যেন আকাশজোড়া নক্ষত্র পায়ের তলায় মেখে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। তার স্পর্শে ফুটবল যেন আবার নতুন করে আবিষ্কার করল নিজেকে। আর সেই নৈশ্বর্য ছুঁয়ে গেল ইন্টার মায়ামির ইতিহাসের উজ্জ্বলতম পাতাটি।

দু’দুটি গোলের আক্রমণ সাজানোয় কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফুটবলের মহাকবি। তারই সৃষ্ট নৈপুণ্যের রেশ ধরে বাংলাদেশ সময় রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ জিতে নিল মায়ামি। যেন স্বপ্নের চূড়া স্পর্শ করে ফেরা।

চেস স্টেডিয়ামের গ্যালারি সেই সকালেই ছিল জোয়ারে ভাসা সাগরের মতো- উত্তেজনায়, বিশ্বাসে, আর অপেক্ষায়। শুরু থেকেই মায়ামি খেলছিল আত্মবিশ্বাসী এক সুরে। রদ্রিগো ডি পলের ওভার দ্য টপ ডেলিভারি ধরে তাদেও আলেন্দের তীক্ষ্ণ ক্রস প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার এডিয়ের অকাম্পোর গায়ে লেগে জালে জড়ালে ম্যাচের শুরুতেই আলো ছড়ায় মায়ামি।

তবে পিছিয়ে পড়েও ভ্যাঙ্কুভার থেমে থাকেনি। বিরতির আগে গোলরক্ষক রকো রিওস নোভোর দুইটি বিদ্যুত্গতি সেভ না থাকলে ম্যাচের গল্প ভিন্নভাবে লেখা যেত। দ্বিতীয়ার্ধে বাড়তে থাকে উত্তাপ, বাড়তে থাকে রোমাঞ্চের ঢেউ। মেসির মাথা ছুঁয়ে যাওয়া বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শ্বাস আটকে গিয়েছিল গ্যালারি জুড়ে। একই সময়ে আলি আহমেদের শট পোস্টে লেগে গোল হলে ম্যাচে ফিরে আসে কানাডিয়ান ক্লাবটি (১-১)।

এরপর সাব্বির শট পোস্টে লেগে বাইরে গেলে মায়ামি যেন ঝড় থামার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক জাহাজ- আবার শক্ত হলো, আবার স্থির হলো। আর ঠিক এখানেই জন্ম নিলো আরেকটি মায়াবী মুহূর্ত, মেসির নতুন স্ক্রিপ্ট।

ম্যাজিশিয়ানের স্পর্শে গড়া এক লেজার-পাস ডি পলকে বানিয়ে দিল গোলের সামনে নির্ভুল এক শিল্পী। ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে আবার লিড ফিরে পায় মায়ামি (২-১)। আর যোগ করা সময়ে (৯৬ মি.

) যেন শেষ দৃশ্যের পর্দা নামার আগমুহূর্তে মেসি আরও একবার তৈরি করলেন বিস্ময়। তার তৈরি আক্রমণ থেকে আলেন্দের গোল নিশ্চিত করল মায়ামির প্রথম এমএলএস কাপ জয়।

গৌরবের আনন্দকে ছুঁয়ে গেল আবেগের স্রোত। বিদায় জানালেন স্প্যানিশ দুই কিংবদন্তি সার্জিও বুসকেটস এবং জর্দি আলবা। তাদের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে তুলতে যেন মেসি খেললেন হৃদয়ের সব আলো উজাড় করে।

এই জয়ের সঙ্গে মেসির ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরও এক সোনালি পালক। এখন ২৬টি বড় ফাইনালের মধ্যে ১৮টিতেই শিরোপা তার হাতে। যেন মহাকালের কাছে লেখা আরেকটি অমোঘ সত্য। পুরো মৌসুম জুড়ে তিনি ছিলেন আগুনের মতো ধারাবাহিক; এমএলএসে সর্বোচ্চ ২৩টি অ্যাসিস্ট দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেকে সর্বোচ্চ নির্মাতা হিসেবে। শেষ ছয়টি হোম ম্যাচে তার গোল–অবদান ১৫টি। যার মধ্যে ৬টি গোল ও ৯টি অ্যাসিস্ট।

