চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ওপর দিনের আলোয় হামলার ঘটনা বন্দরকে ঘিরে চোরাচালান চক্রের তৎপরতা ও তাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি সামনে এনেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ধারণা, সম্প্রতি প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি বড় অবৈধ চালান জব্দ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিশোধ নিতেই এই বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় রাজস্ব কর্মকর্তা মো.

আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. বদরুল আরেফিন ভূঁইয়াকে চাপাতি দিয়ে হামলা করা হয় এবং প্রকাশ্যে ‘গুলি কর’ বলে হুমকি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের ধারণা, এটি কোনোভাবেই সাধারণ কোনো অপরাধ নয়।

সম্প্রতি প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের আমদানি নিষিদ্ধ পপিবীজ ও ঘন চিনি জব্দ করা হয়। এর আগে গত মে মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ সিগারেটের একটি চালান জব্দ করা হয়েছিল। আবার মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিপুল পরিমাণ প্রসাধনীও জব্দ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে ও অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এ চোরাচালান কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছিল। এ দুটি বড় চালান জব্দ করে চক্রটিকে ভেঙে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে এবং পুনরায় সক্রিয় হতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা ঘটানো হয়েছে বলে প্রবল ধারণা প্রকাশ পেয়েছে।

আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকির চেষ্টায় জড়িত চক্রগুলোর কোটি কোটি টাকার স্বার্থ জড়িত থাকে। যখন এই অর্থলাভের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। হামলার শিকার রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খানকে আগেও মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, এমনকি প্রসাধনী চালান ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপও দেওয়া হয়েছিল। এ হামলা ও হুমকি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে রাজস্ব ফাঁকি ও অবৈধ পণ্য আমদানির মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটগুলো কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এ ধরনের হামলা কেবল দুজন কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত নয়, এটি দেশের রাজস্বব্যবস্থার ওপর হুমকি। যে কর্মকর্তারা চোরাচালান বন্ধে ভূমিকা রাখছেন, তাঁরাই যদি কর্মক্ষেত্রে হামলার শিকার হন, তাতে তাঁদের মনোবল অক্ষুণ্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা হোক। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। আর সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা যত বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাঁদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বন্দরে চোরাচালান চক্রকে পুনরায় সক্রিয় হতে দেওয়া যাবে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আজ গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস

আজ ৭ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিন পাক হানাদার মুক্ত হয় গোপালগঞ্জ। বিজয় উল্লাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ। উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। 

গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ২৭ মার্চ থেকে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল এই শহর। মুসলিম লীগ নেতাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ৩০ এপ্রিল শহরে প্রবেশ করে।

আরো পড়ুন:

আজ শত্রুমুক্ত ফেনীতে প্রথম উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা

আজ খোকসা মুক্ত দিবস

পাকিস্তানি বাহিনী ১০/১২টি দলে বিভক্ত হয়ে শহরের হিন্দু অধ্যুষিত স্বর্ণপট্টি, সাহাপাড়া, চৌরঙ্গী, সিকদারপাড়া এবং বাজার রোডে লুটপাট করে। আগুন দিয়ে প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে হত্যা করে অসংখ্য মানুষ। শুরু করে ধর্ষণ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদাররা উপজেলা পরিষদের মিনি ক্যান্টনমেন্টে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষদের ধরে নিয়ে হত্যা করে গণকবর দেয়।

৬ ডিসেম্বর সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন। তারা পকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ করতে শুরু করেন। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ বলয় রচিত ও মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে মিত্রদেশ ভারত প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ায় এখানকার পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। মধ্যরাতে মুক্তিযোদ্ধারা আবারো আক্রমণ করবে এমন খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা ৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে গোপালগঞ্জ সদর থানা উপজেলা পরিষদ (বর্তমানে) সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিযে যায়।

মেজর সেলিমের অধীনে পাক হানাদার বাহিনীর একটি দল ঢাকায় যায়। অন্য একটি দল চলে যায় ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস ক্যাম্পে। ৭ ডিসেম্বর ভোরে গোপালগঞ্জে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এর মধ্যমে মুক্ত হয় গোপালগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকা।

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