্রযোজ্য হবে। এমনকি অধস্তনদের অপরাধ সংঘটনের তথ্য জানা সত্ত্বেও অথবা জানার যুক্তিসংগত কারণ থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নিলে তিনিও দণ্ডিত হবেন।

শৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে থাকা ঊর্ধ্বতনদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। এতে বলা হয়, শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নয়—এমন কোনো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি অধস্তনদের দ্বারা গুম বা গুম–সংক্রান্ত অপরাধ ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে—এমন তথ্য জেনেও ব্যবস্থা না নিলে বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে অথবা অপরাধসংক্রান্ত কার্যকলাপে যুক্ত থাকলে—তাঁর ক্ষেত্রেও মূল অপরাধের দণ্ড প্রযোজ্য হবে।

গুম একটি চলমান অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অধ্যাদেশে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

দর্শকঠাসা মাঠে জমজমাট ফুটবল ও টাইব্রেকার নাটকের দিন

তানভীর আহাম্মেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