ইন্টার মায়ামির ইতিহাস গড়ার রাতে আবারও প্রমাণ হলো- যখন আলো প্রয়োজন হয়, মেসি তখনই ফুটবলের আকাশে সূর্যের মতো ঝলসে ওঠেন।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠক করল লেবানন ও ইসরায়েল

লেবানন ও ইসরায়েলের বেসামরিক প্রতিনিধিদল নাকুরায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটির এক বৈঠকে যোগ দিয়েছে। চার দশকের বেশি সময় পর ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে এটিই প্রথম সরাসরি আলোচনা।

গতকাল বুধবার লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম বলেন, নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আরও বিস্তৃত আলোচনায় যেতে প্রস্তুত আছে বৈরুত। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটি কোনো শান্তি আলোচনা নয়। তাঁর মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি শান্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নাওয়াফের বক্তব্য অনুসারে লেবাননের দিক থেকে এ আলোচনার লক্ষ্য হলো শত্রুতার অবসান, লেবাননের জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা ও দেশটির ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লেবানন ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। সেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ১৯৬৭ সালে দখল করা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা আছে। ইসরায়েলের সঙ্গে আলাদা কোনো শান্তিচুক্তি করার ইচ্ছা লেবাননের নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর দেশ ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। সেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ১৯৬৭ সালে দখল করা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরিভাবে প্রত্যাহারের কথা বলা আছে। ইসরায়েলের সঙ্গে আলাদা কোনো শান্তিচুক্তি করার ইচ্ছা লেবাননের নেই।

নাওয়াফ মনে করেন, বেসামরিক দূতদের আলোচনায় অংশগ্রহণের বিষয়টি উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হতে পারে।

কমিটি প্রায় তিন ঘণ্টা লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যকার ‘ব্লু লাইন’ সীমান্তরেখা–সংলগ্ন এলাকায় বৈঠকটি করেছে।

বৈঠক শেষে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে আলোচনায় বেসামরিক প্রতিনিধিদের সংযুক্ত হওয়াকে ‘টেকসই বেসামরিক ও সামরিক সংলাপ’ প্রতিষ্ঠার পথে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানানো হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে অস্থির থাকা এ সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা করছে কমিটি।

আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় নিহত তাবতাবাই কে, কীভাবে হিজবুল্লাহতে যোগ দিলেন২৪ নভেম্বর ২০২৫

২০২৪ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি তদারকির পাশাপাশি কমিটির কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত মাসে লেবাননের রাজধানীতে ইসরায়েলি বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে যখন ক্রমাগত উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

লেবাননে নিয়মিত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটি সাধারণত দাবি করে থাকে যে হিজবুল্লাহ সদস্য ও তাঁদের স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই তারা হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধবিরতিতে পুরোপুরিভাবে সেনা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ থাকলেও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা এখনো অবস্থান করছেন।

ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশ বেদরোসিয়ান বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ বৈঠককে ঐতিহাসিক অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছেন।

বেদরোসিয়ান দাবি করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর চলমান প্রচেষ্টার কারণেই ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে এ সরাসরি বৈঠক সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেমনটা বলছেন যে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের জন্য বিশেষ সুযোগ এখন তৈরি হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাইনালেও মেসি-ম্যাজিক, এমএলএস কাপের চ্যাম্পিয়ন মায়ামি
  • আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে প্রথমবার হলো ম্যারাথন
  • সিলেট, ময়মনসিংহ নাকি অন্য কোনো দল—কারা হবে চ্যাম্পিয়ন
  • বিশ্বকাপের ড্র চূড়ান্ত, কে কোন গ্রুপে
  • তারকা ভিকি নয়, এখন শুধু ‘বাবা’—জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা
  • প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান নিয়োগ দিলো পাকিস্তান
  • বিজয়ের সঙ্গে বিয়ে, প্রথমবার সরাসরি জবাব দিলেন রাশমিকা
  • ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠক করল লেবানন ও ইসরায়েল
  • স্বপ্ন এভাবেও পূরণ হয় জানতেন না সাকলাইন