মেসির শিরোপা ৪৭ না ৪৮টি, এ নিয়ে বিতর্ক কেন
Published: 7th, December 2025 GMT
ক্যারিয়ারের ৪৭তম শিরোপা জিতেছেন লিওনেল মেসি। নাকি ৪৮টি?
ইন্টার মায়ামির হয়ে মেসি আজ এমএলএস কাপ জেতার পর থেকেই এ নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্স লিখেছে, এটা মেসির ক্যারিয়ারের ৪৭তম ট্রফি। ফুটবল বিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গোল-এর হিসাবেও তা-ই। অন্যদিকে স্প্যানিশ ও ইংলিশ অনেক সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে সংখ্যাটা ৪৮। বিভ্রান্তি আসলে কোথায়?
তার আগে চলুন দেখে নেওয়া যাক মেসির ক্যারিয়ারের ৪৭টি ট্রফির হিসাব। মেসি সবচেয়ে বেশি ট্রফি জিতেছেন বার্সেলোনার হয়ে। ১০টি লা লিগা, ৮টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৭টি কোপা দেল রে, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৩টি উয়েফা সুপার কাপ ও ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ—মোট ৩৫টি। পিএসজির হয়ে জিতেছেন ২টি লিগ আ ও একটি কাপসহ মোট ৩টি ট্রফি।
আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব ২০ দলের হয়ে যুব বিশ্বকাপ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে অলিম্পিক সোনা। আর জাতীয় দলের হয়ে একটি বিশ্বকাপ, দুটি কোপা আমেরিকা ও একটি ফিনালিসিমাসহ মোট ৪টি। এরপর ইন্টার মায়ামির হয়ে লিগস কাপ, সাপোর্টারস শিল্ড ও এমএলএস কাপসহ ৩টি। তাহলে তাঁর ক্যারিয়ারের মোট শিরোপা দাঁড়াল (৩৫+৩+১+১+৪+৩) ৪৭টি।
তাহলে ৪৮ সংখ্যাটা এল কোথা থেকে? এর জন্য আসলে বেশি পেছনে যেতে হবে না। মেজর লিগ সকারের সবচেয়ে মর্যাদাবান ট্রফি এমএলএস কাপের লড়াইয়ে ওঠার জন্য আগে মেসির মায়ামিকে জিততে হয়েছে আঞ্চলিক ট্রফি ইস্টার্ন কনফারেন্স কাপ। সেই টুর্নামেন্টে জিতেও মায়ামি একটা ট্রফি পেয়েছে, তবে ওটা হচ্ছে এমএলএস কাপের মূল লড়াইয়ে জায়গা পাওয়ার একটা ধাপ। ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা তাই ইস্টার্ন কনফারেন্স কাপকে বড় ট্রফি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। আবার যেহেতু এটাও একটা ট্রফি, সেই হিসেবে অনেকেই এটাকে মেসির পেশাদার ক্যারিয়ারের ট্রফিতে যোগ করছেন, তাতে তাঁর মোট ট্রফি হয়ে যাচ্ছে ৪৮টি।
আরেকটা বিষয়ে বিভ্রান্তি পাঠকদের কাছে পরিষ্কার করা দরকার। অনেক হিসাবে মেসির স্প্যানিশ সুপার কাপ ৮টি নয়, ৭টি। ২০০৫ সালের স্প্যানিশ সুপার কাপটা এই হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয় কোথাও কোথাও। বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি, রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে সেই বছর সুপার কাপের দুই ম্যাচের কোনোটাতেই মেসি স্কোয়াডে ছিলেন না, মাঠে নামার তাই প্রশ্নও আসে না।
মেসির জেতা যত ট্রফি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এমএলএস ক প
এছাড়াও পড়ুন:
মেসির জাদুকরী ছোঁয়ায় প্রথমবার মায়ামি চ্যাম্পিয়ন
