ক্ষমতা না টাকা বানানোর জাদুর কাঠি?
Published: 7th, December 2025 GMT
এটি এখন প্রায় নিশ্চিত যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে একটি গণভোট। নাগরিকদের একটি বিরাট অংশের জন্য নিঃসন্দেহে এসবই সুসংবাদ। তবে অনেকের মনেই শঙ্কা রয়েছে, কাদের নিয়ে আগামী সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। আবার কি আগামী সংসদ বা সংস্কার পরিষদে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তির সমারোহ ঘটবে, যাঁরা ক্ষমতাকে অর্থবিত্তের মালিক হওয়া ‘জাদুর কাঠি’ হিসেবে ব্যবহার করবেন।
আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে একটি পুরোনো অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা যাক। অনেক পাঠকের মনে থাকার কথা যে ২০০৮ সালের জুন মাসে চারটি পুরোনো সিটি করপোরেশনের—বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট—নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এসব নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হলফনামার মাধ্যমে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়ের উৎস, অতীত ও বর্তমান মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের এবং প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়দেনার তথ্য হলফনামার মাধ্যমে তাঁদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়ার বিধান কার্যকর করা হয়।
‘সুজন—সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে প্রার্থীদের এসব তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়। এসব তথ্য প্রদানের এবং প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো ভোটারদের তথ্য দিয়ে ক্ষমতায়িত করা, যাতে তাঁরা জেনে-শুনে-বুঝে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
আরও পড়ুনহলফনামা কি আমলনামায় বদলে যেতে পারে?১৭ ডিসেম্বর ২০২৩এসব নির্বাচনের সব কটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন—বরিশালে শওকত হোসেন হিরণ, খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক, রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সিলেটে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান জয়লাভ করেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা এগুলোতে পরাজিত হন। বরিশালে পরাজিত হন আহসান হাবীব কামাল, খুলনায় মো.
পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের ১৫ জুন তারিখে এসব সিটি করপোরেশনে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ২০০৮ সালে মনোনীত সব প্রার্থীই ২০১৩ সালেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যদিও সিলেটে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত সব প্রার্থী জয়ী হন। এবারও প্রার্থীদের হলফনামার মাধ্যমে সাত ধরনের তথ্য জমা দিতে হয়।
প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, দুই নির্বাচনে জয়ী-পরাজিত আটজন মেয়র পদপ্রার্থীর সবাই ছিলেন ব্যবসায়ী। তবে তালুকদার আবদুল খালেক নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যবসায়ী হয়েছেন—তিনি ২০০৮ সালে প্রদত্ত হলফনামায় পেশা হিসেবে ‘বর্তমানে কোনো ব্যবসা নেই’ বলে উল্লেখ করেছেন।
হলফনামার তথ্য থেকে আরও লক্ষণীয় যে চারজন বিদায়ী মেয়রের প্রত্যেকেরই নিজের এবং নির্ভরশীলদের আয় তাঁদের ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খুলনার তালুকদার আবদুল খালেকের ও তাঁর নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ৩,৬২,০০০ টাকা থেকে ৫,৩২,৬৬,৯৭৭ টাকা বা ১৪,৬১৫ শতাংশ। বরিশালের শওকত হোসেন হিরণ এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ৫,৮০,২৫০ টাকা থেকে ৩,৪৯,১১,০৩০ টাকা বা ৫,৯১৬ শতাংশ। রাজশাহীর এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ২,৪৪,০০০ টাকা থেকে ৫৭,৭৫,৭৭২ টাকা বা ২,৩০৮ শতাংশ। সিলেটের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ২,১০,০০০ টাকা থেকে ১৫,৪৯,৯৮৮ টাকা বা ৬৩৮ শতাংশ—‘সম্মানী’ হিসেবে প্রাপ্ত নিজের আয় হলফনামায় দেখানো হয়নি বলে এটি অপেক্ষাকৃত কম। সর্বসাকল্যে চারজন মেয়র ও তাঁদের নির্ভরশীলদের গড় আয় বেড়েছে ৩,৪৯,০৬৩ টাকা থেকে ২,৩৯,০০,৯৮১ টাকা বা ৬,৭৪৭ শতাংশ।
