ইন্টার মায়ামি ৩-১ ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপস

কনফেত্তি উড়ছে আকাশজুড়ে। এমএলএস কাপের ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরা হলো শূন্যে। যার হাতে ট্রফি, এখন তাঁকে ফুটবল বিশ্বের অনেকেই ‘সর্বকালের সেরা’ মনে করেন।  বর্ণাঢ্য পেশাদার ক্যারিয়ারে এটা তাঁর ৪৭তম শিরোপা। ইতিহাসের যেকোনো ফুটবলারের চেয়ে বেশি।

দৃশ্যটা অবিশ্বাস্য লাগতে পারে অনেকের কাছে। এই ইন্টার মায়ামি দলটা নিয়ে তো আর কম কথা হয়নি। কোচ নিয়ে প্রশ্ন, মেসি ছাড়া দলের বাকিদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন—সন্দেহ ছিল অনেক। ছোট-বড় নানা প্রশ্নে জর্জরিত ছিল পুরো দল।

সব প্রশ্নের উত্তর মিলল আজ, ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলে চেজ স্টেডিয়ামে। ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে এমএলএস কাপ চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মায়ামি! ঘরের মাঠ চেজ স্টেডিয়ামে এটাই ছিল মায়ামির শেষ ম্যাচ। আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই তারা পা রাখবে নতুন ঠিকানা ‘মায়ামি ফ্রিডম পার্ক’-এ।

২০২৫ সালটা মায়ামির জন্য মোটেও সহজ ছিল না। এক বছরে ৫৮টি ম্যাচ খেলেছে তারা—এমএলএসের ইতিহাসে যা এক পঞ্জিকাবর্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড। পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন শিরোপার জন্য লড়তে গিয়ে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে।

পেশাদার ক্যারিয়ারের ৪৭তম শিরোপা জিতলেন মেসি, ইতিহাসের যেকোনো ফুটবলারের চেয়ে বেশি।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মেসির জাদুকরী ছোঁয়ায় প্রথমবার মায়ামি চ্যাম্পিয়ন

যেন আকাশজোড়া নক্ষত্র পায়ের তলায় মেখে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। তার স্পর্শে ফুটবল যেন আবার নতুন করে আবিষ্কার করল নিজেকে। আর সেই নৈশ্বর্য ছুঁয়ে গেল ইন্টার মায়ামির ইতিহাসের উজ্জ্বলতম পাতাটি।

দু’দুটি গোলের আক্রমণ সাজানোয় কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফুটবলের মহাকবি। তারই সৃষ্ট নৈপুণ্যের রেশ ধরে বাংলাদেশ সময় রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ জিতে নিল মায়ামি। যেন স্বপ্নের চূড়া স্পর্শ করে ফেরা।

চেস স্টেডিয়ামের গ্যালারি সেই সকালেই ছিল জোয়ারে ভাসা সাগরের মতো- উত্তেজনায়, বিশ্বাসে, আর অপেক্ষায়। শুরু থেকেই মায়ামি খেলছিল আত্মবিশ্বাসী এক সুরে। রদ্রিগো ডি পলের ওভার দ্য টপ ডেলিভারি ধরে তাদেও আলেন্দের তীক্ষ্ণ ক্রস প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার এডিয়ের অকাম্পোর গায়ে লেগে জালে জড়ালে ম্যাচের শুরুতেই আলো ছড়ায় মায়ামি।

তবে পিছিয়ে পড়েও ভ্যাঙ্কুভার থেমে থাকেনি। বিরতির আগে গোলরক্ষক রকো রিওস নোভোর দুইটি বিদ্যুত্গতি সেভ না থাকলে ম্যাচের গল্প ভিন্নভাবে লেখা যেত। দ্বিতীয়ার্ধে বাড়তে থাকে উত্তাপ, বাড়তে থাকে রোমাঞ্চের ঢেউ। মেসির মাথা ছুঁয়ে যাওয়া বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শ্বাস আটকে গিয়েছিল গ্যালারি জুড়ে। একই সময়ে আলি আহমেদের শট পোস্টে লেগে গোল হলে ম্যাচে ফিরে আসে কানাডিয়ান ক্লাবটি (১-১)।

এরপর সাব্বির শট পোস্টে লেগে বাইরে গেলে মায়ামি যেন ঝড় থামার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক জাহাজ- আবার শক্ত হলো, আবার স্থির হলো। আর ঠিক এখানেই জন্ম নিলো আরেকটি মায়াবী মুহূর্ত, মেসির নতুন স্ক্রিপ্ট।

ম্যাজিশিয়ানের স্পর্শে গড়া এক লেজার-পাস ডি পলকে বানিয়ে দিল গোলের সামনে নির্ভুল এক শিল্পী। ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে আবার লিড ফিরে পায় মায়ামি (২-১)। আর যোগ করা সময়ে (৯৬ মি.) যেন শেষ দৃশ্যের পর্দা নামার আগমুহূর্তে মেসি আরও একবার তৈরি করলেন বিস্ময়। তার তৈরি আক্রমণ থেকে আলেন্দের গোল নিশ্চিত করল মায়ামির প্রথম এমএলএস কাপ জয়।

গৌরবের আনন্দকে ছুঁয়ে গেল আবেগের স্রোত। বিদায় জানালেন স্প্যানিশ দুই কিংবদন্তি সার্জিও বুসকেটস এবং জর্দি আলবা। তাদের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে তুলতে যেন মেসি খেললেন হৃদয়ের সব আলো উজাড় করে।

এই জয়ের সঙ্গে মেসির ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরও এক সোনালি পালক। এখন ২৬টি বড় ফাইনালের মধ্যে ১৮টিতেই শিরোপা তার হাতে। যেন মহাকালের কাছে লেখা আরেকটি অমোঘ সত্য। পুরো মৌসুম জুড়ে তিনি ছিলেন আগুনের মতো ধারাবাহিক; এমএলএসে সর্বোচ্চ ২৩টি অ্যাসিস্ট দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেকে সর্বোচ্চ নির্মাতা হিসেবে। শেষ ছয়টি হোম ম্যাচে তার গোল–অবদান ১৫টি। যার মধ্যে ৬টি গোল ও ৯টি অ্যাসিস্ট।

ইন্টার মায়ামির ইতিহাস গড়ার রাতে আবারও প্রমাণ হলো- যখন আলো প্রয়োজন হয়, মেসি তখনই ফুটবলের আকাশে সূর্যের মতো ঝলসে ওঠেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্যারিয়ারের ৪৭তম শিরোপা জিতে মেসি, ‘এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম’
  • মেসির জাদুকরী ছোঁয়ায় প্রথমবার মায়ামি চ্যাম্পিয়ন