যেন আকাশজোড়া নক্ষত্র পায়ের তলায় মেখে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। তার স্পর্শে ফুটবল যেন আবার নতুন করে আবিষ্কার করল নিজেকে। আর সেই নৈশ্বর্য ছুঁয়ে গেল ইন্টার মায়ামির ইতিহাসের উজ্জ্বলতম পাতাটি।
দু’দুটি গোলের আক্রমণ সাজানোয় কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফুটবলের মহাকবি। তারই সৃষ্ট নৈপুণ্যের রেশ ধরে বাংলাদেশ সময় রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ জিতে নিল মায়ামি। যেন স্বপ্নের চূড়া স্পর্শ করে ফেরা।
চেস স্টেডিয়ামের গ্যালারি সেই সকালেই ছিল জোয়ারে ভাসা সাগরের মতো- উত্তেজনায়, বিশ্বাসে, আর অপেক্ষায়। শুরু থেকেই মায়ামি খেলছিল আত্মবিশ্বাসী এক সুরে। রদ্রিগো ডি পলের ওভার দ্য টপ ডেলিভারি ধরে তাদেও আলেন্দের তীক্ষ্ণ ক্রস প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার এডিয়ের অকাম্পোর গায়ে লেগে জালে জড়ালে ম্যাচের শুরুতেই আলো ছড়ায় মায়ামি।
তবে পিছিয়ে পড়েও ভ্যাঙ্কুভার থেমে থাকেনি। বিরতির আগে গোলরক্ষক রকো রিওস নোভোর দুইটি বিদ্যুত্গতি সেভ না থাকলে ম্যাচের গল্প ভিন্নভাবে লেখা যেত। দ্বিতীয়ার্ধে বাড়তে থাকে উত্তাপ, বাড়তে থাকে রোমাঞ্চের ঢেউ। মেসির মাথা ছুঁয়ে যাওয়া বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শ্বাস আটকে গিয়েছিল গ্যালারি জুড়ে। একই সময়ে আলি আহমেদের শট পোস্টে লেগে গোল হলে ম্যাচে ফিরে আসে কানাডিয়ান ক্লাবটি (১-১)।
এরপর সাব্বির শট পোস্টে লেগে বাইরে গেলে মায়ামি যেন ঝড় থামার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক জাহাজ- আবার শক্ত হলো, আবার স্থির হলো। আর ঠিক এখানেই জন্ম নিলো আরেকটি মায়াবী মুহূর্ত, মেসির নতুন স্ক্রিপ্ট।
ম্যাজিশিয়ানের স্পর্শে গড়া এক লেজার-পাস ডি পলকে বানিয়ে দিল গোলের সামনে নির্ভুল এক শিল্পী। ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে আবার লিড ফিরে পায় মায়ামি (২-১)। আর যোগ করা সময়ে (৯৬ মি.) যেন শেষ দৃশ্যের পর্দা নামার আগমুহূর্তে মেসি আরও একবার তৈরি করলেন বিস্ময়। তার তৈরি আক্রমণ থেকে আলেন্দের গোল নিশ্চিত করল মায়ামির প্রথম এমএলএস কাপ জয়।
গৌরবের আনন্দকে ছুঁয়ে গেল আবেগের স্রোত। বিদায় জানালেন স্প্যানিশ দুই কিংবদন্তি সার্জিও বুসকেটস এবং জর্দি আলবা। তাদের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে তুলতে যেন মেসি খেললেন হৃদয়ের সব আলো উজাড় করে।
এই জয়ের সঙ্গে মেসির ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরও এক সোনালি পালক। এখন ২৬টি বড় ফাইনালের মধ্যে ১৮টিতেই শিরোপা তার হাতে। যেন মহাকালের কাছে লেখা আরেকটি অমোঘ সত্য। পুরো মৌসুম জুড়ে তিনি ছিলেন আগুনের মতো ধারাবাহিক; এমএলএসে সর্বোচ্চ ২৩টি অ্যাসিস্ট দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেকে সর্বোচ্চ নির্মাতা হিসেবে। শেষ ছয়টি হোম ম্যাচে তার গোল–অবদান ১৫টি। যার মধ্যে ৬টি গোল ও ৯টি অ্যাসিস্ট।
ইন্টার মায়ামির ইতিহাস গড়ার রাতে আবারও প্রমাণ হলো- যখন আলো প্রয়োজন হয়, মেসি তখনই ফুটবলের আকাশে সূর্যের মতো ঝলসে ওঠেন।
ঢাকা/আমিনুল