জরুরি হয়ে পড়েছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার, বিশেষত তাদের গণতন্ত্রায়ণ ও প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং মনোনয়ন–বাণিজ্য তথা টাকার অযাচিত প্রভাবের অবসান। আরও জরুরি হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের প্রদত্ত হলফনামার ছকে পরিবর্তন এবং এতে প্রদত্ত তথ্যের পরিপূর্ণতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কঠোরভাবে যাচাই করার। হলফনামার ছকে ইতিমধ্যে পরিবর্তন এসেছে।অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত তিন প্রধান প্রার্থীর মধ্যে দুজন এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে এবং একজনের কমেছে। বরিশালের আহসান হাবীব কামালের আয় বেড়েছে ২০০৮ সালের ৭,০৮,০০০ টাকা থেকে ২০১৩ সালে ৯,৩০,০০০ টাকা বা ৩১ শতাংশ। খুলনায় মো. মনিরুজ্জামানের আয় কমেছে ৮,৩৬,০০০ টাকা থেকে ২,০০,০০০ টাকা বা ৭৬ শতাংশ। রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেনের আয় বেড়েছে ১,৬৮,০০০ টাকা থেকে ১,৯২,০০০ টাকা বা ১৪ শতাংশ। এই তিন মেয়র প্রার্থীর পাঁচ বছরে আয় কমেছে ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের সঙ্গে আয় বৃদ্ধির একটি যোগসূত্র রয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচিত মেয়র ও পরাজিত মেয়র পদপ্রার্থীদের সম্পদের দিকে তাকালেও একই প্রবণতা দেখা যায়। বরিশালের মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরে বেড়েছে ২০,৮৫,৩২৬ টাকা থেকে ১০,৯৪,৩৯,১৫০ টাকা বা ৫,১৪৮ শতাংশ। খুলনার তালুকদার আবদুল খালেকের বেড়েছে ১,৮৫,৯৭,৫৫০ টাকা থেকে ১০,০৮,৪১,২৯২ টাকা বা ৪৪২ শতাংশ। রাজশাহীর খায়রুজ্জামান লিটনের বেড়েছে ৯৬,৭৫,০০০ টাকা থেকে ১,৯৪,৪৭,১৯৮ টাকা বা ১৩৩ শতাংশ। সিলেটের কামরানের বেড়েছে ২,১৪,৭৮,২৯০ টাকা থেকে ৫,০০,৬২,৬২৪ টাকা বা ১৩৩ শতাংশ। চারজন বিদায়ী মেয়র ও তাঁদের নির্ভরশীলদের মোট সম্পদ বেড়েছে ১,২৯,৫৯,০৪১ টাকা থেকে ৬,৯৯,৪৭,৫৬৬ টাকা বা ৪৪০ শতাংশ। উল্লেখ্য, চারজন বিদায়ী মেয়রের দায়দেনা ছিল কম, তাই তাঁদের নিট সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণও ছিল বেশি।
হলফনামার তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত তিন প্রধান প্রার্থীর মধ্যে দুজন ও তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ বেড়েছে এবং একজনের কমেছে। বরিশালের আহসান হাবীব কামালের কমেছে ২০০৮ সালের ১,০৪,১১,৬৫০ টাকা থেকে ২০১৩ সালে ২৭,৭৩,০০০ টাকা বা ৭৩ শতাংশ। খুলনার মনিরুজ্জামানের বেড়েছে ১৬,১৩,১০০ টাকা থেকে ৩০,৫৫,৫৩৭ টাকা বা ৮৯ শতাংশ। রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেনের বেড়েছে ১,৬৮,০০০ টাকা থেকে ১৯২,০০০ টাকা বা ১৪ শতাংশ। তবে ২০০৭ সালের নির্বাচনে পরাজিত খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী—এই তিন মহানগরের মেয়র পদপ্রার্থী ও তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের পাঁচ বছরে মোট সম্পদ কমেছে ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ সম্পদশালী হওয়া না-হওয়া নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে বিদায়ী মেয়রদের সবাই পরাজিত হয়েছেন এবং ২০০৮ সালে পরাজিত এ তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আরও জয়ী হয়েছেন সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী।
উপরিউক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটি সুস্পষ্ট যে ক্ষমতার সঙ্গে আয় ও সম্পদের মালিকানার গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র রয়েছে, যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রদত্ত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন বিদ্যমান। নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়ররা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং এ ক্ষমতা তাঁদের ও তাঁদের ওপর নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে জাদুর কাঠির মতো কাজ করেছে। তবে নির্বাচনে পরাজিতদের প্রতি ভাগ্যদেবীর প্রসন্নতা তেমন দৃশ্যমান নয়। তাই সংগতভাবেই প্রশ্ন করা যায়—আমাদের রাজনীতি, যার লক্ষ্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া—লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে কি না। রাজনীতি জনসেবার পরিবর্তে ব্যক্তির অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে কি না।
প্রসঙ্গত, আরও সাম্প্রতিক সময়ের সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রদত্ত হলফনামার তথ্য থেকে ক্ষমতার সঙ্গে জাদুর কাঠির সম্পর্ক আরও সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, যা পরবর্তী লেখায় তুলে ধরা হবে। তাই আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য নতুন ধরনের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার কাঠামো সৃষ্টি করা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে জরুরি হয়ে পড়েছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার, বিশেষত তাদের গণতন্ত্রায়ণ ও প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং মনোনয়ন–বাণিজ্য তথা টাকার অযাচিত প্রভাবের অবসান। আরও জরুরি হয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের প্রদত্ত হলফনামার ছকে পরিবর্তন এবং এতে প্রদত্ত তথ্যের পরিপূর্ণতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কঠোরভাবে যাচাই করার। হলফনামার ছকে ইতিমধ্যে পরিবর্তন এসেছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্পাদক, সুজন—সুশাসনের জন্য নাগরিক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র র থ দ র প রদত ত ২০০৮ স ল র ২০১৩ স ল অন ষ ঠ ত র জন য ন বর শ ল র ০০০ ট ক হয় ছ ন পর জ ত য গ যত মন ন ত আম দ র র জন ত ব এনপ ক ষমত ব যবস চ বছর চ রজন
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বাদশ সমাবর্তন বর্জনের ডাক সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশের, অনড় অবস্থানে প্রশাসন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সমাবর্তনের অতিথি নির্বাচন ও সময় নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আবার উন্মুক্ত করার দাবি জানানো হলেও প্রশাসন কোনো সাড়া দেয়নি।
আজ শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের তাঁরা এ ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ সময় ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের রাসেল কবির ও ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ আলী উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুই দফা সময় পরিবর্তনের পর গত ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে। এতে সভাপতি হিসেবে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম ফায়েজকে রাখার কথা জানানো হয়। অতিথিদের নাম ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ও ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’নামের ফেসবুকে গ্রুপে অনেকেই সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরে সমাবর্তন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি দীর্ঘদিন বিলম্বের পর এখন জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে আয়োজন করা হচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ই-মেইলে স্মারকলিপি পাঠিয়ে অতিথি নির্বাচন ও সময় পুনর্বিবেচনা এবং রেজিস্ট্রেশন আবার উন্মুক্ত করার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের দাবির বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানায়নি।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, অতিথিদের ব্যক্তিগতভাবে অসম্মান করার কোনো উদ্দেশ্য তাঁদের নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, ঐতিহ্য ও মর্যাদার জায়গা থেকে তাঁরা অতিথি নির্বাচনে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অতিথিদের পাওয়া সম্ভব না হলে নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকে সমাবর্তনে অতিথি করার প্রস্তাবও তাঁরা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা জানতে চান, সমাবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া ফি কোন ব্যাংকে জমা ছিল, সেখান থেকে কত লভ্যাংশ পাওয়া গেছে এবং পুরো বাজেট কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে—এসব তথ্য স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করতে হবে।
ডিসেম্বরের ব্যস্ত কর্মপরিবেশ বিবেচনায় অনুষ্ঠানের সময় পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে সাবেক এই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া থেকে অনেক শিক্ষার্থী বাদ পড়েছেন। তাঁদের আবার রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন। তিনি পৃথিবীর বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপস্থিত থেকেছেন এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হয়েছেন। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁকে পাচ্ছি না—এতে আমরা হতাশ হয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, ‘আমরা এই সমাবর্তন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি প্রশাসন আমাদের উপেক্ষা করে সমাবর্তন আয়োজন করতে যায়, তবে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনের ওপর বর্তাবে। অতিথিদের সঙ্গে কোনো অসম্মানজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায়ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।’
তবে যথাযথ সময়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমাবর্তনে আচার্য বা সরকারপ্রধান উপস্থিত থাকেন—এমন নয়। এ বছরের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি শিক্ষা উপদেষ্টাকে মনোনীত করেছেন। অতিথিদের আমন্ত্রণ, ক্যাম্পাস সৌন্দর্যবর্ধন ও ভেন্যু প্রস্তুতির কাজ অনেকটাই শেষ হয়েছে। এখন এ নিয়ে পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।